Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

দান নয়, অধিকার

গ ণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে মুসলিমদের ভোটাধিকার থাকা উচিত কি না, শিব সেনা বা বিজেপির কোনও কোনও সাংসদ এ ধরনের গর্হিত জিজ্ঞাসার উত্তর অগ্রিম দিয়া রাখিয়াছেন। নেতিবাচক উত্তর। শিব সেনার সাংসদ দলের মুখপত্রে লিখিয়াছেন, মুসলিমদের ভোটাধিকার কাড়িয়া লওয়া উচিত, অন্যথায় ভোট-ব্যাংক হিসাবে এই জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করার প্রবণতা ঘুচিবে না।

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

গ ণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে মুসলিমদের ভোটাধিকার থাকা উচিত কি না, শিব সেনা বা বিজেপির কোনও কোনও সাংসদ এ ধরনের গর্হিত জিজ্ঞাসার উত্তর অগ্রিম দিয়া রাখিয়াছেন। নেতিবাচক উত্তর। শিব সেনার সাংসদ দলের মুখপত্রে লিখিয়াছেন, মুসলিমদের ভোটাধিকার কাড়িয়া লওয়া উচিত, অন্যথায় ভোট-ব্যাংক হিসাবে এই জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করার প্রবণতা ঘুচিবে না। বিজেপির স্বনামধন্য সাংসদ সাক্ষী মহারাজের আদেশ: হিন্দুরা নির্বীজকরণ করিয়া জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করিবে আর মুসলিমরা তাহা বাড়াইয়া চলিবে, ইহা হইতে পারে না। জন্মনিয়ন্ত্রণ না করিলে মুসলিমদের ভোটদানের অধিকার কাড়িয়া লওয়া হউক। দুই জনেই সাংসদ, অর্থাৎ মহান ভারতীয় গণতন্ত্রে নাগরিকদের নির্বাচিত প্রতিনিধি!

শিবসৈনিক সঞ্জয় রাউত খোলা চোখে তাকাইলে দেখিতেন, কেবল মুসলিম নয়, দলিত, অনগ্রসর গোষ্ঠীভুক্ত যাদব, কুর্মি, মুশ্‌হরের মতো মহাদলিত ইত্যাদি সকল জনগোষ্ঠীকেই রাজনৈতিক দলগুলি ভোট-ব্যাংক হিসাবেই ব্যবহার করিতে চায়, করিয়া থাকে। বস্তুত, দীর্ঘ কাল যাবৎ এই ভাবে ব্যবহৃত হইতে হইতে বীতশ্রদ্ধ ওই সব জনগোষ্ঠী নিজেরাই আত্মপরিচয়ের রাজনীতি-ভিত্তিক সংগঠন ও ক্রিয়াকলাপে অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছে। তুলনায় বরং মুসলিমরা এখনও কোনও একটি দলে মেরুকৃত ও সমাবেশিত হন নাই, রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন দলে ছড়াইয়া আছেন। প্রতিটি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করিলেই তাহা স্পষ্ট হইয়া ওঠে। আর সাক্ষী মহারাজরা হিন্দু মায়েদের অন্তত চারটি করিয়া পুত্রসন্তান প্রসবের নিদান দিয়াও যখন দেখিতেছেন, তাঁহাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রবণতা বর্ধমান, তখন মরিয়া হইয়া মুসলিমদের জন্মহার নিয়ন্ত্রণকে তাঁহাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকারের সহিত জুড়িতে চাহিয়াছেন।

প্রধান শাসক দলের মুখপাত্র অবশ্য জানাইয়া দিয়াছেন, সওয়াশো কোটি ভারতবাসী ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ীই চলিবেন, তাঁহাদের মধ্যে সকল অষ্টাদশবর্ষীয়েরই ভোটাধিকার সংবিধান নির্দিষ্ট। বিজেপির এই সুভাষিত সত্ত্বেও দলীয় সাংসদ ও মিত্র দলের নেতাদের একটি অংশের ধারাবাহিক মুসলিম-বিরোধী বিষোদ্গার দুইটি বিষম ক্ষতি করিতেছে। এক, ইহার ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়ন ও বিকাশের এজেন্ডা হইতে দেশবাসী, এমনকী বিশ্ববাসীর নজর অন্যত্র নিবদ্ধ হইতেছে। দুই, মুসলিম সমাজের ভিতর হইতে বুদ্ধির মুক্তির যে আলোড়ন উঠিতেছে, জঙ্গি হিন্দুত্বের আগ্রাসনকে দেখাইয়া গোঁড়া ধর্মধ্বজিরা তাহা অপেক্ষাকৃত সহজে দমন করিয়া ফেলিতেছে। যেমন শরিয়তি ব্যক্তিগত আইনের নানা ধারার সংশোধন, পরিমার্জন বা আধুনিকীকরণ চাহিয়া মুসলিম মহিলারা যে দাবি মৃদু কণ্ঠে জানাইতেছেন, সুন্নি বারেলভি মরকজ-এর মতো গোঁড়া মুফ্‌তিদের সংগঠন ফতোয়া জারি করিয়া সেই দাবির সপক্ষে প্রচার অবধি নিষিদ্ধ করিয়া দিতেছে। আধুনিকতা ও বিজ্ঞানমনস্কতার পথে যাত্রা, শিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতিই ভারতীয় মুসলিম সমাজকে গণতন্ত্রের পথে প্রকৃত সহযাত্রী করিয়া তুলিতে পারে। এই প্রবণতাগুলিকে উৎসাহিত করা চাই। তখন মতলববাজ রাজনীতিকদের ভোটব্যাংক হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার রুচি যেমন চলিয়া যাইবে, তেমনই ওই সমাজের জন্মহারও আপনিই নিয়ন্ত্রিত হইবে। সে জন্য তাঁহাদের ভোটাধিকার কাড়ার দরকার হইবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE