Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

সুন্দরবনের মানুষ মাছ চাষই করবে?

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০০:১১
Share: Save:

সুন্দরবনের মানুষ মাছ চাষই করবে?

সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ তুষার কাঞ্জিলাল লিখেছেন, ‘সুন্দরবন নিয়ে এখন সবাই জ্ঞান দিচ্ছে।’ (২৭-৫) সুন্দরবন নিয়ে সমীক্ষা ও গবেষণার ফল যে কেবল সুন্দরবনের সমস্যা নিরসনে ব্যবহৃত হবে তার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। অন্য দিকে এগুলি যে প্রায় সবই বাস্তব সম্পর্ক রহিত, তা বলা যাবে না। পরন্তু, সরকারি সংস্থা হিসেবে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ-এর সমীক্ষা ‘টেকনো ইকনমিক সার্ভে’-র ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যসমূহকে কাজে লাগিয়েই আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএফএডি থেকে প্রথম বড় মাপের অর্থসাহায্য পাওয়া যায়, যার সাহায্যে সু্ন্দরবনের পরিকাঠামো নির্মাণের নতুন দিগন্ত খুলে যায়। এ কথা অনেকটাই সত্য, বেসরকারি সংস্থার আন্তর্জাতিক মানের সমীক্ষাকে কর্মপ্রকল্পে রূপায়িত করার মতো সরকারি বা প্রশাসনিক সদিচ্ছার প্রভূত অভাব আছে। যার ফলে ওই সব পরিকল্পনা রূপায়ণে আর্থিক সংস্থানে তেমন প্রয়াস দেখা যায় না।

ওই নিবন্ধের পরবর্তী অংশে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে যা বলা হয়েছে, তা ইতিমধ্যে বহুশ্রুত। প্রাকৃতিক অবস্থার পরিবর্তন জনিত কারণে সমুদ্র সন্নিহিত বদ্বীপ সমূহের নিম্নাঞ্চল যে বিপদাপন্ন, তা বহুচর্চিত এবং অনস্বীকার্য। তবে সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্তির কিংবা সংখ্যা হ্রাসের ক্ষেত্রে প্রশাসন কিংবা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কোনও ভূমিকা নেই বললে সত্যের অপলাপ হবে। এক সময় সরকারি কোষাগারে অর্থ জোগান দিতে সুন্দরবনের সবচেয়ে মূল্যবান বৃক্ষসমৃদ্ধ বনভূমির বৃহদংশ নির্মূল করা হয়েছে। ফলে সুন্দরবনের অনেকাংশ ‘স্যালাইন ব্ল্যাঙ্ক’ বা অত্যন্ত লবণাক্ত ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এবং সেই অংশগুলি বৃক্ষশূন্য। অন্য দিকে, বনজ ও জলজ সম্পদের অতিরিক্ত ও বেআইনি আহরণ চলতে থাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্যহীন অবস্থার মুখোমুখি। আর্থসামাজিক অবস্থার দোহাই দিয়ে এই বিষয়গুলিকে উপেক্ষা করা যায় না।

ভিতরের আঘাতের কথায় ১০২টি দ্বীপের মধ্যে ৫৬টি দ্বীপের জঙ্গল হাসিল করা হয়েছিল বলা হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা ৫৪। আর কাঞ্জিলাল মহাশয়ের অভিজ্ঞতায় সুন্দরবনের মানুষ ‘সুন্দরবনের উপর আস্থা হারাচ্ছে, তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই দ্বীপগুলিতে বাস করতে পারবে, এই বিশ্বাস ক্রমেই তাদের চলে যাচ্ছে।’ কারণ হিসেবে যা উল্লেখ করেছেন তা একান্তই একপেশে। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। সুন্দরবনে ঝড়ঝঞ্ঝা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন কিছু নয়। আর এই এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা যে রাজ্য তথা দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় পশ্চাৎপদ, তা সর্বজনবিদিত। তা হলে হঠাৎ এমন কী ঘটনা ঘটল যাতে সুন্দরবনের মানুষ দল বেঁধে এই অঞ্চল ত্যাগ করছে। এর পিছনে সাম্প্রতিক কারণ ২০০৯-এর সামুদ্রিক ঝড় ‘আয়লা’ বলেই চিহ্নিত। বিষয়টি এত সহজ সরল নয়।

এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, ষাট ও সত্তরের দশকের আর্থসামাজিক দুরবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন ঘটেছে। কৃষি উৎপাদনবৃদ্ধি, যোগাযোগ ও অন্যান্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন, শিক্ষা বিস্তার প্রভৃতির কারণে এবং সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক নানা প্রকল্পের কল্যাণে সুন্দরবনের মানুষ আর্থিক দুরবস্থা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। যে সমস্যাটি বার বার উঠে আসছে তা হল, সুন্দরবনের কর্মক্ষম বহু মানুষ বাইরে চলে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সেটাই স্বাভাবিক। তুষারবাবু স্বীকার করেই নিয়েছেন সুন্দরবনের একফসলি জমির উৎপাদনশীলতা সীমাবদ্ধ। ‘বড় শিল্প এখানে হবে না, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প থেকে আয় বাড়ানোর সুযোগ নেই।’ তা হলে শিক্ষিত কর্মক্ষম যুবকযুবতীরা কি এখানেই কর্মহীন অবস্থায় দিনাতিপাত করবে! কিংবা চাষবাস, মাছচাষ আর প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণেই নিযুক্ত হবে? এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পছন্দ উপযুক্ত কাজের সন্ধানে ছড়িয়ে পড়া। অন্য দিকে, সচ্ছল পরিবারগুলি যদি শহর বা শহরতলিতে দ্বিতীয় ঠিকানা খুঁজে নেয় কিংবা কোনও শহুরে বৃত্তি গ্রহণে সচেষ্ট হয়, তা কি অনাস্থার পরিচায়ক হবে? মাইগ্রেশন তো শুধু সুন্দরবনেই ঘটছে না।

প্রতিকূলতাকে সঙ্গে নিয়েই সুন্দরবনের মানুষের নিয়ত সংগ্রাম। আর হার না মানার প্রমাণ এ বছর মাধ্যমিক উত্তীর্ণ পাথরপ্রতিমার এক ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বর ৬৫৩। বাড়ি বাড়ি মাছ ফেরি করা পিতার সন্তান এই যোগ্যতার নিরিখে ভবিষ্যতে শহরবাসী হলে সেটা কি জন্মভূমির প্রতি আস্থাহীনতা বলে বিবেচিত হবে?

সুভাষচন্দ্র আচার্য। সদস্য সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার

যোগ্যতার দাবি

সম্প্রতি ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের নির্দেশে ভারতীয় ফিল্ম এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-এর গভর্নিং কাউন্সিলে গজেন্দ্র চৌহান এবং অন্য চার সদস্যের নিয়োগ আমাদের বিস্মিত ও স্তম্ভিত করেছে। আমরা স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই, কোনও বিশেষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমাদের কোনও অভিযোগ বা বিদ্বেষ নেই। কিন্তু আমরা মনে করি, পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট-এর মতো একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিষয়টি এবং এর বিশিষ্ট ও বর্ণময় ইতিহাসের একটা সাযুজ্য থাকা উচিত। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালন দক্ষতা ও শিক্ষাগত গুণমান তার সর্বোচ্চ নেতৃত্বের উচ্চ যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল। আমরা মনে করি, সেই যোগ্যতা শ্রীচৌহানের নেই।

সম্প্রতি ভারত সরকার এফটিআইআই-কে ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’ বলে ঘোষণা করেছেন। এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য রয়েছে এবং এই ধরনের নিয়োগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠানের নিজের হাতেই থাকা উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মন্ত্রকের একতরফা সিদ্ধান্ত এফটিআইআই-এর স্বায়ত্তশাসন অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

যে প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব মৃণাল সেন, আদুর গোপালকৃষ্ণন, শ্যাম বেনেগাল বা ইউ আর অনন্তমূর্তি-র মতো পথিকৃৎরা দিয়েছেন, তার শীর্ষপদে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ করতে মন্ত্রককে অনুরোধ জানাচ্ছি।

ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরি, ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়, সুপ্রিয় সেন, অর্ঘ্যকমল মিত্র, শীর্ষ রায়, অনীক দত্ত, অতনু ঘোষ, অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরি, সুমন মুখোপাধ্যায়, শেখর দাস, সৌরভ ষড়ঙ্গি, অনন্যা চট্টোপাধ্যায় চক্রবর্তী, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, সুমন ঘোষ, কৌশিক সেন, বাসব মল্লিক। কলকাতা-১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE