Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

জহর সরকার (‘আত্মবিস্মৃত ভারত যে সফ্‌ট পাওয়ার দাবি করে না’, ৪-৫) বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানা এলাকার জামালপুর গ্রামে প্রতি বছর বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে ‘ধর্মরাজের মন্দিরে’ যে উৎসব অনুষ্ঠিত হয় তার সম্পর্কে লিখেছেন যে, সেই উৎসবে ‘তরবারি, বন্দুক ও অন্যান্য নানা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে খেলাও হত। তবে সম্প্রতি পুলিশ সেটা বন্ধ করেছে।’ আমার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ অন্য রকম।

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

অস্ত্র নিয়ে উৎসব কিন্তু বন্ধ হয়নি

জহর সরকার (‘আত্মবিস্মৃত ভারত যে সফ্‌ট পাওয়ার দাবি করে না’, ৪-৫) বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানা এলাকার জামালপুর গ্রামে প্রতি বছর বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে ‘ধর্মরাজের মন্দিরে’ যে উৎসব অনুষ্ঠিত হয় তার সম্পর্কে লিখেছেন যে, সেই উৎসবে ‘তরবারি, বন্দুক ও অন্যান্য নানা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে খেলাও হত। তবে সম্প্রতি পুলিশ সেটা বন্ধ করেছে।’ আমার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ অন্য রকম।

গত ৩ মে বুদ্ধপূর্ণিমার পূর্বরাতে ধর্মরাজের পূজা ও উৎসব সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে জামালপুর যাওয়ার জন্য শিয়ালদা থেকে কাটোয়াগামী ট্রেনে পাটুলি স্টেশনে নামি। পাটুলি থেকে জামালপুর গ্রামের দূরত্ব ৩-৪ কিলোমিটার। সমস্ত পথটাই তখন ধর্মরাজভক্তদের দখলে চলে গেছে। বিভিন্ন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তাঁরা এসেছেন পার্শ্ববর্তী নানা গ্রাম থেকে। কোনও কোনও দলে রয়েছে ঢাক, ঢোল, কাঁসর, তাসা ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। বাজনার তালে তালে সারাটা পথ উদ্দাম ভাবে নাচতে নাচতে চলতে লাগলেন ভক্তের দল। তাঁদের অনেকের হাতে রয়েছে ধারালো তরবারি, নানা আকৃতির খড়্গ, ছুরি ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র। কারও কারও হাতে রয়েছে লাঠিসোঁটা। প্রায় সারাটা পথ ধরে উন্মত্তের মতো দমাদম চলতে লাগল লাঠি খেলা ও অস্ত্রের ঝনঝনানি। প্রতিটি ছোট ছোট দলের সঙ্গে রয়েছে এক বা একাধিক ভেড়া ও ছাগল। যাদের বলি দেওয়া হবে পর দিন অর্থাৎ বুদ্ধপূর্ণিমার দিন সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। জানা গেল, প্রতি বছর এই দিনে প্রায় হাজারখানেক ছাগল ও ভেড়া বলি দেওয়া হয়। রাস্তার দু’পাশে বাড়িগুলির ছাদে বারান্দায়, জানালায় এবং পথিপার্শ্বে তখন উৎসুক পথচারীদের ভিড়।

পথ চলতে চলতে ভক্তদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জেনে বিস্মিত হয়েছিলাম যে, অস্ত্রশস্ত্রগুলির মধ্যে নাকি পেটোজাতীয় হাতবোমা ও দেশি পিস্তলধারীদেরও ভক্তদের ভিড়ে দেখতে পাওয়া যায়। মদ্যপ ভক্তের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। মাদকের নেশায় এই সব মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে বড় ধরনের গণ্ডগোলের ঘটনা নাকি ইতিপূর্বে অনেক বারই ঘটেছে। সম্প্রতি পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি পাওয়ায় গণ্ডগোলের ঘটনা কমলেও নানা রকম নিষিদ্ধ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উৎসবে যোগদানের ঘটনা বন্ধ হয়নি। এ বার উৎসব স্থানে দেশি পিস্তল ও পেটোজাতীয় হাতবোমা–সহ উন্মত্ত দাপাদাপির ঘটনাও চোখে পড়েছে। পুলিশ থাকলেও তাঁদের সংখ্যা নিতান্তই কম এবং তাঁরা হয়তো কতকটা নিরুপায় হয়েই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।

মহামানব গৌতম বুদ্ধ শান্তি, মৈত্রী, করুণার প্রতীক রূপে বন্দিত বিশ্বমানবের ইতিহাসে। তাঁর জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ ঘটেছিল এই বুদ্ধপূর্ণিমার দিনটিতে। গৌতম বুদ্ধের অহিংসা ও সর্বজীবের প্রতি কল্যাণকর উদার মতবাদ প্রাচীন ভারতের বুকে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ধর্মের নামে নানা সামাজিক কুপ্রথা, আচারবিচার, যাগযজ্ঞ ও যথেচ্ছ পশুবলি প্রথা অনেকটা দূর করতে সক্ষম হয়েছিল। জামালপুরে ধর্মরাজের এই উৎসব কবে থেকে চলছে এবং কী ভাবে ধর্মের নামে এই রকম নির্বিচার পশুবলি প্রথা চালু হল তা আজ নিরূপণ করা বেশ শক্ত। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এই উৎসব আড়াইশো-তিনশো বছরেরও বেশি প্রাচীন। তবে বুদ্ধপূর্ণিমার দিনেই এই ঘটনা যেন বুদ্ধের অবমাননার চরম দৃষ্টান্ত বহন করে।

রাহুল বড়ুয়া। কলকাতা-৭৪

চলচ্চিত্র ‘শিল্প’

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের (‘ইনডাস্ট্রি বাঁচানোর জন্য দেব-জিতের সঙ্গে বসতে চাই’, সাক্ষাৎকার, আনন্দ প্লাস, ১৭-৪) মানসিকতা প্রশংসার্হ। সারদা-উত্তর বাংলা চলচ্চিত্রের অবস্থা খুবই করুণ। প্রায় ছ’হাজার কলাকুশলীর রোজগার থমকে গেছে। ইতিমধ্যে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় কেউ কেউ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। দু’এক জন আত্মহত্যা করেছেন। লগ্নি প্রায় বন্ধ। স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা আজ নিরন্ন। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিপর্যস্ত।

প্রসেনজিৎবাবুর সঙ্গে আমি একমত যে, মূল ধারার ছবি না হলে ইনডাস্ট্রি বাঁচবে না। চলচ্চিত্রও আদতে একটা প্রডাক্ট। আর পণ্য যদি খদ্দের না কেনে তা হলে মালিক দেউলিয়া হন। তাঁর আর উৎসাহ থাকে না।

একটা চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে টেকনিশিয়ানদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রসেনজিৎবাবুর পরিবেদনার সঙ্গে এক জন বরিষ্ঠ সহকারী পরিচালক হিসাবে একাত্ম বোধ করছি। কত কষ্ট করে একটা ছবি টেকনিশিয়ানরা গড়ে তোলেন। ছবির প্রিমিয়ারে আমাদের সে কথা মনে পড়ে না। আসলে টেকনিশিয়ানরা অনেকটা রাজমিস্ত্রির মতো। শ্রমে যত্নে মেধায় একটা সুন্দর বাড়ি তৈরি করেন। কিন্তু গৃহপ্রবেশে তাঁদের গৃহস্বামী আর মনে রাখে না। নিমন্ত্রণ তো দূরের কথা।

শিবনাথ বিশ্বাস। সহসভাপতি, সহকারী চিত্র পরিচালক গিল্ড, টালিগঞ্জ, কলকাতা-৪০

ডাকঘরে দুরবস্থা

কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের সংখ্যা বাড়ানো। প্রতিদিন এই সব কাজের জায়গায় অসম্ভব ভিড় হয়। মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কর্মীদের উপরও চাপ পড়ে বেশি।

রাজনীতিক বা গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের এ সব কাজ করার জন্য লোক থাকে। অসংখ্য মানুষকে এই দুরবস্থার শিকার হতে হয় প্রতিদিন। তাদের কথা বিবেচনা করে সরকার এ দিকে দৃষ্টি দিন।

গোপাল চক্রবর্তী। কলকাতা-৩১

স্বর্গদ্বারেই শ্মশান কেন

পুরীর সমুদ্রতটে স্বর্গদ্বার শ্মশানের দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিমতলা শ্মশানে যে ভাবে দূষিত ধোঁয়া জলের মধ্য দিয়ে ফিল্টার করা হয়, সেই ব্যবস্থা রূপায়ণের কথা বলেছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত (‘দূষণ ঠেকাতে এ বার দোসর হবে পুরী ও নিমতলা’, ৬-৫)। এমনিতে এটা খুবই ভাল প্রস্তাব। কিন্তু একটা ব্যাপার আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। সত্যিই কি এই শ্মশানটি সমুদ্রের ধারে রাখার প্রয়োজন আছে? পুরী শহরের জন্য সমুদ্র থেকে দূরে নতুন শ্মশান, ইলেকট্রিক চুল্লি সমেত তৈরি করা যায় না?

জানি না, এ দেশে বা বিদেশে এ রূপ সমুদ্রতীরবর্তী দাহভূমি আর আছে কি না। কোনও ধর্মীয় সংস্কার থাকলে তা কাটানোর চেষ্টা করাও জরুরি নয় কি?

প্রভাতকুমার সিংহরায়। হাওড়া-৩

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE