মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করিয়া এই গ্রহের কোথাও সন্ত্রাসবাদীদের কোনও নিরাপদ আস্তানা মিলিবে না— প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই ঘোষণা অনিবার্য ভাবে তাঁহার পূর্বসূরি জর্জ ডব্লিউ বুশের কথা মনে করাইয়া দিয়াছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী হানার পরে তিনি ইঁদুরের গর্ত হইতে সন্ত্রাসবাদীদের খুঁজিয়া বাহির করিয়া ধ্বংস করিবার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন। অতঃপর আফগানিস্তান অভিযান ইত্যাদির দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যথেষ্ট স্বস্তিকর নয়। ওবামা তাহা হইতে শিক্ষা লইবার চেষ্টা করিয়াছেন। আফগানিস্তান হইতে সরিয়া আসিবার সিদ্ধান্ত সেই শিক্ষার পরিণাম। পশ্চিম এশিয়ার রণাঙ্গনে পূর্ণশক্তিতে না নামিবার ও অনেক ক্ষেত্রে কার্যত সরিয়া থাকিবার নীতিও ইহারই অনুসারী। কিন্তু একের পর এক মার্কিন সাংবাদিকের সর্বশেষ ব্রিটিশ সমাজকর্মীর মুণ্ডচ্ছেদ এবং পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের হুমকি-সহ তাহার ভিডিয়ো-সম্প্রচার করিয়া আইএস ওবামাকে বলিতে বাধ্য করিয়াছে যে, আইএস গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সূচিত জবাবি আক্রমণের সীমানা ইরাক হইতে সিরিয়াতেও সম্প্রসারিত হইবে। আপাতত মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি এই অভিযানে বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা চাহিয়া ফিরিতেছেন। পশ্চিম এশিয়ায় সংঘাতের নূতন পট উন্মোচিত হইতেছে।
আইএস ইতিমধ্যে সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তৃত— ভৌগোলিক আয়তনে ব্রিটেনের প্রায় সমান— ভূখণ্ড দখল করিয়া সেখানে একটি ‘খলিফাতন্ত্র’ কায়েম করিয়া সন্ত্রাস ও অমানবিক বর্বরতার রাজত্ব স্থাপন করিয়াছে। গোঁড়া সুন্নি বলিয়া আত্মপরিচিত এই জঙ্গিরা শিয়া, কুর্দ, ইয়াজিদি, খ্রিস্টান প্রভৃতি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরও গণ-ধর্মান্তরিত করিতেছে কিংবা হাজারে-হাজারে প্রকাশ্যে গণহত্যা করিতেছে। মহিলাদের পরিবার হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া খলিফাতন্ত্রের যোদ্ধাদের যৌনদাসী রূপে উপযোগ করা হইতেছে। দশ-পনেরো হাজার প্রশিক্ষিত গেরিলা বাহিনী শত্রুপক্ষের কাছ হইতে বাজেয়াপ্ত পাশ্চাত্য ট্যাংক, সাঁজোয়া গাড়ি, ক্ষেপণাস্ত্র, ভারী কামান ও অন্যান্য আধুনিক অস্ত্রসম্ভার লইয়া কার্যত অপরাজেয় হইয়া উঠিয়াছে। এখনই ইহাদের সমূলে বিনাশ না করিলে ভবিষ্যতে মানব সভ্যতার পক্ষেই ইহারা মূর্তিমান ত্রাস হইয়া উঠিবে। অগত্যা ওবামাকে তাঁহার ঘোষিত অবস্থান হইতে সরিয়া আসিয়া যুদ্ধপ্রস্তুতি লইতেই হইয়াছে।
ওবামা তথাপি স্থলযুদ্ধের সম্ভাবনা এখনও এড়াইয়া চলারই পক্ষপাতী। তিনি জানেন, এই সংগ্রাম দীর্ঘস্থায়ী হইতে বাধ্য। তাই স্থলযুদ্ধে সেনাবাহিনী নামাইয়া নূতন করিয়া জড়াইয়া পড়িতে তিনি অনিচ্ছুক। পরিবর্তে সোমালিয়া ও ইয়েমেনে ওয়াশিংটন জেহাদি সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় যেমন আকাশপথে বোমাবর্ষণ করিয়া সাফল্য অর্জন করিয়াছিল, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের ওয়াজিরিস্তানে তালিবান জেহাদিদের যে ভাবে নাজেহাল করিয়াছিল, কতকটা তাহার অনুসরণেই ইরাক ও সিরিয়ায় জেহাদিদের মহড়া লইতে চায়। সেই সঙ্গে ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া, কুর্দ ‘পেশমেরগা’ বাহিনী এবং সরকারি সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা ও সিরিয়ায় গণতান্ত্রিক গোষ্ঠীগুলির যোদ্ধাদের শামিল করিতেও ওয়াশিংটন আগ্রহী। তবে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরোধী গোষ্ঠীগুলির অধিকাংশই ইসলামি রাষ্ট্রবাদীরা আত্মসাৎ অথবা নিশ্চিহ্ন করিয়াছে। তাই শেষ পর্যন্ত সিরিয়ায় মার্কিন যুদ্ধপ্রয়াস সফল করিতে হইলে হয়তো প্রেসিডেন্ট আসাদের বাহিনীকেও শামিল করিতে হইতে পারে, যেমন যুক্ত মোর্চা গড়িতে হইতে পারে শিয়া-অধ্যুষিত ইরানের সঙ্গে। কোনও বিকল্পের দরজাই বন্ধ করা উচিত নয়, বিশেষত লক্ষ্য যখন পৈশাচিক আচরণে অবিচল সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy