Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

সকলই শোভন

যাঁহারা মেয়র পারিষদ হইয়া একটি দফতরের দায়িত্ব সামলাইতে পারিবেন বলিয়াও দল বিশ্বাস করে না, তাঁহাদের জিতাইয়া আনিতে এত বোমাবারুদের প্রয়োজন ছিল কি? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাবিয়া দেখিতে পারেন। কলিকাতা পুরসভায় তাঁহার দলের কাউন্সিলরের সংখ্যা ১১৪। তবুও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘাড়েই ১৩টি দফতরের ভার পড়িয়াছে।

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০০:০২
Share: Save:

যাঁহারা মেয়র পারিষদ হইয়া একটি দফতরের দায়িত্ব সামলাইতে পারিবেন বলিয়াও দল বিশ্বাস করে না, তাঁহাদের জিতাইয়া আনিতে এত বোমাবারুদের প্রয়োজন ছিল কি? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাবিয়া দেখিতে পারেন। কলিকাতা পুরসভায় তাঁহার দলের কাউন্সিলরের সংখ্যা ১১৪। তবুও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘাড়েই ১৩টি দফতরের ভার পড়িয়াছে। প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সন্দিহান, সারা দিন মুখ্যমন্ত্রীর পার্শ্বচর হইবার পরেও শোভনবাবু এই গুরুদায়িত্ব পালনের সময় পাইবেন তো? প্রার্থী বাছাই করিবার সময়ই আরও একটু সচেতন হইলে পারিতেন। জিতাইয়া আনিবার জন্য যেহেতু তাঁহাদের কলিকাতাবাসীর ভোটের প্রয়োজন হয় না, তাঁহারা নিজেরাই ব্যবস্থা করিয়া লইতে পারেন, তখন কিছু ‘কাজের লোক’-কে প্রার্থী করিলে আজ আর শোভনবাবুর উপর এমন পর্বত চাপিত না। দুর্জনে অবশ্য বলিবে, পুরসভায় কি লোকে মেয়র পারিষদ হইবার জন্য যায়? পুরসভার মাহাত্ম্য স্থানীয় সিন্ডিকেটে আরও বেশি ক্ষমতাবান হইয়া উঠিবার ছাড়পত্র হিসাবেই। শোভনবাবুর শুভানুধ্যায়ীরাও বলিতে পারেন, দফতর লইলেই কাজ করিতে হইবে, কে বলিল? কাজই যদি হয়, তবে কি শহরের রাজপথগুলি এমন উন্মুক্ত শৌচাগারে পরিণত হয়? না কি, শহরের বাড়িগুলি এমন জতুগৃহ হইয়া থাকে?

পদগুলি যদি নেহাতই গৌরবার্থে হয়, তাহা হইলে আর কথা না বাড়াইলেও চলে। কিন্তু, এখনও যাঁহারা পুরসভা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ নিরাশ হন নাই, তাঁহারা কিছু কাজ প্রত্যাশা করেন। নগরবাসীদের দাবিগুলি আকাশকুসুম নহে। নাগরিক পরিষেবার সেই প্রাথমিক চাহিদাগুলি পূরণ করা কলিকাতা পুরসভার পক্ষে নিতান্ত অসম্ভবও নহে। কাজগুলির দায়িত্ব কয়েক জন সক্ষম পুরপ্রতিনিধির মধ্যে বণ্টন করিয়া যদি মেয়র নজরদারির দায়িত্ব লন, তাহা হইলেই বহু দূর কাজ হয়। বস্তুত, মেয়রের একমাত্র কাজ নজরদারিই। কোন দফতর কেমন কাজ করিতেছে, বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হইতেছে কি না, তিনি খেয়াল রাখিবেন। সমস্যা হইলে দ্রুত ব্যবস্থা করিবেন। সেই মেয়রই যদি একা ১৩টি দফতরের মাথা হইয়া বসেন, তবে নজরদারির জন্য তাঁহার আর সময় কোথায়? অবশ্য, শোভনবাবু ভাবিতেই পারেন, তিনি নিমিত্তমাত্র। তাঁহার দলের সমস্তই যাঁহার অঙ্গুলিনির্দেশে চলে, পুরসভাও সেই ইচ্ছাময়ীর ইশারাতেই চলিবে। মনের কথাটি তেমন হইলে তিনি মেয়রের আসনটি প্রত্যাখ্যান করিলেই পারিতেন। সিংহাসনে না হয় এক জোড়া হাওয়াই চটিই থাকিত।

সমস্যাটি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নহে। কলিকাতা পুরসভারও নহে। সমস্যা তৃণমূল কংগ্রেস নামক দলটির রাজনৈতিক সংস্কৃতির। নেত্রী একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী। তাঁহার বিশ্বাস, সকলই তিনিই পারেন। ফলত, তিনিই করেন। দায়িত্ববণ্টনে অনীহা এবং অপারগতা প্রকৃত প্রস্তাবে নেতার অদক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবের প্রকাশ। কালীঘাটে অবশ্য এমন কথা ভাবাও পাপ। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিটিই চুঁয়াইয়া নীচের স্তরে নামিয়াছে। শোভন চট্টোপাধ্যায়রাও শিখিয়াছেন, কাহাকেও বিশ্বাস করিতে নাই। দায়িত্বের ফাঁক গলিয়া ক্ষমতার লৌহবাসরে কে কখন ঢুকিয়া পড়েন, কে জানে! অতএব, ১১৪ জনকে জিতাইয়া আনিবার পরেও তাঁহাকে নিজের হাতে ১৩টি দফতর রাখিয়া দিতে হয়। স্বাভাবিক। বরং, শোভনবাবু গুটিকয়েক দফতর অন্যদের হাতে ছাড়িয়া দিয়াছেন, ইহাই বিস্ময়ের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE