Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Local News

রাজনৈতিক সুস্থিতির ছবিটা ভূলুণ্ঠিত হল

আমরা গাজা ভূখণ্ডের ছবি দেখে শিউরে উঠি— গুলিতে লুটিয়ে পড়ছে নিরীহ প্রাণ। বাসন্তীর হেতালখালিও তো সেই দুঃস্বপ্নই বয়ে আনল আমাদের সামনে।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কমব্যাট ফোর্সের বাণেশ্বর সিংহকে। —নিজস্ব চিত্র।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কমব্যাট ফোর্সের বাণেশ্বর সিংহকে। —নিজস্ব চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৬
Share: Save:

গোটা বিশ্বকে বাংলায় আহ্বান জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লগ্নি টানতে রাজনৈতিক সুস্থিতির ছবি তুলে ধরতে চাইছেন। প্রচেষ্টা যখন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে, যখন বাণিজ্য-বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে রাজ্য, যখন শিল্প মহল রাজ্য সরকারের প্রয়াসের প্রশংসা করছে, ঠিক তখনই ভাবমূর্তিতে জোর ধাক্কাটা লাগল এবং সে ধাক্কা এল তৃণমূলের অন্দরমহল থেকেই। রাজনৈতিক সুস্থিতির ছবিটাকে ভূলুণ্ঠিত করে তীব্র সঙ্ঘাতের সাক্ষী হল বাসন্তী। শাসক দলেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঘনিয়ে উঠল ভয়ঙ্কর হানাহানি, রক্তাক্ত হল হেতালখালি, লুটিয়ে পড়ল তরতাজা প্রাণ।

আমরা গাজা ভূখণ্ডের ছবি দেখে শিউরে উঠি— গুলিতে লুটিয়ে পড়ছে নিরীহ প্রাণ। আমরা রক্তাক্ত ইরাককে দেখে আঁতকে উঠি— স্‌প্লিন্টারে ক্ষতবিক্ষত শৈশব। সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির নিথর দেহকে তুরস্কের সৈকতে ভেসে আসতে দেখে আমরা বিহ্বল হয়ে পড়ি। বাসন্তীর হেতালখালিও তো সেই দুঃস্বপ্নই বয়ে আনল আমাদের সামনে।

রাজনীতির নামে দু’দল দুষ্কৃতী প্রাণঘাতী হানাহানিতে মত্ত। সে হানাহানি ছাড় দিল না স্কুল শেষে বাড়ির পথ ধরা রিয়াজুলকেও। ক্ষুদ্র শরীরে বুলেট নিয়ে লুটিয়ে পড়তে হল শিশুকে। এর চেয়ে মর্মান্তিক ছবি আর কী-ই বা হতে পারত!

আরও পড়ুন: বাসন্তীতে গুলিযুদ্ধ, বুক ফুঁড়ল স্কুলফেরত পড়ুয়ার

এ কথা ঠিক যে, রাজনৈতিক হানাহানির দীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী বাসন্তী। আগেও বহুবার রাজনৈতিক সঙ্ঘাত বিভীষিকার চেহারা নিয়েছে ওই অঞ্চলে। কিন্তু তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল তো শুধু চড়াবিদ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতে বা বাসন্তী ব্লকে সীমাবদ্ধ নেই। আরাবুল-কাইজার-রেজ্জাকরা প্রায় ঘোষিত ভাবেই ভিন্ন ভিন্ন ‘শিবির’-এর প্রতিপালক ভাঙড়ে। কাকলি ঘোষদস্তিদার আর সব্যসাচী দত্তের ‘শিবির’ বছরের পর বছর ধরে যুযুধান রাজারহাট-নিউটাউনের বিস্তীর্ণ এলাকায়। হাওড়ায় অরূপ রায় এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীরা বিবদমান। মালদায় কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী, সাবিত্রী মিত্র, মোয়াজ্জেম হোসেনদের মধ্যে বিন্দুমাত্র বনিবনা নেই বলে শোনা যায়। দক্ষিণ দিনাজপুরে শঙ্কর চক্রবর্তী এবং বিপ্লব মিত্র পরস্পরের মুখ দেখেন কি না, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। আরও উত্তরে গেলে দুই মন্ত্রী গৌতম দেব আর বিনয় বর্মনের মধ্যে ‘সুমধুর’ সম্পর্কের আভাস পাওয়া যায়। খাস কলকাতার বুকে অরূপ বিশ্বাস এবং শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে অথবা শশী পাঁজা এবং সাধন পাণ্ডের মধ্যে ‘নিদারুণ সৌহার্দ্য’ দেখতে পাওয়া যায়।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এই দ্বন্দ্ব যে শুধু নেতাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে, তাও নয়। অধস্তনও প্রতিটি ধাপ হয়ে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে কোন্দল। এ কথা ঠিক যে, সর্বত্র, সর্বদা এবং সর্বস্তরে এই বিবাদ হিংসাত্মক হয়ে ওঠেনি। এ কথাও ঠিক যে, বাসন্তীর ছবিটাই তৃণমূলের স্বাভাবিক ছবি হয়ে উঠেছে, এমনটা বলা যায় না। কিন্তু হানাহানির মাত্রা এবং হিংসাত্মক ঘটনার সংখ্যা যে দিন দিন বাড়ছে, তাও অস্বীকার করার উপায় নেই।

একটি মেলায় হওয়া অশান্তিকে কেন্দ্র করে এমন রক্তক্ষয়ী সংঘাত হল। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, আসলে এলাকা দখলে নেওয়ার তাগিদ থেকেই এই সংঘাত। বস্তুত এই সংঘাত হল ক্ষমতা দখলের সংঘাত। ক্ষমতার লালসা থেকেই এই ধরনের সংঘর্ষ ঘনিয়ে ওঠে বা উঠেছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। এতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, রাজনীতি আর নীতির রাজা নেই, দশচক্রে তা হয়ে উঠেছে রাজার নীতি অর্থাৎ যে কোনও উপায়ে ক্ষমতা দখলের এবং ক্ষমতা জাহির করার নীতি। এই লক্ষণ শুভ নয়। এই লক্ষণ রাজনৈতিক সুস্থিতির বার্তাবহও নয়। সুস্থিতি চাইলে, রাজ্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে রাখতে চাইলে এই অভ্যন্তরীণ হানাহানি থেকে শাসকদলকে মুক্ত হতেই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE