Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

হাওয়া ঘুরিতেছে

সুইডেনের পর স্বয়ং ব্রিটেন। সার্বভৌম প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিল ব্রিটিশ হাউস অব কমন্স। এই উপলক্ষে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হইয়াছে, মাত্র ১২ জন ব্রিটিশ সাংসদ তাহার বিরোধিতা করিয়াছেন, পক্ষে ভোট দিয়াছেন ২৭২ জন সাংসদ। স্বাধীন প্যালেস্তাইনের স্বীকৃতিতে ব্রিটিশ জনপ্রতিনিধিদের এই বিপুল গরিষ্ঠতা ইজরায়েলকে উদ্বিগ্ন করিতে বাধ্য, করিয়াছেও।

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

সুইডেনের পর স্বয়ং ব্রিটেন। সার্বভৌম প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিল ব্রিটিশ হাউস অব কমন্স। এই উপলক্ষে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হইয়াছে, মাত্র ১২ জন ব্রিটিশ সাংসদ তাহার বিরোধিতা করিয়াছেন, পক্ষে ভোট দিয়াছেন ২৭২ জন সাংসদ। স্বাধীন প্যালেস্তাইনের স্বীকৃতিতে ব্রিটিশ জনপ্রতিনিধিদের এই বিপুল গরিষ্ঠতা ইজরায়েলকে উদ্বিগ্ন করিতে বাধ্য, করিয়াছেও। ইজরায়েল সরকারি ভাবেই এই রায় প্রত্যাখ্যান করিয়াছে। সত্য, ব্রিটিশ হাউস অব কমন্স-এ এই ভোটাভুটির মূল্য অনেকটাই প্রতীকী, ব্রিটিশ সরকারের ইজরায়েল সংক্রান্ত নীতিকে ইহা এখনই পরিবর্তিত করিবে না। কিন্তু প্রতীক কখনও কখনও ওজনে ও গুরুত্বে বাস্তবতাকে ছাপাইয়া যায়। বিশেষত যদি ইজরায়েল গঠনের ইতিহাস স্মরণে রাখা যায়। বস্তুত, সে দিন ব্রিটিশ সমর্থন, সাহায্য না পাইলে নাত্সি জার্মানি ও ইউরোপ হইতে তাড়া-খাওয়া ইহুদিরা ইজরায়েল অর্জন করিতে পারিতেন কি না সন্দেহ। শুধু তাহাই নহে, সরকারি ভাবে ব্রিটেন এখনও ইজরায়েলের কট্টর সমর্থক। গাজায় সর্বশেষ বোমাবর্ষণের সময়েও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইজরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’-এর সপক্ষে সওয়াল করিয়াছেন।

তবে আর প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দুশ্চিন্তা কী? দুশ্চিন্তা এখানেই যে ব্রিটিশ সরকারি নীতিকে ক্রমবর্ধমান ব্রিটিশ জনমত প্রভাবিত করিতে পারে। গণতন্ত্রে সেই জনমতকে দীর্ঘ কাল উপেক্ষা করা সম্ভবও হয় না। এবং কেবল ব্রিটেন নয়, সমগ্র ইউরোপেই ইজরায়েলের প্রতি সমর্থন দুইটি ঘটনায় দ্রুত হ্রাস পাইতেছে। এক, গাজায় শিশু-নারীনির্বিশেষে, জঙ্গি-অসামরিক, সশস্ত্র-নিরস্ত্র নির্বিশেষে দুই সহস্রাধিক প্যালেস্তিনীয়র নিধন। দুই, রাষ্ট্রপুঞ্জ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করিয়া পূর্ব জেরুজালেম সহ ওয়েস্ট ব্যাংক-এর প্যালেস্তিনীয় ভূমিতে ক্রমাগত ইহুদি পরিবার বসত করাইয়া প্রস্তাবিত প্যালেস্টাইনের মানচিত্রে অন্তর্ঘাত করা। যখন প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলিতে লক্ষ-লক্ষ প্যালেস্তিনীয় শরণার্থী রাষ্ট্রপুঞ্জের দয়ার দানে দিনাতিপাত করিতেছে, তখন তাঁহাদের স্বদেশে ফেরার যাবতীয় দরজা বন্ধ করিতেই যে জায়নবাদীদের এই পরিকল্পিত অনাচার, তাহাতে সংশয় নাই। কিন্তু ইহুদিদের যেমন নিজস্ব দেশ দরকার, প্যালেস্তিনীয়দেরও তো নিজ বাসভূমি প্রয়োজন। এই একটি প্রশ্নে ইজরায়েল তাহার পূর্বতন সমর্থকদের সমর্থন হারাইতেছে।

ইতিমধ্যে কায়রোয় বিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল রচনার কাজ অনেক দূর আগাইয়াছে। ইহাতে যে নেতানিয়াহুর গাত্রদাহ হইতেছে তাহা বুঝা যায়, যখন তিনি বলেন, এই তহবিলও ইজরায়েল সরকারের হাত দিয়াই খরচ করিতে হইবে। প্যালেস্তিনীয়দের জন্য কোনও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব মঞ্জুর করিতে যে ইজরায়েল প্রস্তুত নয়, ইহা তাহারই প্রমাণ। কিন্তু ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত যেমন বলিয়াছেন, বাতাসের গতি ঘুরিতেছে। গাজায় নির্বিচার ইজরায়েলি বোমাবর্ষণের পরিণাম টেলিভিশনের পর্দায় চাক্ষুষ করার পর ইউরোপের জনমত আর ইহুদিদের ‘অসহায় শিকার’ হিসাবে দেখিতেছে না, বরং নিরস্ত্র ‘প্যালেস্তিনীয় শিশুনারীদের আগ্রাসী শিকারি’ রূপেই ইজরায়েলিরা গণ্য হইতেছে। সময় থাকিতে ইজরায়েল সংযত হউক, প্যালেস্তিনীয় এলাকা ইহুদি বসতমুক্ত করিয়া দখল ছাড়ুক। আন্তর্জাতিক জনমতে ধিক্কৃত হইয়া সে যে রাষ্ট্রীয় বিচ্ছিন্নতা ও একঘরে দশা বরণ করিতেছে, তাহা আখেরে ইজরায়েলের ক্ষতিই করিবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE