Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

পাল্টা

শিশির বাজোরিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর (মতান্তরে গ্রেফতারি পরোয়ানা) হইতে একটি তীব্র গন্ধ আসিতেছে। প্রতিহিংসার রাজনীতির গন্ধ।

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

শিশির বাজোরিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর (মতান্তরে গ্রেফতারি পরোয়ানা) হইতে একটি তীব্র গন্ধ আসিতেছে। প্রতিহিংসার রাজনীতির গন্ধ। সিবিআই তাপস পাল বা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করিলে কলিকাতা পুলিশও বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করিতে পারে— এই কোন্দল চালাইয়া যাওয়া ভিন্ন এই এফআইআর-এর মধ্যে অন্য কোনও যুক্তি খুঁজিয়া পাওয়া কঠিন। আইন ভাঙা নিশ্চয়ই অনুচিত কাজ। এই দেশের সব আইনেই কানায় কানায় যৌক্তিকতা আছে, এমন দাবি কেহ করিবেন না। কিন্তু, কোনও আইন যদি অযৌক্তিকও হয়, তবুও সেই আইন যত ক্ষণ আছে, তাহা মানিয়া চলাই নাগরিকের কর্তব্য। শিশির বাজোরিয়া কলিকাতা পুরসভার কোনও আইন ভাঙিয়া থাকিলে তাঁহার যথাযোগ্য বিচার ও শাস্তি হওয়াই বিধেয়। কিন্তু, লঘুগুরু ভেদ বিস্মৃত হইলেও মুশকিল। তাঁহার বাড়িতে তল্লাশি চালাইতে পুলিশ যতখানি তৎপরতা দেখাইয়াছে, সচরাচর গুরুতর ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে তেমনটা হইয়া থাকে। এবং, দুর্জনে বলিবে, অভিযুক্তের মাথায় তেমন তেমন হাত থাকিলে গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রেও পুলিশ এই সক্রিয়তার তিলমাত্র দেখাইয়া উঠিতে পারে না। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক ব্যক্তির সম্মানের অধিকার রহিয়াছে। তিনি যদি অপরাধীও হন, তবুও সেই অপরাধের বিচার নিষ্পত্তির নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রহিয়াছে, যাহাতে সেই ব্যক্তির সম্মানের অধিকারটি রক্ষিত হয়। শিশির বাজোরিয়া দাগি অপরাধী নহেন। তাঁহার বিরুদ্ধে পুলিশের এই অবান্তর অতিসক্রিয়তায় তাঁহার সম্মানহানি হইতেছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ব্যতীত এই আচরণের কোনও কারণ আছে কি?

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বস্তুটি ভারতে অধুনা সুলভ হইয়াছে। দিল্লির অধীশ্বররা যত সিদ্ধান্ত করেন, তাহার বড় অংশের চালিকাশক্তি প্রতিহিংসা। সেই কাজে সিবিআই-এর ব্যবহার কতখানি, তাহাও বহু-আলোচিত। প্রশাসনিক বাহুবল ব্যবহার করিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিবার খেলাটিতে পশ্চিমবঙ্গও যে পিছাইয়া নাই, ক্রমে প্রমাণ মিলিতেছে। ইহাতে রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিবেশের কতখানি ক্ষতি হইতেছে, মুখ্যমন্ত্রী এক বার বিবেচনা করিতে পারেন। অবশ্য দুর্জনে বলিবে, গণতন্ত্র নামক বাহুল্যটিকে ভারতের নেতারা গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করিয়াছেন। তাঁহাদের নিকট সাময়িক রাজনৈতিক লাভের মূল্য ঢের বেশি। এক্ষণে মুখ্যমন্ত্রী সেই লাভের কথা ভাবিলেও চলিবে। তিনি শিল্প সম্মেলন করিতেছেন, বিনিয়োগের বাস্তবায়ন চাহিতেছেন। শিল্পের কিছু দাবিদাওয়া না মানিবার জেদে তিনি অটল থাকিলেও পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যতের স্বার্থে তিনি যে শিল্প চাহেন, তাহা স্পষ্ট। ভাঙড়ে যাহা হইল, তাহা পশ্চিমবঙ্গ সম্বন্ধে শিল্পমহলের নিকট ইতিবাচক বার্তা প্রেরণ করিবে না। তবুও, জমি সংক্রান্ত অশান্তি পশ্চিমবঙ্গের চেনা ছবি। তাহার উপর যদি সরকারের প্রতিহিংসাপরায়ণতা যোগ হয়, যদি এই আশঙ্কাটি ছড়াইয়া পড়ে যে এই রাজ্যের সরকারের বিরাগভাজন হইলে পুলিশি ভোগান্তির শিকার হওয়াও বিচিত্র নহে, তবে পশ্চিমবঙ্গের নেতিবাচক ছবিটির উপর আরও এক পোঁচ কালো রঙ চাপিবে। কেহ প্রশ্ন করিতেই পারেন, শিশির বাজোরিয়ার বিরুদ্ধে হওয়া এফআইআর যে প্রতিহিংসাপরায়ণতারই ফল, তাহার কোনও প্রমাণ আছে কি? প্রত্যক্ষ না হইলেও পারিপার্শ্বিক প্রমাণ যথেষ্ট। কিন্তু, সেই প্রশ্ন গৌণ। এমন অভিযোগ আদৌ উঠিবে কেন, রাজ্যের কর্তারা বরং সে কথা ভাবুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE