Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয়

তিল তাল নহে

অনেক টালবাহানা ও দরকষাকষির পর জম্মু-কাশ্মীরে পিডিপি ও বিজেপির যে জোট-সরকার ক্ষমতাসীন, তাহা ওই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে উঠিয়া আসা জনাদেশেরই প্রতিফলন। শ্রীনগর উপত্যকা পিডিপিকে এবং জম্মু বিজেপিকে জয়যুক্ত করায় ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় দুই সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী দল জোট গড়িতে বাধ্য হইয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

অনেক টালবাহানা ও দরকষাকষির পর জম্মু-কাশ্মীরে পিডিপি ও বিজেপির যে জোট-সরকার ক্ষমতাসীন, তাহা ওই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে উঠিয়া আসা জনাদেশেরই প্রতিফলন। শ্রীনগর উপত্যকা পিডিপিকে এবং জম্মু বিজেপিকে জয়যুক্ত করায় ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় দুই সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী দল জোট গড়িতে বাধ্য হইয়াছে। বিশেষত কাশ্মীরের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলিতে দুই দলের অবস্থানের দুরতিক্রম্য ব্যবধান স্মরণে রাখিলে এই জোটকে একটি বিস্ময়কর, প্রায় অলৌকিক ঘটনা মনে হইতে পারে। তাই পিডিপি-র প্রধান ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদ যখন রাজ্যের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য প্রতিবেশী পাকিস্তান, বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী এবং হুরিয়ত সম্মেলনের ইতিবাচক ভূমিকার উল্লেখ করেন, তখন তাহা লইয়া সংসদের ভিতরে-বাহিরে বা গণমাধ্যমে হইচই হয়। মুফতি মহম্মদের জোটসঙ্গী বিজেপি একই বিষয়ের কৃতিত্ব ভারতীয় সেনাবাহিনী, নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যের ভোটদাতাদের দিতে চাহিয়াছে এবং তাহা লইয়া কিন্তু কোনও হইচই হয় নাই। অথচ খেয়াল করিলে দেখা যাইবে, মুফতি মহম্মদ সইদ এবং বিজেপি, উভয়েই সত্যের দুই ভিন্ন বয়ান ও ব্যাখ্যা দিতেছেন।

এ বিষয়ে কে সংশয় ব্যক্ত করিবে যে, নির্বাচনের সময় হুরিয়ত যদি তাহার বয়কটের ডাক সক্রিয় ভাবে কার্যকর করিতে উদ্যত হইত, জেহাদি গোষ্ঠীগুলি যদি উপত্যকায় তাহাদের তৎপরতা বাড়াইত কিংবা সীমান্তের ও পার হইতে গোলাবর্ষণ জারি রাখিত, তাহা হইলে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হইত না? যদি মনে রাখা যায় যে, মুফতি মহম্মদ গোটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হইলেও প্রধানত শ্রীনগর উপত্যকার ভোটেই ক্ষমতাসীন, (জম্মু বা লাদাখ তাঁহার ঝুলি ভরিয়া দেয় নাই) তবে নিজের ভোটদাতা তথা গণভিত্তিকে তিনি যে তুষ্ট করিতে চাহিবেন, ইহাতেও বোধ করি অস্বাভাবিক কিছু নাই। যে-শ্রীনগর উপত্যকা তাঁহাকে কাশ্মীরের মসনদে বসাইয়াছে, তাহার কাছে আফজল গুরুর ফাঁসির বিষয়টিও গভীর রক্তস্রাবী ক্ষত। বিশেষত ফাঁসির বিষয়টি তাঁহার পরিবারকে না জানানো এবং তাঁহার মৃতদেহ তিহাড় জেলের মাটিতেই কবরস্থ করা লইয়া কাশ্মীরিদের মনে যে ক্ষোভ রহিয়াছে, মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সে বিষয়েও তাঁহার মতামত জানাইতে দ্বিধা করেন নাই। যদি মনে রাখা যায় যে পিডিপি দলটি ঠিক কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়া কাশ্মীরের নির্বাচকমণ্ডলীর সম্মুখীন হইয়াছিল, তাহা হইলে দেখা যাইবে, সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন রদ, উপত্যকা হইতে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার, পাকিস্তানের সহিত সুসম্পর্ক স্থাপন, দুই দেশের সীমান্ত আরও সুগম করা ইত্যাদি তাহার অন্তর্ভুক্ত ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বাধ্যবাধকতার বিষয়টি অনুধাবন করা দরকার।

লক্ষণীয়, বিজেপি নেতৃত্ব তাহার নিজের অবস্থান আলাদা ভাবে ঘোষণা করিলেও পিডিপি-র অবস্থান লইয়া কোনও কাজিয়া শুরু করে নাই। বরং ‘তিলকে তাল করা’র যে প্রবণতা সম্পর্কে মুফতি মহম্মদ তাঁহার আপত্তি জানাইয়াছেন, প্রকারান্তরে সেই আপত্তিতে সায় দিয়াছে। ইহা জোট-রাজনীতির অনুশীলনে বিজেপির নৈপুণ্যের পরিচয় দেয়। সংঘ পরিবারের চাপ উপেক্ষা করিয়াও এই দল যেমন ৩৭০ অনুচ্ছেদ লইয়া নিজ অবস্থান মুলতুবি রাখিয়াছে, তেমনই কাশ্মীরি জনসাধারণের কাছে তাঁহাদের নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক বাধ্যতা শিরোধার্য করিতেও দ্বিধা করে নাই। দেশের শাসক হিসাবে বিজেপি সম্ভবত জানে, এখন সকলকে লইয়া উন্নয়নের পথে চলার সময়, বিভাজন ও খণ্ডনের সময় নয়, ঐক্য ও গঠনের সময়। প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গেও রণদুন্দুভি বাজাইবার নয়, আপস আলোচনার টেবিলে বসার সময়। ভারতীয় বিদেশ সচিব এস জয়শংকর এ জন্যই পাক বিদেশ সচিব আইজাজ আহমেদ চৌধুরীর সহিত আলোচনা করিতেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE