Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

শক্তের ভক্ত

ভবী তাহা হইলে ভোলে। তাহাকে ভুলাইবার জন্য চার-চারটি বৎসর লাগিতে পারে, তবু সে ভোলে। দিল্লি হইতে প্রধানমন্ত্রীর সহিত ঢাকা সফরের প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নিকট এই প্রথম আসিতেছে না। আগে তিনি ফুৎকারে সেই প্রস্তাব উড়াইয়া দিয়াছেন, চার বৎসর পর তাঁহার সেই ফুৎকার আপাতত উৎসাহে পর্যবসিত। তিনি যাইবেন। তিনি এমনকী ইহাও বলিবেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে কোন চুক্তিতে কী হইবে সে পরে দেখা যাইবে, আপাতত তাঁহার ঢাকা সফরে কোনওই সমস্যা নাই।

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

ভবী তাহা হইলে ভোলে। তাহাকে ভুলাইবার জন্য চার-চারটি বৎসর লাগিতে পারে, তবু সে ভোলে। দিল্লি হইতে প্রধানমন্ত্রীর সহিত ঢাকা সফরের প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নিকট এই প্রথম আসিতেছে না। আগে তিনি ফুৎকারে সেই প্রস্তাব উড়াইয়া দিয়াছেন, চার বৎসর পর তাঁহার সেই ফুৎকার আপাতত উৎসাহে পর্যবসিত। তিনি যাইবেন। তিনি এমনকী ইহাও বলিবেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে কোন চুক্তিতে কী হইবে সে পরে দেখা যাইবে, আপাতত তাঁহার ঢাকা সফরে কোনওই সমস্যা নাই। এই মুখ্যমন্ত্রীই না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সময়ে কুপিত হইয়া অসহযোগ করিতেছিলেন, কারণ বাংলাদেশের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গকে যথোচিত গুরুত্ব দেওয়া হয় নাই? পরিস্থিতি কি তবে বেবাক পাল্টাইয়াছে? নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ নীতি কি পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থানুসারী হইতেছে? তেমন সিদ্ধান্ত করা কঠিন। তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি লইয়া এখনও স্পষ্ট দ্বিপাক্ষিক কথোপকথন হয় নাই। এবং ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত যে চুক্তিটি ইতিমধ্যেই সফল ভাবে স্বাক্ষরিত হইয়াছে, তাহা যে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থই অক্ষরে অক্ষরে মানিয়াছে, ইহা প্রমাণ করিবারও পথ নাই। বরং দুইটি সার্বভৌম দেশের মধ্যে দুই পক্ষের স্বার্থ মানিয়া যে ভাবে চুক্তি হওয়া দস্তুর, স্থলসীমান্ত চুক্তি তাহারই সার্থক উদাহরণ। সেই সার্থকতার স্তম্ভের উপর ভিত্তি করিয়াই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফর। তাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাহাই বলুন না কেন, তাঁহার অবস্থানের পরিবর্তনের সহিত দিল্লির নীতিগত পরিবর্তনের সরাসরি সম্পর্ক দেখিতে পাওয়া মুশকিল। অর্থ? অর্থ: নবান্নের ভবীকে ভুলাইবার জন্য নীতি লাগে নাই। শক্তি লাগিয়াছে। শক্ত হইবার শক্তি। প্রধানমন্ত্রী মোদী যাহা দেখাইতে সমর্থ।

কুলোকে বলিবেন, রাজনীতির শৃঙ্খল এমনই বস্তু যে তাহা মোদীর অঙ্গনে মমতাকে টানিয়া আনিতে বাধ্য করিয়াছে। যে প্রধানমন্ত্রীর সহিত তিনি শোভন-সম্পর্ক স্থাপনে প্রথমাবধি চরম অনাগ্রহী ছিলেন, নানা কেন্দ্র-রাজ্য বৈঠকে তাঁহার আঁচলটিও দেখা যায় নাই, রাজ্যের উন্নয়ন-স্বার্থের প্রশ্নেও তিনি এক বিন্দু সহযোগিতা করেন নাই, আজ সারদা-লাঞ্ছিত রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আত্মপৃষ্ঠ বাঁচাইবার জন্য সেই মোদীর সহিত তিনি এক মঞ্চে বলিতেও প্রস্তুত, এক সফরের সঙ্গী হইতেও প্রস্তুত। ইহা সম্ভবত সমাপতন নয় যে সিবিআই-এর সারদা তদন্ত এক-একটি সিঁড়ি উঠিয়া আসিতেছে, মমতা-মোদী সম্পর্কও বাঁকের পর বাঁক ঘুরিতেছে। রাজনীতির শক্তির এই অনন্ত লীলার বিষয়ে মোদী সচেতন। তিনি জানেন, রাজনীতির রশিই শেষ কথা, আদর্শ নীতি সম্পর্ক ইত্যাদি সবই মায়া। বিশেষত কেন্দ্রীয় ক্ষমতা যখন নিরঙ্কুশ, কোনও শরিকি সমর্থনের উপর নির্ভর করিতে হয় না, তখন নিজের অবস্থানে স্থিত হওয়াই একমাত্র পথ। বিরোধিনী নিজে যাচিয়া আসিয়া তাঁহার মান রাখিবেন।

হেতু যাহাই হউক, এই মিলনান্তক পর্বটি ভারত বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গ সকলের জন্যই সুসংবাদ। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রতিবেশী দেশের সহিত সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভূমিকার গুরুত্ব লইয়া কোনও প্রশ্নই উঠিতে পারে না। কিন্তু এতৎসত্ত্বেও, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের মধ্যে কোনও পক্ষে যদি অনমনীয়তা তৈরি হয়, তাহা বিপজ্জনক। ব্ল্যাকমেল দিয়া রাজনীতি কিংবা কূটনীতি হয় না। দিল্লি, কলকাতা, ঢাকা: তিন পক্ষের এক পক্ষও যদি ‘আমার মতই একমাত্র মত, না শুনিলে আমি নাই’ হুমকি দিয়া কার্যসিদ্ধির আশা করেন, তাহা দুরাশা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো তাহা বুঝিয়াছেন। সেই উপলব্ধি হইতেই তাঁহার ফেব্রুয়ারির ঢাকা সফর। আবার সেইখান হইতেই তাঁহার জুনের ঢাকা সফরের প্রস্তাবনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE