Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

স্বখাত সলিল

কুশলী খেলোয়াড় কঠিন বল সহজে খেলিয়া দেন। সহজ বল কঠিন করিয়া তোলা অপরিণতির লক্ষণ। কালো টাকা উদ্ধার লইয়া নরেন্দ্র মোদী ও তাঁহার সতীর্থরা অহেতুক নিজেদের সমস্যা বাড়াইয়া তুলিয়াছেন। একাধিক সমস্যা। প্রথমত, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারপর্বে তাঁহারা বিদেশি ব্যাঙ্কে ‘লুকাইয়া রাখা’ অবৈধ অর্থ অতি দ্রুত উদ্ধার করিয়া দেশে ফিরাইয়া দেশবাসীকে তাহার ভাগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বিতরণ করিয়াছিলেন।

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

কুশলী খেলোয়াড় কঠিন বল সহজে খেলিয়া দেন। সহজ বল কঠিন করিয়া তোলা অপরিণতির লক্ষণ। কালো টাকা উদ্ধার লইয়া নরেন্দ্র মোদী ও তাঁহার সতীর্থরা অহেতুক নিজেদের সমস্যা বাড়াইয়া তুলিয়াছেন। একাধিক সমস্যা। প্রথমত, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারপর্বে তাঁহারা বিদেশি ব্যাঙ্কে ‘লুকাইয়া রাখা’ অবৈধ অর্থ অতি দ্রুত উদ্ধার করিয়া দেশে ফিরাইয়া দেশবাসীকে তাহার ভাগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বিতরণ করিয়াছিলেন। ভারতীয় জনতা পার্টি কেন্দ্রীয় সরকারের গদিতে বসিবার পরে পাঁচ মাস অতিক্রান্ত। একটি কালো পয়সাও দেশে ফিরে নাই। ফিরিবার কথাও নহে, কাজটি সময়সাপেক্ষ। কিন্তু নির্বাচনী বক্তৃতায় লম্বা-চওড়া আস্ফালনের ফলে শ্রোতাদের প্রত্যাশা বাড়িলে তাহাকে অস্বাভাবিক বলা চলে না। ভারতীয় সমাজে এবং রাজনীতিতে দুর্নীতি ইদানীং বিশেষ ‘জনপ্রিয়’, সেই জনপ্রিয়তা আম আদমি পার্টির মতো একটি বিপন্ন বিস্ময়ের জন্ম দিয়াছে। কংগ্রেসের বিপর্যয়ের পিছনে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসাবে স্বীকৃত। ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই অভিযোগ যে, মনমোহন সিংহের সরকার দুর্নীতির প্রতিকারে তত্‌পর হয় নাই। স্বভাবতই নরেন্দ্র মোদীরা ‘আমরা দুর্নীতি দমনে তত্‌পর হইব’ প্রতিশ্রুতি দিয়া ভোটদাতাদের মন জয় করিতে চাহিয়াছেন, দৃশ্যত পারিয়াছেনও। সেই সাফল্যই এখন তাঁহাদের স্কন্ধে কাজের দায় চাপাইয়া দিয়াছে। আস্ফালন বুমেরাং হইয়া ফিরিয়া আসিয়াছে।

দ্বিতীয়ত, বিদেশি ব্যাঙ্কে (অন্যায় ভাবে) টাকা রাখিবার দায়ে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ লইয়াও অহেতুক প্যঁাচ কষিতে গিয়া কেন্দ্রীয় সরকার নিজেরাই বেইজ্জত হইয়াছে। ‘নাম প্রকাশ করিলে কংগ্রেস বিব্রত হইবে’ গোছের সস্তা প্রচার ভোটের বাজারে তবু প্রচলনসিদ্ধ হইতে পারে, সরকারে বসিয়া করিতে নাই। অন্য দিকে, সংশ্লিষ্ট ছয় শতাধিক আমানতকারীর মধ্যে বাছিয়া বাছিয়া তিনখানি ‘অকিঞ্চিত্‌কর’ নাম ফাঁস করিবার বুদ্ধিটিকে লজ্জাকর বলিলে কম বলা হয়। দৃশ্যত, এই ধরনের আচরণই সর্বোচ্চ আদালতের তীব্র ভর্ত্‌সনা ডাকিয়া আনিয়াছে, সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলিয়াছে, বিদেশি ব্যাঙ্কে যাঁহাদের আমানত আছে, সরকার কেন তাঁহাদের মাথায় ছাতা ধরিতেছে? আন্তর্জাতিক চুক্তির স্বার্থে এই বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখা জরুরি সরকারের এই সওয়াল সুপ্রিম কোর্ট কানেও তোলে নাই এবং, লক্ষণীয়, আদালতের তিরস্কার শুনিয়াই নামের তালিকাটি দাখিল করিয়া সরকার নিজেই বুঝাইয়া দিয়াছে, ইহা আগেই দাখিল করিতে কোনও অসুবিধা ছিল না। আবার, চুক্তির শর্তই যদি থাকে, তবে ‘নাম ফাঁস করিয়া দিব’ বলিয়া নির্বাচনী আস্ফালন কেন?

তবে, মানিতেই হইবে, কালো টাকা উদ্ধারের প্রশ্নে মোদী সরকার মচকাইয়াছে, ভাঙে নাই। বস্তুত, এক দিক দিয়া হয়তো আদালতের নির্দেশে তাহাদের সুবিধাই হইবে। প্রথমত, ‘সিট’-এর অনুসন্ধান আদালতের নির্দেশে চলিলে প্রশাসন তাহার সম্ভাব্য অসাফল্যের দায় এড়াইয়া বলিতে পারিবে, এ বিষয়ে তাহাদের কিছু করিবার নাই। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট আমানতকারীদের নাম প্রকাশ করা বা না করার সমস্যাটিও অতঃপর আদালতে ন্যস্ত। ইতিমধ্যেই আদালত হইতে ইঙ্গিত মিলিয়াছে যে, নাম অন্তত আপাতত প্রকাশ করা হইবে না। সে ক্ষেত্রে এ বিষয়ে বিরোধীদের দাবিও অপ্রাসঙ্গিক হইয়া পড়িবে। বরং ঘটনাচক্রে কংগ্রেসও কিঞ্চিত্‌ বেকুব বনিয়াছে, তাহাদের শাসনকালে বিদেশি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থ সম্বন্ধে যতটা তথ্য উদ্ধার হইয়াছিল, নূতন সরকারেরও এ পর্যন্ত কার্যত তাহাই সম্বল। কিন্তু মনমোহন সিংহ নরেন্দ্র মোদীর প্রচারের জবাবেও এই কৃতিত্বের কোনও দাবিই করেন নাই, হয়তো ভাল করিয়া জানিতেনও না। আবারও বোঝা গেল, তাঁহার সরকার কোনও বলই খেলিতে পারে নাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE