উত্তর-পূর্ব ভারত এই দেশের মানচিত্রে নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু চেতনায়? ভারতীয়তা বলিতে যাহা বোঝায়, ভারতীয়তার যে ধারণা বহুলপ্রচলিত, তাহাতে উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ এবং তাঁহাদের সমাজ সংস্কৃতি জীবনযাপনের স্বীকৃতি কার্যত শূন্য। সরকারি পরিসংখ্যানে বা প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রদর্শনীতে এই অঞ্চলের রাজ্যগুলিকে অতিথি শিল্পীর ভূমিকা দেওয়া হইয়া থাকে, সর্বভারতীয় রাজনীতির নেতানেত্রীরা কালেভদ্রে এই রাজ্যগুলিতে পদার্পণ করেন এবং সেখানকার পোশাক অঙ্গে ধারণ করিয়া বা লোকনৃত্যের তালে পা মিলাইয়া স্থানীয় অধিবাসীদের কৃতার্থ করেন। কিন্তু মানচিত্রের এক প্রান্তে স্থিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিশেষত মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুরের মতো স্বল্পকায় রাজ্যগুলি সর্ব অর্থেই প্রান্তিক অস্তিত্ব যাপন করিয়া চলে।
সন্দেহ নাই, এই অঞ্চল প্রাকৃতিক কারণে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অপূর্ণতাবশত দেশের অন্যান্য অঞ্চল হইতে দুরধিগম্য। এই রাজ্যগুলির ভাষা, সংস্কৃতি, জীবনযাপনের শৈলী, এমনকী অধিবাসীদের জনগোষ্ঠীগত বৈশিষ্ট্য ‘বৃহত্তর’ ভারত হইতে স্বতন্ত্র। ভারতীয় জাতীয়তার যে ধারণা, বহুলাংশে ঔপনিবেশিক শাসকের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়া, ক্রমে গড়িয়া উঠিয়াছিল, তাহার নির্মাণপর্বে এই অঞ্চলের মানুষের ভূমিকা সীমিত ছিল। ভূগোলের হাত ধরিয়া ইতিহাসও উত্তর-পূর্ব ভারতকে দূরবর্তী রাখিয়াছে। কিন্তু আজও যদি সেই দূরত্ব বজায় থাকে, তবে উদার গণতান্ত্রিক বিচিত্র ভারত গড়িবার সেই সব মহান প্রতিশ্রুতির অর্থ কী? উত্তর-পূর্ব ভারত নানা দিক হইতে ভিন্নরূপ বলিয়াই তো সেই ভিন্নতাকে সসম্মান গ্রহণ জরুরি ছিল। জরুরি ছিল যথার্থ বৈচিত্রময় এবং সহিষ্ণু ভারতীয়তার স্বার্থে।
দুর্ভাগ্য স্বাধীন গণতান্ত্রিক ভারতের— তাহা ঘটে নাই। ভারতীয় ‘মূলস্রোত’ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে আমরা-উহারার বিভাজনে সরাইয়া রাখিয়াছে। এই বিভাজনে নিহিত আছে বিরাগ, বিদ্বেষ, হিংস্রতা। তাহা ক্রমাগত প্রকট হয়। দিল্লিতে মিজো তরুণ নিদো টানিয়ার মর্মান্তিক কাহিনির স্মৃতি এখনও তাজা। কিন্তু তাহাতেও মহান ভারতের সম্বিৎ যে ফিরে নাই, সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে মিজো তরুণ এবং গুড়গাঁওতে নাগা তরুণদের লাঞ্ছিত ও প্রহৃত হইবার ঘটনা তাহার নূতন প্রমাণ দিয়াছে। উভয় ক্ষেত্রেই, এই তরুণরা আগেও লাঞ্ছনার শিকার হইয়াছিলেন, তাহা ‘বড় খবর’ হইবার যোগ্যতা অর্জন করে নাই, এই যা। কার্যত নিরবচ্ছিন্ন অপমান এবং লাঞ্ছনা চলিতে থাকে, এক শতাংশও খবর হয় না। এই হিংস্রতা ক্রমশ বাড়িতেছে এবং— বেঙ্গালুরু প্রমাণ— উত্তর ভারতের সীমানা ছাড়াইয়া অবশিষ্ট ভারতেও সঞ্চারিত হইতেছে। কেন? ভারতীয় মূলস্রোত কেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষকে গ্রহণ করিতে পারিতেছে না? একটি কারণ সম্ভবত আতঙ্ক। ভারতীয় মূলস্রোত আতঙ্কিত। মূল ভারতীয়তার স্রোতে উত্তর-পূর্বের ‘অনধিকার প্রবেশ’ তাহাকে ভীত করে। যাহা কিছু ‘অন্য’, তাহা সে সহিতে পারে না। কারণ, অন্যকে মানিয়া লইলে সে আর ‘অনন্য’ থাকিতে পারে না। তাহার মূলস্রোতের আধিপত্য নড়িয়া যায়। তাহার গুরুত্ব সংকটে পড়িয়া যায়। সে আপ্রাণ চেষ্টা করিতে থাকে, তাহার মান, তাহার নিয়ম, তাহার প্রতিপত্তি যেন অটুট থাকে। সবার মাঝে নিজেকে মিলাইয়া যদি তাহা রক্ষা করা না যায়, তাহা হইলে অন্যকে মারিয়া সেই গুরুত্ব বজায় রাখাই একমাত্র উপায়। এই সমাজ কোন অনাগত সহস্রাব্দে সংশোধিত হইবে, তাহার ভরসায় বসিয়া থাকিবার নৈতিক অধিকার রাজনীতিক এবং প্রশাসকদের নাই। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রবল ভাবে তৎপর হইবার নৈতিক দায় তাঁহাদেরই। কেন্দ্রীয় সরকার এ জন্য বিশেষ আইন প্রণয়নে উদ্যোগী। আইন এ ক্ষেত্রে হয়তো আবশ্যক। কিন্তু প্রশাসন কঠোর এবং মনোযোগী না হইলে আইনের দৌড় যৎসামান্য।
য ৎ কি ঞ্চি ৎ
শব্দবাজির প্রাবল্য কমে এ বার আলো-নির্ভর বাজির রমরমা হল, তাতে কানের পর্দা বাঁচল বটে, কিন্তু ছটফটিয়ে শেষ ফুসফুস আর নাক, চোখ, গলা। শহরে ধোঁয়া জমে একসা, কৃত্রিম কুয়াশা ঝুলে আছে, লোকে হাঁচছে কাশছে হাঁপ টানছে। তবে উপায়? কালীপুজোয় সব রকম বাজিই বন্ধ করে দিতে হবে? তখন তো দীর্ঘশ্বাসের চোটে লোকে মরে যাবে, সারে সারে হার্ট অ্যাটাক। অবশ্য মোদী আছেন, সংকট বুঝলে মোবাইলে লাগাতার ফ্রি ই-বাজির বন্দোবস্ত, স্বচ্ছ দিওয়ালি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy