Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

শিক্ষা ও শিক্ষক

শিক্ষকদেরও মূল্যায়ন প্রয়োজন। দাবিটি করিলেন শিক্ষকরাই। বোলপুরে শিক্ষকদের বার্ষিক সভার আয়োজন করে প্রতীচী ট্রাস্ট। সেই সম্মেলনে আগত শিক্ষকদের গৃহীত প্রস্তাব, শিক্ষক এবং আধিকারিকদেরও নিয়মিত মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

শিক্ষকদেরও মূল্যায়ন প্রয়োজন। দাবিটি করিলেন শিক্ষকরাই। বোলপুরে শিক্ষকদের বার্ষিক সভার আয়োজন করে প্রতীচী ট্রাস্ট। সেই সম্মেলনে আগত শিক্ষকদের গৃহীত প্রস্তাব, শিক্ষক এবং আধিকারিকদেরও নিয়মিত মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। না হইলে শিশুদের নিরবচ্ছিন্ন সার্বিক মূল্যায়ন সম্ভব নহে। এই শিক্ষকরা চলতি হাওয়ার পন্থী না হইয়া সত্য বলিবার সাহস দেখাইয়াছেন। আইন অধিকার সৃষ্টি করে, সমাজ তাহা নস্যাৎ করে, এই খেলা বহু পুরাতন। কিন্তু শিক্ষার অধিকার আইনের ক্ষেত্রে সরকার নিজেই চাকা ঘুরাইতেছে। আইনটি প্রণয়ন হইবার পাঁচ বৎসর পার না হইতে কেন্দ্র পুনরায় পাশ-ফেল প্রবর্তন করিবার উপক্রম করিতেছে। রাজ্য সরকার পঞ্চম শ্রেণিতে জন্মের শংসাপত্র জমা দিবার শর্ত আরোপ করিতেছে। দুটিই শিক্ষার অধিকারের পরিপন্থী। দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে যে আইন মিলিয়াছে, তাহার গোড়া কাটিবার এই উদ্যোগ নিন্দনীয়। নিরবচ্ছিন্ন সার্বিক মূল্যায়ন প্রয়োজন, কিন্তু সহজসাধ্য নহে। অনেক শিক্ষকের সেই প্রশিক্ষণ নাই। আবার বিদ্যালয়ের পরিচালনা ও পরিদর্শনের সুষ্ঠু পরিচালনার সহিত নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়নের একটি সম্পর্ক রহিয়াছে। ‘শিক্ষার অধিকার’ আইনের অন্যান্য নিয়মগুলিরও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ‘সমস্ত নিয়মগুলো পরস্পরের সহিত সম্পর্কিত’ বলিতেছে এই প্রস্তাব।

সামগ্রিক ভাবে শিক্ষকরা— যাঁহাদের একটি বড় অংশ প্রাথমিক শিক্ষক— যে এমন একটি অন্তর্দৃষ্টিতে পৌঁছাইয়াছেন, তাহা একটি মূল্যবান বার্তা বহন করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষা যখন কেবল একটি প্রশাসনিক বিষয়, তখন খণ্ডিত ভাবে তাহার নানা দিক লইয়া নানা নির্দেশ দেওয়া যাইতে পারে। কিন্তু শিক্ষার অধিকার আইনটি স্কুলশিক্ষাকে এমন খণ্ডিত দৃষ্টিতে দেখে নাই। শিশুর পুষ্টি, পরিচ্ছন্নতা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা, এই সকল দিক স্থান পাইয়াছে ‘শিক্ষা’ ধারণাটির মধ্যে। পাঠদান ও পাশ করাইবার যে সংকীর্ণ গণ্ডিতে শিক্ষাকে দেখিতে সকলে অভ্যস্ত, শিক্ষার অধিকার তাহার তুলনায় অনেক বিস্তৃত। এবং নিরবচ্ছিন্ন সার্বিক মূল্যায়নের নিয়মটির মধ্যে এই বৃহত্তর শিক্ষার ধারণাটিই বিধৃত হইয়াছে। বোলপুরে সমাগত শিক্ষকেরা তাঁহাদের প্রস্তাবে স্বীকার করিয়াছেন, শিক্ষকেরা নিজেরা পরীক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বড় হইয়াছেন, তাই তাঁহাদের স্বাভাবিক প্রবণতা তাহারই প্রতি। পাশ-ফেল বর্জন করিয়া নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়নই যে বৈজ্ঞানিক উপায়, তাহাই যে শিশুর জন্য অধিক কার্যকর, বুঝিয়াও অনেক শিক্ষক তাহা এড়াইতেছেন। অপর দিকে, শিক্ষক ও পরিদর্শকদের সমস্যা কোথায়, নূতন বিধিগুলির কী সংশোধন প্রয়োজন, সে বিষয়ে আলোচনার কোনও সুযোগ নাই সরকারি ব্যবস্থায়। আইনকে আদেশে পরিণত করিয়া শিক্ষার মুক্তধারাকে যেন রুদ্ধ করা না হয়, শিক্ষকদের এই আবেদনটি অতি জরুরি।

এই ধরনের প্রস্তাবগুলির কপালে সাধারণত দু’একটি শিষ্টবাক্য জোটে, অতঃপর বিস্মৃতি। প্রস্তাবটি ব্যতিক্রমী মনোযোগ দাবি করে। স্পষ্টতই শিক্ষা দফতরের বিধিব্যবস্থা শিশুর সার্বিক বিকাশের কথা ভাবিয়া নির্মিত নহে। তাই তাহা শিক্ষার অধিকারের ধারণা কার্যকর করিতে ব্যর্থ হইতেছে। শিক্ষকরাও তাহার অংশীদার। কিন্তু তাঁহারা প্রতিকার খুঁজিতেছেন নিজেদের পরিবর্তনে, আইনকে লঘু করিয়া নহে। শিক্ষামন্ত্রী কি শুনিতেছেন? আরও বড় প্রশ্ন, তিনি কি দেওয়ালের লিখন পড়িতেছেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE