বিক্ষোভ চলছে চেন্নাইয়ে। ছবি: পিটিআই
জনাবেগ যখন বাঁধ ভাঙে, তখন সে প্লাবনে আইন-কানুন-বিধি-নিয়ম অনেক কিছুই খড়কুটোর মতো ভেসে যায়। তামিলনাড়ু এই মুহূর্তে তেমনই এক প্লাবনের সাক্ষী হচ্ছে। জাল্লিকাট্টুর সমর্থনে পথে নেমেছেন সহস্র-লক্ষ। গোটা তামিল-ভূখণ্ড উত্তাল। উন্মত্ত আবেগের প্রাবল্য এমনই যে ‘পেটা’র মতো সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি উঠছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়কেও অগ্রাহ্য করে জাল্লিকাট্টুর আয়োজন হচ্ছে। আর এই ধ্বংসাত্মক জনাবেগের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিচ্ছেন, কিছু একটা পথ তিনি খুঁজে বার করবেনই। এ আশ্বাস কিন্তু আদৌ প্রশাসকসুলভ নয়। বরং সস্তা রাজনীতিকসুলভ।
জাল্লিকাট্টু শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলতে থাকা প্রথা, সুতরাং জাল্লিকাট্টু তামিল ঐতিহ্য, সুতরাং জাল্লিকাট্টু চলতে দিতেই হবে— জনাবেগ এখন এমনটাই বলছে। নিরীহ প্রাণীর উপর নির্মমতা যে কোনও ঐতিহ্য হতে পারে না, এ ব্যাখ্যা কেউ কানেই নিতে চান না। ঐতিহ্যের নামে এক নির্মম প্রথার জন্য ছাড়পত্র আদায় করতে নাছোড় একদল মানুষ আর তাঁদের প্রশ্রয় দিয়ে রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টায় একদল অসাধু রাজনীতিক।
ধর্মীয় রীতি বা ঐতিহ্যের সিলমোহর গায়ে লাগিয়ে দিলেই কোনও নির্মম প্রথা যে বৈধতা পেয়ে যায় না, তা কিন্তু ভারতের আইন ও ভারতের সমাজ যুগপৎ প্রচেষ্টায় আগেও প্রমাণ করেছে। প্রমাণ করতে পেরেছে বলেই আজ সতীদাহের মতো প্রথার বিলোপ সাধন সম্ভব হয়েছে। পরাধীন ভারতে সেই বিপ্লবটা ঘটিয়ে দিতে পেরেছিলাম আমরা। আজ রাষ্ট্র আমাদের, আইন আমাদের, প্রশাসন আমাদের। তথাপি নির্মমতার হয়ে সওয়াল করতে থাকা এক অন্ধ জনাবেগের সামনে আমরা অসহায়।
নির্মম প্রথার বিলোপ সাধনে তথা আদালতের নির্দেশ রূপায়ণে যে সদিচ্ছার প্রয়োজন, তামিলনাড়ুর প্রশাসনে আজ তার কণামাত্রও আসলে নেই। আবেগে ভেসে এক জনগোষ্ঠী যখন সম্পূর্ণ ভ্রান্ত দিশায়, তখন অভিভাবকসুলভ ভঙ্গিতে পথ দেখানো উচিত প্রশাসনের। উন্মত্ততা যদি আইনকে নস্যাৎ করতে চায়, যদি আদালতকে অস্বীকার করতে চায়, তা হলে সে উন্মত্ততার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া সরকারের কর্তব্য নয়। নির্মোহ কাঠিন্যে সে উন্মত্ত জনাবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সঠিক দিশা নির্দেশ করাই রাজধর্ম। কোনও এক সঙ্কীর্ণ তাড়নায় পনীরসেলভমরা সে কথা ভুলতে বসেছেন।
ভাঙড়েও কিন্তু আজ এক উন্মত্ত, উদভ্রান্ত জনাবেগ। সে আবেগ কোনও যুক্তি-তর্ক-বিজ্ঞানের পরোয়া করছে না। হাইটেনশন বিদ্যুৎবাহী তার বেয়ে যে অসুস্থতা আসে না, শুধু বিদ্যুৎই আসে, এই কথাটা ভাঙড়ের মানুষকে বোঝানো খুব জরুরি আজ। বিভ্রান্তি রোখার দায়িত্বটা প্রশাসনকেই নিতে হবে। প্রশাসন কি সে ভূমিকা নিতে পারবে? নাকি এখানেও এক উন্মত্ত জনাবেগের সামনে প্রশাসনের অসহায় আত্মসমর্পণই দেখতে হবে? জবাবের অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy