ভাস্কর বুয়া বাখলে। শিল্পী: বিমল দাস
এখন হলে?
গোমাংস ভক্ষণ ও হিন্দু ধর্মের চর্যাচর্য বিষয়ে দেশ জুড়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে দু’দশক আগে দেশ পত্রিকায় (৩ জুলাই, ১৯৯৩) প্রকাশিত কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অনবদ্য রচনা থেকে একটি কাহিনি স্মরণীয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্ব বড়োদরার মহারাজের সভাগায়ক উস্তাদ ফয়েজ মহম্মদ খানের কাছে গান শিখতে এল একটি মহারাষ্ট্রীয় কিশোর ব্রাহ্মণ। ভাস্কর বাখলে। তখনকার রীতি অনুসারে খান সাহেবের পা টেপা থেকে ঘরের কাজ, এমনকী রান্নাবান্নাও করতে হত ভাস্করকে। হঠাৎ এক দিন খান সাহেব বললেন, ‘আজ আমার বড়ই গোশ্ত খাবার ইচ্ছা হচ্ছে। তুই বাজার থেকে নিয়ে আসতে পারবি?’ কট্টর মরাঠি ব্রাহ্মণ সন্তান ভাস্কর গোশ্ত তো দূরস্থান, পেঁয়াজ রসুনও হাতে নাড়েননি কখনও। তবু একটু চুপ থেকে বললেন, ‘আজ্ঞে উস্তাদ যখন বলছেন, অবশ্যই পারব’। থলে নিয়ে বাজার থেকে মাংস কিনে ফেরার পথে সমবয়সি মরাঠি বন্ধুরা চেপে ধরল, ‘তুই মোছলমান গাইয়ের চেলা হয়েছিস, তাঁর খিদমত করিস জানতাম। তা এ সব ধরেছিস তা তো জানতাম না। শেষ অবধি ব্রাহ্মণের বেটা হয়ে ধর্মভ্রষ্ট হলি?’। ভাস্কর বলল, ‘না ভাই, আমি জীবনে এ সব খাইনি। চোখেও দেখিনি। উৎকট গন্ধে আমার বমি আসছে। কিন্তু আমার গুরু পিতার চেয়েও বড়। বাপ তো আমাকে পৃথিবীতে এনেছেন, বাল্যকালে খেতে পরতে দিয়েছেন। উস্তাদ আমাকে বিদ্যাদান করছেন যার চেয়ে বড় জিনিস পৃথিবীতে নেই। তাঁর ইচ্ছা হয়েছে, আমায় আদেশ করেছেন, তা পালন না-করলে আমার সব বিদ্যা বৃথা হয়ে যাবে।’
অতঃপর বাড়ি ফিরে খান সাহেবের তদারকিতে ভাস্কর মাংস রাঁধতে বসলেন। রান্না খানিক এগোনোর পর খান সাহেব জল ঢেলে মাংস বসিয়ে বললেন, ‘এই বার আস্তে আস্তে বদবু যখন দূর হয়ে যাবে, খুশবু আসতে শুরু করবে তখন আমায় ডাকবি।’ রান্না শেষ হল। সেই মাংস দিয়ে চাপাটি খেয়ে গুরু ডাকলেন শিষ্যকে। ‘বাখলে, আজ আমি তোর গুরুভক্তির পরীক্ষা নিচ্ছিলাম। না হলে তোকে দিয়ে গোশ্ত রাঁধাবার মতো গুনাহ্ আমি করতাম না। আমি তোকে দিল খুলে দোয়া দিচ্ছি, তোর গানে ওই মাংস রান্নার মতোই যা কিছু বদবু আছে সব দূর হয়ে শুধুই খুশবু আসবে। তুই ভারতবর্ষের গানের জগতের চোটিতে বসবি’। কুমারপ্রসাদকে যিনি এই কাহিনি শুনিয়েছিলেন সেই কিংবদন্তি উস্তাদ নিসার হুসেন খান শেষ কালে বলেছিলেন, ‘সে যুগে এক মরাঠি ব্রাহ্মণ সন্তানের পক্ষে তার সংস্কারবিরুদ্ধ এবংবিধ কাজ করা যে কত বড় গুরুভক্তির পরিচয় তা আজকালকার ব্রাহ্মণরা কী বুঝবে? আজকালকার শিষ্যরাই বা এ গল্পের মাহাত্ম্য কি হৃদয়ঙ্গম করবে’?
ভয় হয়, আজকের দিনে হলে হয়তো গুরু শিষ্য উভয়কেই প্রাণ হারাতে হত। দু’একটি গরু বাঁচলেও ভারতীয় মার্গসংগীতের দুই দিকপাল ফয়েজ মহম্মদ খান এবং ভাস্কর বুয়া বাখলে আর পৃথিবীর আলো দেখতে পেতেন না। এতে হিন্দু তথা ভারতীয় সংস্কৃতির বিজয়গর্ব ঘোষিত হত, না কি ভাস্কর বুয়া যা করেছিলেন তার মধ্যেই ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মর্মবাণী নিহিত ছিল?
দেবাঙ্গন বসু। চন্দননগর, হুগলি
আয়বৃদ্ধির হার ঠিক কত
‘অচ্ছে দিনের স্বপ্ন ফেরি, ফের প্রশ্ন বাস্তবতা নিয়ে’ প্রতিবেদনে (২২/১১) আপনারা লিখেছেন, এই বছর প্রথম ত্রৈমাসিকে ভারতীয় অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৭.১ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭.৪ শতাংশ। এই বৃদ্ধির হার কিন্তু নতুন হিসেবে। সেই পদ্ধতিতে বৃদ্ধির হারের অঙ্কটি বেড়েছে। যেমন, পুরনো হিসেবে ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে ভারতের আয়বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৭ শতাংশ। সরকারি সূত্রই বলছে, নতুন হিসেবে সেই হার বেড়ে ৬.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যদি ধরে নেওয়া যায় যে নতুন ও পুরনো হারের অনুপাতটি অপরিবর্তিত রয়েছে, তবে ২০১৫-১৬ ও ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৪.৮৪ শতাংশ ও ৫.০৪ শতাংশ হবে। অর্থাৎ, অরুণ জেটলির বৃদ্ধির হার শুধু কমেনি, নিচু হার থেকে আরও নিচু হয়েছে। তিনি যখন দাবি করবেন যে হার কমলেও সাত শতাংশের ওপরে থাকাই যথেষ্ট কৃতিত্বের, তখন তাঁকে এই হিসেবটি এক বার মনে করিয়ে দেওয়া ভাল।
রতন সেন। বালি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy