কংগ্রেসকে বাঁচাইতে কী চাই? ২৪ আকবর রোডে প্রশান্ত কিশোর আর উত্তরপ্রদেশে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী? সংসদে ঘুমাইয়া না পড়া রাহুল গাঁধী? পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির প্রধান পদ লইয়া কলহ না করিবার মানসিক দৃঢ়তা? মহর্ষি বাল্মীকি ঈষৎ হাসিয়া বলিতেন, ‘হয় নাই, হয় নাই, ফেল!’ কংগ্রেসকে বাঁচাইয়া তুলিতে চাই বিশল্যকরণী। শক্তিশেলাহত লক্ষ্মণকে বাঁচাইতে যে মহৌষধির প্রয়োজন পড়িয়াছিল, একমাত্র সেই মৃতসঞ্জীবনী সুধাতেই কংগ্রেস বাঁচিতে পারে। মুশকিল হইল, শ্রীরামচন্দ্রের হনুমান ছিলেন, কংগ্রেসের আছেন রাহুল গাঁধী। ফলে, গোটা গন্ধমাদন পর্বত উপড়াইয়া আনিবার উপায় কংগ্রেসের নাই। বিশল্যকরণীর খোঁজ করিতে হইলে তাহা ভিন্ন পথে। মৃত দলকে বাঁচাইয়া তুলিবার জন্যই হয়তো উত্তরাখণ্ড সরকার সেই খোঁজ আরম্ভ করিল। হিমালয়ের চিন সংলগ্ন দ্রোণগিরি রেঞ্জ-এ গবেষকরা বিশল্যকরণী খুঁজিবেন। প্রাথমিক ভাবে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হইয়াছে। সরকারের বিকল্প চিকিৎসা বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী জানাইয়াছেন, তিনি নিশ্চিত যে এই সন্ধানের ফলে বিশল্যকরণী মিলিবেই। মহাবীর হনুমান যাহা পারেন নাই, তাঁহার গবেষকরা সেই কাজটি পারিবেন। মন্ত্রীর এই আত্মবিশ্বাসের কারণ অজ্ঞাত। তিনি সম্ভবত ধরিয়া লইয়াছেন, হনুমানের পিছনে রামচন্দ্র পঁচিশ কোটি টাকা খরচ করেন নাই বলিয়াই হনুমান সম্পূর্ণ সফল হন নাই। তাঁহারা টাকা ঢালিতেছেন, অতএব সাফল্য ঠেকায় কে? এই টাকা আবার নিজস্ব রাজকোষের। উত্তরাখণ্ড সরকার দিল্লির নিকট দরবার করিয়াও বিফলমনোরথ হইয়াছে। খানিক অপ্রত্যাশিতই বটে। অনুমান করা চলে, অশোক রোডের সদর দফতরে আপাতত রামচন্দ্রের তুলনায় গোমাতার কদর বেশি। বিশল্যকরণীর বদলে হরীশ রাওয়াতরা যদি গোমূত্র হইতে স্বর্ণ আহরণের প্রকল্পের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করিতেন, কে বলিতে পারে, হয়তো বিজেপি-কংগ্রেস বিভেদ তাহার নিকট তুচ্ছ হইত। কেন্দ্রীয় বঞ্চনা কিন্তু উত্তরাখণ্ডের সরকারকে ঠেকাইয়া রাখিতে পারে নাই। অগস্টেই খোঁজ আরম্ভ হইতেছে।
তবে, এই বিশল্যকরণীর তেজ কংগ্রেস হজম করিতে পারিবে কি না, সেই সংশয় আছে। এমনিতে বিজেপি-র নিকট রামচন্দ্র আগের গুরুত্ব হারাইয়াছেন। নাগপুরের কর্তারাও বুঝিয়াছেন, সোমনাথ হইতে রথযাত্রা অথবা দেশের সর্বপ্রান্ত হইতে মন্দির গড়িবার ইট আনাইয়াও যে কাজ হয় নাই, গোমাতা-ভারতমাতার যুগলবন্দিতে তাহা হইতেছে। অসমে পদ্ম ফুটিয়াছে, পশ্চিমবঙ্গ-কেরলেও বিজেপির ভোট বাড়িতেছে। অশোক রোডের সামনের ফুটপাথ ধরিয়া হাঁটিবার সময় উত্তরাখণ্ড কংগ্রেস প্রায় পরেশ দত্তর ন্যায় শ্রীরামচন্দ্রকে কুড়াইয়া পকেটে পুরিল। পরেশ দত্ত পরশুরাম রচিত ‘পরশপাথর’ গল্পটির মূল চরিত্র, তুলসী চক্রবর্তী যাঁহাকে অমরত্ব দিয়াছেন। তবে, পরেশবাবু পরশপাথরটি শেষ অবধি সামলাইতে পারেন নাই। কংগ্রেস পারিবে, সেই সম্ভাবনা ক্ষীণতর। বরং, নরম হিন্দুত্ব লইয়া এই ছেলেখেলা বিজেপি-র হাতে মারাত্মকতর অস্ত্র তুলিয়া দিবে বলিয়াই আশঙ্কা। হিন্দুত্বের গা ঘেঁষিয়া হাঁটিবার অপচেষ্টা কংগ্রেস পূর্বেও করিয়াছে। কখনও ফল ভাল হয় নাই। বস্তুত, কংগ্রেস কখনও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সামলাইতে পারে নাই। শুধু হিন্দুত্বই নহে, ‘মুসলমান তোষণ’-ও কংগ্রেসের নিকট বিপরীত ফলদায়ী হইয়াছে। শাহ বানো মামলা সেই সাক্ষ্য বহন করিতেছে। কিন্তু, অতীত হইতেই যদি শিক্ষা লইবে, তবে আর দলের নাম কংগ্রেস কেন? ফলে, হরীশ রাওয়াত বিশল্যকরণী খুঁজিতে নামিয়াছেন। উত্তরাখণ্ডে রাজ্যপাল কর্তৃক বরখাস্ত হইবার পর আদালতের আদেশে পুনর্বহাল হওয়া রাওয়াতের মধ্যে কিছু করিয়া দেখাইবার তাগিদ প্রবল হইতে পারে। তাঁহাকে সামলাইয়া রাখা শীর্ষ নেতৃত্বের কাজ ছিল। অবশ্য, তাঁহারা রাহুল গাঁধীকেই জাগাইয়া রাখিতে পারেন না, অন্য কথার আর অবকাশ কোথায়?
যৎকিঞ্চিৎ
সুষমা স্বরাজ মহাশ্বেতা দেবী আর আশাপূর্ণা দেবী-তে গুলিয়ে ফেলেছেন। নিন্দে চলছে। আমরা কে জানি প্লেটো আর অ্যারিস্টটল আলাদা? মানে যা এঁকেছেন, আর মোনে যা এঁকেছেন, তা ক’জনের মনে আলাদা মানে তৈরি করেছে আর তফাতগুলো ঝকঝক করছে? গুচ্ছের যুবাযুবি এখন, ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট যুগের কেউ মারা গেলেই, তিনি মুদি ছিলেন না নাট্যকার ছিলেন, না জেনেই RIP লাগিয়ে দেয়। সুষমা হয়তো এই মেক ইন ইন্ডিয়া সপ্রতিভতাকেই ফলো করেছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy