ভারতীয় সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটা এখনও রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে দেশ জুড়ে গেরুয়া ঝড় বয়েছিল ঠিকই। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে গৈরিকের জয়োল্লাস দিকে দিকে, সেও ঠিক। কিন্তু দেশের সংবিধান যে এখনও ধর্মনিরপেক্ষতা বর্জন করেনি, সে কথাও প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত। অনেক অত্যুৎসাহীরই সম্ভবত মনে থাকছে না কথাটা।
নবরাত্রি শুরু হয়েছে। কেউ দিনভর উপবাস করে কাটাচ্ছেন। কারও কাটছে ফল-মূল বা নিরামিষ আহারে। নবরাত্রির এ হেন উদযাপন এই প্রথম নয় দেশে, ফি বছরই হয়। কিন্তু যে ভাবে গুরুগ্রামে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে মাংস-বিহীন নবরাত্রি কাটাতে বাধ্য করার চেষ্টার অভিযোগ উঠল এ বার, তা বেশ আনকোরা। মাংসের দোকান, ফাস্ট ফুডের দোকান, এমনকী আন্তর্জাতিক ফুড চেনকেও ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য করেছে শিবসেনা। নবরাত্রি না মেটা পর্যন্ত ঝাঁপ বন্ধ থাকবে, তার পরেও প্রতি মঙ্গলবার দোকান বন্ধ রাখতে হবে— শিব সৈনিকদের নিদান এমনই।
এই নতুন প্রবণতা রাষ্ট্রীয় আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষতার সম্পূর্ণ বিপরীতে। ভারতের প্রশাসন, ভারতের আইন, ভারতের সংবিধান— কেউই যে এ হেন নিদান এবং এমন জবরদস্তির অনুমতি দেয় না, সে কথা শিব সৈনিকদের অজানা নয়। তা সত্ত্বেও জুলুমটা হল। অর্থাৎ বিজেপি নির্বাচনে বড়সড় সাফল্য পেতেই কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা ধরে নিলেন সংবিধানের অংশবিশেষ আপাতত অকেজো দেশে।
প্রশাসনিক পদক্ষেপ হয়েছে, দোকানগুলি আবার খুলতে পুলিশ সক্রিয় হয়েছে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের সে সক্রিয়তা শিবসেনার ভয়ঙ্কর দৌরাত্ম্যের প্রাবল্যের প্রেক্ষিতে নিতান্তই ম্লান।
হরিয়ানার গুরুগ্রামে শিবসেনার কর্মী-সমর্থকরা যা করেছেন, তা দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনাকেই অস্বীকার করছে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা যেতে পারত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশ শুধু কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েই দায় সেরেছে। কিন্তু একই দেশের অন্যান্য প্রান্তে মোটামুটি একই সময়কালে কেউ গেরুয়া ছাত্র সংগঠনের বিরোধিতা করার ‘অপরাধে’ দেশদ্রোহী তকমা পাচ্ছেন, আবার কেউ জমি আন্দোলনে নেমে ইউএপিএ-র জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন। সাংবিধানিক পরিহাস সীমা ছাড়াচ্ছে না কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy