ছবি: সংগৃহীত।
বহু ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে আসা একটা বাক্যবন্ধ মনে আসছে— ফুল ফুটুক, না ফুটুক, আজ বসন্ত। সুখানুভূতি, আনন্দ বা স্ফূর্তির ইতিবাচক আলোকেই সাধারণত এই বাক্যবন্ধের আবাহন হয়। কিন্তু আজ যেন একটু নেতির আলোকেই ধরা দিচ্ছে বহু দিনের চেনা শব্দগুলো। কারণ হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত কোনও স্ফূর্তি বলছে না যে, আজ বসন্ত। রাজা বলছেন, আজ বসন্ত। অতএব ফুল খুঁজে লাভ নেই, আজ বসন্তই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, দীপাবলি আসার আগেই তিনি দেশে দীপাবলি এনে দিয়েছেন। জিএসটি পরিষদ দেশের নতুন পরোক্ষ কর ব্যবস্থায় সদ্য যে সব পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে, সেই সব সুপারিশ সমগ্র ভারতকে দীপালোকিত করে দিয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন। অতএব আর দীপ খুঁজছি না। ধরে নিচ্ছি, আজ দীপাবলিই।
দেশের সর্বোচ্চ শাসকের মতামতের প্রতি এই নিরঙ্কুশ আনুগত্য দেখানোর পুরস্কার হিসেবে আপাতত একটু স্বাধীনতা নেওয়া যাক। দু’একটা প্রশ্ন তোলা যাক।
জিএসটি ব্যবস্থায় কিছু রদবদলের ফলে নাগরিকের যে সব বিড়ম্বনা লাঘব হবে বলে সরকার দাবি করছে, সেই সব বিড়ম্বনায় আচমকা নাগরিককে ফেলা হয়েছিল কেন? অতিরিক্ত তাড়না না দেখিয়ে আরও সুচিন্তিত এবং সুসংহত প্রক্রিয়ায় কি এই নতুন কর ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটানো যেত না? সরকারকে কেউ সতর্ক করেনি বা আপত্তি জানায়নি বা সুপরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করেনি, এমন কথা আশা করি নরেন্দ্র মোদী বা অরুণ জেটলি বলবেন না। কোনও আপত্তিতে কান দেওয়ার বা অপচ্ছন্দের পরামর্শ মেনে নেওয়ার সময় বা প্রবৃত্তি যে তখন সরকারের ছিল না, তা নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী মনে করতে পারবেন। অর্থাৎ জিএসটি-র প্রবর্তনের সময়ের অতি উৎসাহজনিত ত্রুটি এত দিনে কিয়ৎ শুধরে নিয়ে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করল সরকার। এতেই দেশে আগাম চলে এল উৎসব? প্রথমে বিপাকে ফেলে পরে তা থেকে উদ্ধার করা কি সত্যিই এত গৌরবের বিষয়?
আরও পড়ুন
আগেই দিওয়ালি এনে দিলাম, জিএসটি হ্রাস নিয়ে বলছেন মোদী
মনে পড়ছে, গত বছরও কিন্তু দীপাবলির আশেপাশেই এমন এক উৎসবের আয়োজন হয়েছিল। পাঁচশো এবং এক হাজার টাকার সমস্ত নোট প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাতিল হয়ে গিয়েছিল। ওই সিদ্ধান্তও জাতীয় অর্থনীতিতে উৎসব নিয়ে আসবে বলে দাবি করা হয়েছিল। আসলে তা উৎসব এনেছে, নাকি বিষণ্ণতা, তা এখন গোটা দেশের কাছে স্পষ্ট। কালো টাকা এবং জাল টাকার আদৌ সর্বনাশ হয়েছে, নাকি রাজকোষ থেকে বড় অঙ্ক বেরিয়ে গিয়েছে, কোনও নাগরিকেরই তা জানতে বাকি নেই।
প্রশ্ন হল, যে আগাম দীপবলির কথা এ বার ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী সেও শেষ পর্যন্ত হতাশ করবে না তো? নাগরিকের সুরাহা হোক, এমনটাই কাম্য। অর্থনীতি মজবুত হোক, তাও সকলেই চান। কিন্তু বার বার আশাহত হতে বোধ হয় কেউই চান না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy