মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েতমন্ত্রীকে ‘ফেল’ ঘোষণা করার পর জানা গেল কাদম্বিনী এতকাল জীবিতই ছিল। রবীন্দ্রনাথের কলমে তাকে মরে প্রমাণ করতে হয়েছিল এই সার সত্য, আর এই একবিংশ শতকে সুব্রত মুখোপাধ্যায় অকৃতকার্য হওয়ায় জানা গেল, ডেঙ্গি নামে একটা রোগের প্রাদুর্ভাব এই বঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশে জটিল আকারেই হয়েছিল। অন্যথায়, এই বঙ্গীয় অভাজনেরা তো মৃত্যুর সারিকে সাক্ষী রেখে জানতে শিখেছিলাম, ডেঙ্গি আসলে গুজব এবং সরকারকে অপদস্থ করার চক্রান্ত বই কিছু নয়!
প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক হতে পারত, ডেঙ্গি মোকাবিলার দায়িত্ব কার? ডেঙ্গির অস্তিত্বের স্বীকৃতি থাকলে এই প্রশ্নেই সুব্রত মুখোপাধ্যায় পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে অন্য দু’-একটা মন্ত্রকের সঙ্গে লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুত হতেন হয়ত বা, কিন্তু আচমকা এই আঘাত সামলানোর প্রস্তুতি তাঁর মতো পোড়-খাওয়া রাজনীতিকেরও ছিল না, এটা বুঝতে রকেট-বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার পড়ে না। কাল যার অস্তিত্বই ছিল না, ডাল খালি ছিল নিতান্তই, আচমকা আজ তা বিষ-পুষ্পে ভরে গেলে কী-ই বা করবেন তিনি?
আশাবাদীরা বলবেন, বিলম্বিত বোধোদয়ও খারাপ কী? বেটার লেট দ্যান নেভার। বিপরীত শিবির আঙুল তুলবেন, বাঘাযতীন-যাদবপুরের দিকে, যেখানে ডায়েরিয়ার শিকার অনেক মানুষ ছুটছেন হাসপাতালের দিকে, অসহায় ভঙ্গিতে ভরসা খুঁজতে চাইছেন প্রশাসনের কাছে, আর পুরসভার তরফে খোদ মেয়রের গম্ভীর বাণী ভেসে আসছে, সব ঠিক হ্যায়। পুরসভার জলে কোথাও গন্ডগোল নেই। ডেঙ্গির সময়েও প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ‘সব ঝুট হ্যায়’ বলার পর প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা শুধু মহাকাব্যিক পর্যায়েই যায়নি, ওষুধের বদলে আটা ছড়িয়ে মুরগির লীলাক্ষেত্র বানিয়ে কী ভাবে সার্কাসের পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছিল এই ভয়াবহ বিপর্যয়কে, সে কথা ভোলেননি রাজ্যের মানুষ।
আরও পড়ুন: সরি সুব্রতদা, ডেঙ্গি নিয়ে আপনি ফেল
অতএব, হে প্রশাসনিক কর্তাগণ, পৃথিবীর সব কিছুই আপনাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত, এই প্রচারের বাইরেও জগতে কিছু কৃতকর্তব্য থাকে। যেমন, বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ অথবা যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা ইত্যাদি। এখন রোগের সঙ্গে যুদ্ধের সময়। মনোনিবেশ করুন সেখানে। নিতান্ত তুচ্ছ যে আম আদমি, বড় আশা নিয়ে তাঁরা আপনাদের ওই জায়গায় পাঠিয়েছে সেই জন্যই।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
মানুষ যদি কাঁদে, তবে তার পাশে দাঁড়ানোটাই কর্তব্য, নিয়ম, দস্তুর। এরও অন্যথা হতে পারে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy