দক্ষিণের পর এ বার পুবের পালা। ক্রাইমিয়া দখলের পর এ বার পূর্ব ইউক্রেনের ডনেট্স্ক অঞ্চল কিয়েভের হাত হইতে কাড়িয়া লওয়ার প্রয়াস চলিতেছে। জারের আমল হইতে শুরু হওয়া রুশ আগ্রাসন নীতি সোভিয়েত জমানা পার করিয়া এক্ষণে ভ্লাদিমির পুতিনের পৌরোহিত্যে রূপায়িত হইয়া চলিয়াছে। ইউক্রেনকে বশীভূত করার প্রচেষ্টা সে দেশের বাসিন্দারা বানচাল করিয়া দিলে ভিতর হইতে দুর্গ দখলের স্তালিনীয় অন্তর্ঘাত প্রয়োগ করিয়া রুশ জনজাতি অধ্যুষিত ক্রাইমিয়ায় বিদ্রোহের পতাকা উড়াইয়া রুশপন্থীরা পুতিনের পূর্ণ মদতে ‘গণভোট’ সংগঠিত করেন এবং ইউক্রেন হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া যান। এ বার ডনেটস্ক-এও রুশ পতাকা লইয়া বেসরকারি মিলিশিয়া বিভিন্ন সরকারি ভবন ও বিমানবন্দর দখল করিয়া লয়। ইউক্রেন এ বার চুপচাপ মানিয়া লয় নাই, সেনা পাঠাইয়া সরকারি ভবন ও বিমানবন্দর পুনর্দখল করিয়াছে। আর তাহাতেই পুতিন-এর পরম অনুগামী রুশ প্রধানমন্ত্রী মেদভেদেভ ‘গৃহযুদ্ধ’র হুমকি দিয়াছেন।
বৃহত্শক্তি রাশিয়ার এই সাম্রাজ্য বিস্তারের অভিযানের সামনে ইউক্রেনের মতো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের প্রতিরোধ গড়ার সামর্থ্যও সীমিত। মস্কোর উপর তাহার অর্থনৈতিক নির্ভরতা ইতিহাসের উত্তরাধিকার। সেই নির্ভরতা যখনই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাহায্যে কাটাইয়া ওঠার চেষ্টা হইতেছে, তখনই রুশ সাম্রাজ্যলিপ্সা আপন প্রভাববলয় অক্ষত রাখিতে তত্পর। ভ্লাদিমির পুতিন অধুনা-স্বাধীন সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলিতে সর্বত্র রুশপন্থীদের ক্ষমতাসীন দেখিতে চাহেন। জর্জিয়া ও আর্মেনিয়া তাহার অন্যথা করায় ফৌজ পাঠাইয়া তাহাদের শায়েস্তা করা হয়। এখন ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও অনুরূপ দাওয়াই স্থির হইয়াছে। সামনে মিলিশিয়াকে রাখিয়া তাহার হাতে বিদ্রোহের পতাকা ধরাইয়া দিয়া নেপথ্য হইতে রুশ ফৌজ কলকাঠি নাড়িতেছে। ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্টকে দেশবাসী বিতাড়িত করার পর অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট পদে আসীন ওলেকজান্দার তুর্চিনভ ক্রাইমিয়ার ক্ষেত্রে পরাজয়বাদী হইলেও ডনেট্স্ক-এর ক্ষেত্রে অনমনীয় লড়াকু অবস্থান লইয়াছেন। কিন্তু রুশ সামরিক শক্তির সামনে তিনি অসহায়। অতএব রাশিয়ার শাসক গোষ্ঠীর উপর মার্কিন-ইউরোপীয় চাপই একমাত্র ভরসা।
চাপ সৃষ্টির কৌশল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহত রাখিয়াছে। ক্রাইমিয়া দখলের প্রতিবাদে জি-৮ গোষ্ঠী হইতে রাশিয়াকে নির্বাসিত করিয়া রাতারাতি তাহাকে জি-৭ গোষ্ঠীতে রূপান্তরিত করার মধ্যে সেই প্রতীকী আপত্তি নিহিত। রাশিয়ার বিরুদ্ধে রকমারি বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারির প্রক্রিয়াও চলিয়াছে। কিন্তু রাশিয়া উত্তর কোরিয়া বা ইরাক-ইরান নয়, বরং কাস্পিয়ান বেসিনের উত্কৃষ্ট তেলের ভাণ্ডার তাহাকে যে আর্থিক সমৃদ্ধি দান করিয়াছে, তাহার সাহায্যে গোটা ইউরোপকেই সে ব্ল্যাকমেল করিতে পারে। ইউক্রেনকে দেয় তেলের দর বৃদ্ধি করিয়া পাল্টা চাপ সৃষ্টির খেলা মস্কো ইতিমধ্যেই শুরু করিয়াছে। জার্মানির মতো কোনও কোনও ইউরোপীয় দেশ আবার মস্কোকে অতিরিক্ত চাপে রাখার বিরোধী। তাহারা মনে করে, এ ধরনের চাপ বিপরীত ফল দিতে পারে। ফলে একা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইউক্রেনের সাহায্যে বেশি দূর অগ্রসর হওয়াও সম্ভব নয়। ইরাক কিংবা আফগানিস্তানের মতো নূতন আরও একটি কবর খুঁড়িতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট একেবারেই রাজি নহেন, তাহাও আবার প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার উঠানে। ইউক্রেন অতএব বিষম সংকটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy