Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

ধূমপায়ীদের মারণ নেশার থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যে সিগারেট, পান, গুটখা, জরদা ইত্যাদির প্যাকেটে জনৈক মানুষের রোগগ্রস্ত মুখাবয়বের ছবি ছাপা থাকে। ছবিটি নেশাড়ু মানুষদের জন্য একটি জরুরি সতর্কবার্তা, সন্দেহ নেই।

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

শিশুরা তো ভয় পাবে

ধূমপায়ীদের মারণ নেশার থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যে সিগারেট, পান, গুটখা, জরদা ইত্যাদির প্যাকেটে জনৈক মানুষের রোগগ্রস্ত মুখাবয়বের ছবি ছাপা থাকে। ছবিটি নেশাড়ু মানুষদের জন্য একটি জরুরি সতর্কবার্তা, সন্দেহ নেই। কিন্তু শিশুদের পক্ষে একটি মারাত্মক দৃশ্যদূষণ। প্রায়শই দেখা যায় পান, সিগারেট, মুদি, স্টেশনারি দোকানে এই জাতীয় ভয়াবহ দৃশ্য সংবলিত প্যাকেট চোখের সামনে সাজানো অথবা ঝুলিয়ে রাখা হয়। বোঝাই যায় এ ক্ষেত্রে সামাজিক বার্তা প্রচারের চাইতে পণ্যবিক্রয়ের উদ্দেশ্য অধিকতর বিবেচ্য। কিন্তু বিবেচনা করা শ্রেয়, বাচ্চাদের, বিশেষ করে শিশুমনে এই প্রকাশ্য দৃশ্য প্রবল আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট।
এ ক্ষেত্রে যদি সিগারেট, পান, গুটখা, জরদা ইত্যাদির প্যাকেট দৃষ্টির বাইরে সরিয়ে রাখা হয়, তা হলে ভাল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

অজিতেশ নাগ

কলকাতা-৪৭

• বামের দলবদল

২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক পরাজয়ের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন দশকের বামফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটে। তার পর ২০১৩, ’১৪ ও ’১৬ সালে যথাক্রমে পঞ্চায়েত, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনেও বামফ্রন্ট নিদারুণ ভাবে ব্যর্থ হয়। এই ধারাবাহিক নির্বাচনী ব্যর্থতার সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে বামপন্থী জনপ্রতিনিধিদের দলত্যাগের ঘটনা। লাল জার্সি খুলে কখনও তাঁরা সবুজ জার্সি পরছেন, কখনও গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করছেন।

এই দলত্যাগীদের তালিকায় সর্বস্তরের সদস্যরাই রয়েছেন। তবে লক্ষণীয় বিষয়, সাধারণ জনপ্রতিনিধি কিংবা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও পুরসভার চেয়ারম্যানরা দল ছাড়লেও পদ ছাড়ছেন না। অর্থাৎ এঁরা সিপিআইএম, সিপিআই, আরএসপি কিংবা ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি অথবা জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করছেন। কিন্তু আইনের ফাঁকফোকরের সাহায্যে পদটা ধরে রাখছেন। এটা চূড়ান্ত অনৈতিক ও সুবিধাবাদী রাজনীতির নিদর্শন। বামপন্থী দলের জনপ্রতিনিধি মূল্যবোধ ও আদর্শের মাথা খেয়ে এ ভাবে দলবদল করতে পারেন, কিছু দিন আগেও ভাবা যেত না।

এ ক্ষেত্রে যে কারণগুলো দায়ী, সেগুলো হল: এক, পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় ফেঁসে যাওয়া ও হয়রান হওয়ার ভয়। দুই, শাসক দলের নেতাকর্মীদের হাতে আক্রান্ত ও অপদস্থ হওয়ার ভীতি। তিন, এলাকার উন্নয়নে প্রশাসনিক অসহযোগিতার আশঙ্কা। কিন্তু এটি মুদ্রার একটি পিঠ মাত্র। অন্য পিঠে রয়েছে বামপন্থার অবক্ষয় তথা বামদলের নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের লোভ, ক্ষমতার প্রতি মোহ ও ভোগবাদী মানসিকতা। আসলে এখন বামপন্থী রাজনীতিতে মতাদর্শের জোরটাই আর নেই। বর্তমানে বামপন্থীরা কঠিন পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সৎ সাহসটাই হারিয়ে ফেলছেন। তথাকথিত বুর্জোয়া দলের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বামফ্রন্টের প্রতিনিধিদের ফারাকটা ক্রমশ কমে আসছে। বামপন্থী সাংসদ-বিধায়করা আগেও দলত্যাগ করেছেন। কিন্তু দল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা পদত্যাগ করেছেন। ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের অঙ্ক কষেননি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলের অবস্থান অথবা নীতির সঙ্গে সহমত পোষণ করতে না পেরে তাঁরা দল ছেড়েছেন। সেই সিদ্ধান্তে ঝুঁকি থেকেছে। সত্যি বলতে, তখন অধিকাংশ দলত্যাগী বাম জনপ্রতিনিধিদের ‘পলিটিকাল কেরিয়ার’ই কার্যত শেষ হয়ে গেছে।

এখন ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্যই অনেকে দলত্যাগ করছেন। এমনকী পরের নির্বাচনে বামপ্রার্থী হয়ে জয়লাভের সম্ভাবনা নেই, বুঝতে পেরে কেউ কেউ আগেভাগেই দলবদল সেরে রাখছেন। প্রশ্ন হল, এমন নিম্নমানের চেতনা ও সুবিধাবাদী মানসিকতার লোকেরা বাম রাজনীতিতে সর্বোচ্চ স্তরের জনপ্রতিনিধি হন কী করে!

পঞ্চায়েত ও পুরসভার নির্বাচনে বামপন্থীরা অনেক দিন আগে থেকেই সস্তা রাজনীতি করছেন। যে কোনও মূল্যে ভোটে জেতা ও বোর্ড দখল করাই গড়পড়তা বাম নেতৃত্বের লক্ষ্য। জয়লাভ নিশ্চিত করতে অনেক সময় বাহুবলী বা বিত্তশালী ব্যক্তিকে বামফ্রন্টের প্রার্থী করে দেওয়া হয়। এরা হয়তো কোনও দিন রাজনীতিই করেননি এবং বাম-ডান রাজনীতির ফারাকও বোঝেন না। কিন্তু প্রার্থী হয়ে দলের ভোট আর ব্যক্তিগত প্রভাবে জিতে যান। নির্বাচিত হওয়ার পরও এঁদের অনেকেই বাম ঘরানার রাজনীতি রপ্ত করেন না এবং পার্টির সদস্যপদও পান না। ফলে এঁদের দলীয় অনুশাসন মেনে চলার বাধ্যবাধকতাও থাকে না। সে জন্য এঁদের দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যধারার মধ্যে বামপন্থার প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায় না।

ব্যক্তিগত ভাবে এঁরা অনেকেই ভোগবাদী জীবনাচরণ করে থাকেন এবং নিজস্ব সম্পদ বৃদ্ধির জন্য পদের অপব্যবহার করতে দ্বিধাবোধ করেন না। শাসকদলের ছত্রছায়ায় থেকে নিজেদের অপরাধ ও দুষ্কর্মের শাস্তি এড়ানোর জন্য এঁরা এখন দলবদল করছেন। তা ছাড়া এঁদের রাজনৈতিক শিকড় গভীরে প্রোথিত না হওয়ায় অধিকতর ব্যক্তিগত সুযোগসুবিধা ভোগ করার উদ্দেশ্যে দলবদল করাকে এঁরা একটা মামুলি ব্যাপার মনে করেন। আসলে যে কোনও মূল্যে ভোটে জেতার লক্ষ্য কখনও বাম রাজনীতির দর্শন হতে পারে না। এ রাজ্যের প্রধান বামপন্থী দলগুলো সরকারে থাকার সময় থেকে এই ভুলটাই করে এসেছে। এখন দুর্দিনে তাদের সেই ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে। পঞ্চায়েত-পুরসভার বহু পুরনো বামপন্থী প্রতিনিধিরাও দলত্যাগ করছেন। রেকর্ড ঘাঁটলে হয়তো দেখা যাবে এই সব জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই বাম আমলে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেননি। জনগণকে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করেও এই সব অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্ৰস্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘ দিন ধরে জনপ্রতিনিধি রয়ে গেছেন। এটা সম্ভব হয়েছে এ জন্য যে বামপন্থী দলগুলো কোনও দিন তাদের জনপ্রতিনিধিদের পারফরম্যান্স বিচার করে দেখেনি। এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়নের কাজ না করেও এঁরা বার বার দলের টিকিট পেয়েছেন এবং ‘ভোট মেশিনারি’ ব্যবহার করে জিতেছেন।

বামপন্থী দলগুলোর জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই নিজেদের জনগণের ‘প্রভু’ মনে করেন। জনগণের সেবক হওয়ার পরিবর্তে শাসক হতে চেয়েছেন। এখন সরকার নেই, কিন্তু শাসন করার অভ্যেস রয়ে গেছে। সুতরাং শাসকদলের সঙ্গে সেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত! রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই বামপন্থীদের শক্তিশালী শৃঙ্খলা শেষ হতে শুরু করেছে। বামফ্রন্টের জনপ্রতিধিদের দলত্যাগের ঘটনা বাংলায় বামপন্থীদের ভোট-ভবিষ্যৎ বিপন্ন করে তুলছে। সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হচ্ছে, তাঁরা বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছেন। আসন্ন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। বামফ্রন্টের তথাকথিত ‘কমিটেড ভোটার’দের মধ্যেও
এ বার হতাশা তৈরি হবে। বাম কর্মী-সমর্থকরা এখন মনে করতে পারেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়ে, প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝে ও প্রচণ্ড পরিশ্রম করে যে ব্যক্তির জয় ছিনিয়ে আনা হবে, তিনি যদি জয়লাভ করার পর দল ছেড়ে চলে যান, তা হলে তাঁকে নির্বাচিত করে কী লাভ! সে জন্য এখন দরদি ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বামনেতা-সমর্থকরা জনপ্রতিনিধির সংখ্যাবৃদ্ধির চেয়েও তাঁদের গুণগত মানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেবেন। নির্বাচনে দশ জন জয়লাভ করে মাঝপথে তিন জনের দলবদল করার চেয়ে ছ’জন জিতে এক জনেরও দলত্যাগ না করাকে তাঁরা অনেক ভাল মনে করবেন।

দলত্যাগের ঘটনা প্রমাণ করে যে, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের সাড়ে তিন দশকের শাসন নেতা-কর্মীদের যথেষ্ট বাম-মনস্ক করে গড়ে তুলতে পারেনি। এক দিকে যখন বামফ্রন্টের বয়স বেড়েছে, অন্য দিকে তখন বামপন্থায় ক্ষয় ধরেছে। নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা স্লোগানে শ্রেণি-সংগ্ৰামের সমর্থনে সরব থেকেছেন, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ভোগবাদের ভেলায় চড়ে ভ্রমণ করেছেন। ওই দ্বিচারিতাই এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে।

মজিবুর রহমান

কাবিলপুর, সাগরদীঘি, মুর্শিদাবাদ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE