Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

শিক্ষক এবং যথার্থ শিক্ষা

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৫৪
Share: Save:

শিক্ষক এবং যথার্থ শিক্ষা

মহীতোষ মণ্ডলের রচনাটি (‘আমি দলিত’, রবিবাসরীয় ২৪-১) পড়ে ব্যথিত ও বিস্মিত হলাম। শিক্ষা প্রসারের মধ্য দিয়ে আমরা আদৌ এগোতে পারছি, না কি এখনও জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে বয়ে বেড়াচ্ছি জাতপাত, অন্ধ কুসংস্কার দিয়ে ঘেরা মনুষ্যত্বের পক্ষে অসম্মানজনক সময়টাকে? এক জন শিক্ষার্থী যখন লেখাপড়া শেখেন, লেখেন কিংবা পরীক্ষা দেন তখন তাঁর জ্ঞানের মূল্যায়ন কি তাঁর জাত বা ধর্মের ভিত্তিতে হয়? শুধু জাতপাতই নয়, সামাজিক বা অর্থনৈতিক কোনও রকম অবস্থার ভিত্তিতেই হয় না, অন্তত হওয়া উচিত না। একমাত্র বিচার্য হল সেই নির্দিষ্ট বিষয়ে ছাত্র বা ছাত্রীটির অধিগত জ্ঞান। কিন্তু তবুও তাঁকে শুধুমাত্র জাতপাতের ভিত্তিতে হেনস্থা হতে হয় নিজেরই শিক্ষায়তনে!

এই সব তথাকথিত নামী শিক্ষায়তনে যাঁরা সত্যিকারের মানুষ গড়ার আদর্শ নিয়ে শিক্ষকতা করছেন বলে ভাবা হচ্ছে তাঁদের অনেকের নিজেদের মানবতার প্রাথমিক শিক্ষাটুকুরই বেশ অভাব আছে বলে বোধ করছি। যাঁরা মানুষকে এবং তদুপরি মানবতাকে অনায়াসেই অপমান করতে পারেন, সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে যাঁদের বিন্দুমাত্র বাধে না, তাঁরা কি আদৌ শিক্ষকতার জন্য উপযুক্ত?

যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রীমণ্ডল অধ্যাপনা করছেন সেখানকার কিছু ছাত্রছাত্রীর আচরণ আরও বিস্মিত করে। তাঁদের শিক্ষক কী পড়াচ্ছেন, কেমন পড়াচ্ছেন, সেগুলোয় প্রাধান্য না দিয়ে তাঁর জাতপাত ধর্ম নিয়ে ভাবছেন। এঁদের অনেকেই তথাকথিত উচ্চবর্ণের সম্ভ্রান্ত পরিবারের বলে দাবি করেন। কিন্তু এ হেন আচরণে তাঁদের জাত বা বর্ণ বা শিক্ষা বা রুচিবোধের উচ্চতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না কি? শিক্ষাগুরুর নামে কুকুরের নাম রাখা কিংবা কুকুরকে শিক্ষাগুরুর নামে ডাকা, এমনকী তফসিলিভুক্তদের কুকুর অপেক্ষা নিকৃষ্ট জীব মনে করা কি উৎকৃষ্ট মানসিকতার পরিচায়ক?

আপনাদের ধন্যবাদ, গত কয়েক দিন ধরে এমন একটি বিষয়কে প্রচারের আলোয় আনার জন্য। বিভিন্ন সংবাদপত্র, বৈদ্যুতিন প্রচারমাধ্যমগুলি এ বিষয়ে সদর্থক ভূমিকা নিলে অনেককেই প্রতি দিন প্রতি মুহূর্তে অতটা অপমান, মানসিক ভীতি ও যন্ত্রণার মধ্যে দুর্বিষহ ভাবে বাঁচতে হবে না কিংবা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রোহিত ভেমুলার মতো অকালে মরতে হবে না।

রণজিৎ কুমার মণ্ডল। প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক, কলকাতা-১৫০

॥ ২ ॥

রোহিত ভেমুলার ঘটনাটি রাজনৈতিক ও মিডিয়ার প্রচারে অন্য মাত্রা পেয়েছে। ছাত্রকে ছাত্র হিসেবেই চিহ্নিত করা উচিত, এবং দোষী ছাত্রের বিচার ও শাস্তি তার অপরাধের গভীরতা অনুসারে হওয়া প্রয়োজন। এর জন্য আইন আদালত ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন ভাবে কাজ করবার পরিবেশ দিতে হবে। পরিবর্তে বিরামহীন ভাবে বিভিন্ন রাজনীতিক ঘোলা পুকুরের জলে লাভজনক মাছ তৈরির ও ধরার প্রচেষ্টায় মেতে উঠেছেন। অপ্রয়োজনেও দলিত কার্ড যখন তখন ব্যবহার করছেন। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যমুখী এবং গঠনমূলক সমাধান থেকে তাঁরা নিজেদের দূরেই রাখতে চান।

মহীতোষবাবুর ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা মর্মস্পর্শী। কিন্তু রোহিতের কাহিনির সূত্রপাত এবং প্রবাহ আধুনিক কালের জটিলতা থেকে উৎসারিত। নিয়ম লঙ্ঘন ও উপেক্ষা করব আর সাজা পাব না? পেতে গেলেই ‘আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে’, ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’, ‘আমার উন্নতি সহ্য হয় না’, ‘টোকাটুকি করতে দিতে হবে’, ‘অনিয়মই নিয়ম হবে’ ইত্যাদি। এর পর আছে ঘেরাও এবং বর্বরসুলভ অসভ্যতা ও গালিগালাজ— আরও কত কী। চরম সঙ্কটে পুলিশের সাহায্য চাইলেই আপনি ক্রিমিনাল।

আমি শহরের ছেলে এবং জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ। আজ বরিষ্ঠ নাগরিক। বাল্যকালে প্রতি গ্রীষ্মে আমার পিসিমার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি গ্রামে গিয়ে থাকতাম। পিসতুতো মাসতুতো ভাইবোনেদের সমাগমে আনন্দমুখরিত। বাগানের পেয়ারা সফেদা আঁশফল আর পুকুরের মাছ, তৎসহ তারা-ঘেরা রাত্তির। দিনগুলি ফিরে দেখতে আজও ভাল লাগে। কিন্তু অপমানকর ঘটনাগুলোর দাগও মনকে নাড়া দিয়েছিল। আমি শহরের ছেলে, মাঝে মাঝে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি, সাঁতার কাটতে জানি না, সাইকেলে উঠতে ফেল, গাছে উঠতে অপারগ। নেগেটিভ জেদের বশে এগুলি আমার আর শেখা হয়ে ওঠেনি। গ্রাম ও শহরের ব্যবধান থেকেই যায়।

গ্রামের কোনও মেধাবী ছাত্র, এমনকী সাধারণ স্কুল বা জেলা স্কুলের ছাত্র যদি লা মার্টিনিয়ার, সেন্ট জেভিয়ার্স, দিল্লির সেন্ট স্টিফেনস-এর মতো প্রতিষ্ঠানে পড়তে গিয়ে থাকে, তাকেও এইরূপ বৈপরীত্য অতিক্রম করতে হবে এবং তারা সেটি করেই নিজেদের জীবনে বড় হয়েছে। এই সব ক্ষেত্রে জাতপাতের প্রসঙ্গ অবান্তর অপ্রাসঙ্গিক। এবং আধুনিক বিজ্ঞান ও যোগাযোগের কল্যাণে এই বৈপরীত্য ক্রমশ কমে আসছে। সুতরাং আশা রাখব।

শ্যামল চক্রবর্তী। কলকাতা-৮২

ভ্রম সংশোধন

ভুল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের মফস্সল শহরে বাইক বাহিনীর দাপট বিষয়ে প্রকাশিত একটি চিঠির (‘ভয়ানক অত্যাচার’, সম্পাদক সমীপেষু, ৩-২) সঙ্গে যে ছবিটি ছাপা হয়েছিল, তার সঙ্গে চিঠির বিষয়টির কোনও সম্পর্ক নেই। ছবিটি ‘ইস্টার্ন বুলস’ সংস্থার একটি অনুষ্ঠানের ছবি। সমাজসচেতন কিছু বাইক-চালক এই সংস্থা তৈরি করেছেন। যানবাহন চালানোর সময় চালক যাতে নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখেন, সেই বিষয়ে ক্রমাগত সচেতনতা বৃদ্ধি করাই তাঁদের লক্ষ্য। এই সংস্থার সদস্যরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পথ-দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং পথ-নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজই করে থাকেন। এঁরা কলকাতা পুলিশ ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে বিভিন্ন উপলক্ষে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে যোগ দিয়েছেন।

এই সংস্থার কয়েক জন সদস্যের একটি ছবি (উপরে পুনঃপ্রকাশিত) ভুলক্রমে উপরোক্ত চিঠিটির সঙ্গে ছাপা হয়েছে। এই সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ভুলটির জন্য আমরা লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE