সমগ্র বিশ্বে ‘আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ’ হইহই ফেলিয়াছে। ইহা হইল গত দুই মাসে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের ন্যায় প্রসারিত ক্যাম্পেন: নিজের উপর এক বালতি বরফশীতল জল ঢালিয়া এএলএস (অ্যামিয়োট্রফিক লেটারাল স্ক্লেরোসিস) নামে একটি অসুখ বিষয়ে সচেতনতা ও অসুখ-সংক্রান্ত গবেষণায় অনুদান বৃদ্ধি করো। মাথায় জল ঢালিবার সময় ক্যামেরায় তাহা তুলিতে হইবে, তাহার পরে অন্য মানুষদের নাম করিয়া চ্যালেঞ্জটি লইতে আহ্বান করিতে হইবে। পুরা ঘটনাটি কোনও সমাজ-মাধ্যমে পোস্ট করিতে হইবে। যাঁহারা চ্যালেঞ্জ পাইলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করিতে হইবে। চ্যালেঞ্জটি লইলে অসুখটির গবেষণাক্ষেত্রে দশ ডলার দিতে হইবে, না লইলে একশত ডলার। কখনও, চ্যালেঞ্জটি লইলে কোনও টাকা দিতে হইবে না, না লইলে একশত ডলার দিতে হইবে। ওবামাকে চ্যালেঞ্জ করেন জাস্টিন বিবার, জুকেরবার্গ চ্যালেঞ্জ করেন বিল গেটসকে। গেটস লইয়াছিলেন, ওবামা লন নাই। সাধারণ মানুষের দেখিতে মজা লাগিবে, ফেডেরার, মেসি, অক্ষয় কুমার, বিপাশা বসু নিজের উপর জল ঢালিতেছেন, তাহারা উৎসাহী হইয়া অসুখটি সম্পর্কে জানিতে পারিবে। ২০১৩-র মধ্যভাগ হইতেই ‘ক্যানসার গবেষণায় টাকা দাও নচেৎ শীতল জলে ঝাঁপাও’ এই ‘কোল্ড ওয়াটার চ্যালেঞ্জ’ ক্যাম্পেন বিক্ষিপ্ত ভাবে চলিতেছিল, ইহাই ঘুরিতে ঘুরিতে এই বৎসরের ১৫ জুলাই হইতে এএলএস অসুুখটির প্রতিই নির্দিষ্ট ভাবে ‘আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ’-এর রূপ ধরিয়া বিস্ফোরণ ঘটাইয়াছে। এখন এইটি ‘পপ কালচার’-এর অঙ্গ, অসুখটি লইয়া গবেষণারত সংস্থা এক মাসে যে পরিমাণ অর্থ অনুদান পাইয়াছে, তাহা গত এক বৎসরে পায় নাই। নিন্দুকরা বলিতেছেন, যদি শীতল জলে স্নান করিয়া কেহ অর্থ প্রদান হইতে বাঁচিয়া যায়, তাহা ফাঁকিবাজি। বিপুল জলের অপচয় লইয়াও ছিছিক্কার পড়িয়াছে। কাহারও মতে, সমষ্টির নিকট যাহা কেবলই আমোদ, সিক্ত সেলেব্রিটি দর্শনের ঘনঘটা, তাহা এই অসুখটির গুরুত্বকে লঘু করিতেছে। কেহ বলিয়াছেন, এই গ্ল্যামার-উপাদান আসিয়া অন্য অসুখের অনুদানে ভাগ বসাইতেছে।
ভারতে, হায়দরাবাদের এক সাংবাদিক, মঞ্জু লতা কলানিধি, শুরু করিয়াছেন ‘রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জ’। নিজ গৃহ হইতে এক বাটি চাল লইয়া কোনও ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে দান করো ও ছবিটি সমাজ-মাধ্যমে পোস্ট করিয়া দাও। মঞ্জু বলিয়াছেন চমৎকার, ‘ক্ষুধা এমন একটি অসুখ, যাহা প্রত্যেকেরই পরিচিত।’ কলিকাতায় সুরয চোখানি শুরু করিয়াছেন ভিন্ন রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জ, কোনও ছবি তুলিবার প্রশ্ন এখানে নাই, কেবল ক্ষুধার্তকে কতটা চাল দিতে তুমি প্রস্তুত তাহা জানাও। আজ গিরিশ পার্কে, সেই পরিমাণ চাল লইয়া সকলে আসিবে, তাহা দরিদ্রদিগের মধ্যে বিতরণ করা হইবে। তবে ইহা মানিতেই হইবে, এই ধরনের প্রত্যুত্তরও তো সম্ভব হইত না, যদি না আইস বাকেট এমন ভয়াবহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করিত। এবং ইহাতেও সন্দেহ নাই, যত বড় পণ্ডিত যত মনোজ্ঞ ভাষণ প্রদান করুন, সাধারণ মানসে, বিখ্যাত মানুষের বাক্যের অপেক্ষা তাহা অধিক অভিঘাত উৎপাদন করে না। তাই অমিতাভ বচ্চন বলিলে অভিভাবকগণ পোলিয়ো-টিকা বিষয়ে দ্রুত সচেতন হইয়া উঠেন। যদি হুজুগ বা মৌজমস্তির রূপ ধরিয়া একটি বিষয়ে বার্তা সমগ্র পৃথিবীতে ছড়াইয়া দেওয়া যায়, তবে হুজুগকেই হাতিয়ার করিবার মধ্যে কোনও অগৌরব নাই। এই টিআরপি-বাচক যুগকে তাহার কায়দাতেই বশ করিতে হইবে। প্রতিটি মানুষকে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে সকল অনুপুঙ্খ বুঝাইয়া তবে অনুদান লইব, এই প্রতিজ্ঞা ধরিয়া বসিয়া থাকিলে তাহা নীতিবাগীশের অকুষ্ঠ প্রশংসা পাইবে, কিন্তু কোনও দিনই গবেষণাগার উপচাইয়া পড়িবে না। যদি পৃথিবীতে একটি অতি কঠিন অসুখ আজ জনমোহিনী তারল্য অবলম্বন করিয়া তাহার নিরসনের পথে অগ্রসর হয়, তবে ধন্য বরফ-বালতির উষ্ণতা।
য ৎ কি ঞ্চি ৎ
টিচার্স ডে-তে মোদী ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন দুপুর তিনটে থেকে। নিদান: সব স্কুলে ব্যবস্থা করতে হবে টিভির, বা কম্পিউটারের, অন্তত রেডিয়োর। অনেক স্কুলেই টিভি নেই। জেনারেটর নেই, কারেন্ট থাকবে, নিশ্চয়তাও নেই। বহু স্কুলে এই দিনে ফাংশন হয়। কোথাও ছাত্রছাত্রীরা তিনটের আগেই ছুটি পেয়ে যায়। সব ছেড়েছুড়ে সব্বাই হেঁটমুণ্ডে শুনতে বাধ্য দেশের মাস্টারমশাইয়ের বক্তিমে। প্রকৃত ভারতীয় শিক্ষা: ক্ষমতাবানের অবান্তর দাবি, তার আন্ডারে ছটফটাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy