Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

মাঠের বাহিরে পাঠান

সপাটে মাঠের বাহিরে ফেলিয়া দেওয়ার বল পাইয়াও যে ব্যাটসম্যান ঠুকিয়া খেলিবেন, তাঁহার পক্ষে কালোত্তীর্ণের শিরোপা পাওয়া দুষ্কর। তিনি বড়জোর নিজের উইকেটটি বহু ক্ষণ বাঁচাইয়া রাখিতে পারিবেন, কিন্তু খেলার বুকে নিজের দাগ কাটা তাঁহার সাধ্যাতীত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেখিয়া আশঙ্কা হইতেছে, নিজের উইকেটের স্থায়িত্বই বুঝি তাঁহার একমাত্র বিবেচ্য হইয়াছে।

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

সপাটে মাঠের বাহিরে ফেলিয়া দেওয়ার বল পাইয়াও যে ব্যাটসম্যান ঠুকিয়া খেলিবেন, তাঁহার পক্ষে কালোত্তীর্ণের শিরোপা পাওয়া দুষ্কর। তিনি বড়জোর নিজের উইকেটটি বহু ক্ষণ বাঁচাইয়া রাখিতে পারিবেন, কিন্তু খেলার বুকে নিজের দাগ কাটা তাঁহার সাধ্যাতীত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেখিয়া আশঙ্কা হইতেছে, নিজের উইকেটের স্থায়িত্বই বুঝি তাঁহার একমাত্র বিবেচ্য হইয়াছে। রাজনীতির চলন তাঁহাকে এমন এক সুযোগের সম্মুখীন করিয়াছে, যাহা বহু যুগে এক বার মেলে। ১৯৭৯ সালে ব্রিটেনে মার্গারেট থ্যাচার এক বার তেমন সুযোগ পাইয়াছিলেন, ১৯৯১ সালে পি ভি নরসিংহ রাও-মনমোহন সিংহের জুটি পাইয়াছিল আধখানা। লোকসভায় বিজেপি একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার মতো রাজ্যের নির্বাচন বলিতেছে, দেশে মোদী-হাওয়া এখনও প্রবল। বিরোধী শিবির সম্পূর্ণ ছত্রভঙ্গ। মোদী সংস্কারের পথে সর্বশক্তিতে হাঁটিলে তাঁহাকে বাধা দেওয়ার সাধ্য এখন কাহারও নাই। অন্য দিকে, দেশের অর্থনীতিও সংস্কারের মুখ চাহিয়া বসিয়া আছে। অর্থমন্ত্রীর আসনে বসিয়া ১৯৯১ সালে মনমোহন সিংহ যাহা করিয়াছিলেন, অথবা ১৯৯৭ সালে পালানিয়াপ্পন চিদম্বরম, তাহা এখন অতীত। সেই সংস্কারের সুফল ভারতীয় অর্থনীতি পাইয়াছে। এখন নূতনতর সংস্কারই সময়ের দাবি। ভারতের শীর্ষ আসনে নরেন্দ্র মোদীর অভিষেকের মুহূর্তটিতে প্রত্যাশা ছিল, তিনি বুঝি ভারতের মার্গারেট থ্যাচার হইবেন। দেশকে সংস্কারের পথে লইয়া যাইবেন। পাঁচ মাসে মোদী আশার মর্যাদা রাখিয়াছেন বলিলে সত্যের অপলাপ হইবে।

আশাভঙ্গের সর্বশেষ কারণটি তাঁহার শ্রম আইন সংস্কার, অথবা সংস্কারের নামে কিছু খুচরা নাড়াচাড়া। ভারতের শ্রম আইন বিনিয়োগকারী এবং শ্রমিক, কাহারও পক্ষেই অনুকূল নহে। সেই আইনের যদি একটিমাত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে, তাহা হইল শিল্পায়নের পথে কিছু অহেতুক বাধার সৃষ্টি করা। ভারতের শ্রমবিরোধ আইনটির সম্পূর্ণ পরিবর্তনই বিধেয় ছিল। নরেন্দ্র মোদীর কিছু কথায় সেই রকম ইঙ্গিতও ছিল। কার্যক্ষেত্রে তিনি কিছু প্রসাধনী রদবদলেই সীমিত থাকিলেন। শুধু যে শ্রমবিরোধ আইনের ক্ষেত্রেই তিনি সংস্কারের পথটি পরিহার করিলেন, তাহা নহে। বিলগ্নিকরণের প্রশ্নেও তিনি অতি সাবধানী। খুচরা বিপণনের ক্ষেত্রে বিদেশি পুঁজিকে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রশ্নটিও অমীমাংসিত পড়িয়া আছে। কয়লাখনি বণ্টনের প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীনতা ইতিমধ্যেই শিল্পক্ষেত্রে প্রভাব ফেলিতে আরম্ভ করিয়াছে। ইউপিএ আমলের নীতিপঙ্গুত্বের উত্তরাধিকার তাঁহার স্কন্ধে বর্তাইলে তাহা অতি দুর্ভাগ্যজনক হইবে। সময় বহিয়া যাইতেছে। নূতন সরকারের মধুচন্দ্রিমা অতিক্রান্ত হইতেছে। এখন করিয়া দেখাইবার সময়।

ইউপিএ আমলের অন্য একটি উত্তরাধিকার, অর্থাত্‌ সামাজিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন অযৌক্তিক প্রকল্পকে বহিয়া চলিবার দায়ও তিনি ঝাড়িয়া ফেলিতে পারেন নাই। কর্মসংস্থান যোজনা তাহার প্রমাণ। তিনি এই প্রকল্পটির এখানে খানিক বদলাইতেছেন, ওখানে কিঞ্চিত্‌ পাল্টাইতেছেন। কোনও প্রয়োজন ছিল না। প্রকল্পটিকে তাহার যাবতীয় লোটাকম্বল সমেত গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়াই বিধেয়। খাদ্য নিরাপত্তা আইনটিও সহগামী হইলে দেশের মঙ্গল। সংশয় হইতেছে, প্রধানমন্ত্রী বুঝি তাঁহার লক্ষ্য গুলাইয়া ফেলিতেছেন। সম্মার্জনী হস্তে ভারতকে স্বচ্ছ করিতে চাহিলে তাহা দোষের নহে, সরকারি বাবুদের সময়ে অফিসে আসিতে বাধ্য করাও ভাল কিন্তু এই হেডমাস্টারি তাঁহার প্রধান কাজ নহে। ইউপিএ জমানার ভ্রান্ত উত্তরাধিকার বহন করাও নহে। তাঁহাকে ভারতের দ্বিতীয় প্রজন্মের সংস্কারের পুরোহিত হইতে হইবে। প্রয়োজনে কঠোর হইতে হইবে, নির্মমও। ডিজেলের দাম বিনিয়ন্ত্রণ করিয়া তিনি যদি ভাবেন, অনেক সংস্কার হইল, তবে ভারতের দুর্ভাগ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE