Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ইতিবাচক

পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে তিনিই সত্য— মারিলেও তিনিই মারিবেন, শিল্প আনিলেও তিনিই আনিবেন। অতএব, তাঁহার যদি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে, রাজ্যের পক্ষে সুসংবাদ বইকি।

নক্ষত্রখচিত: মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে (বাঁ দিক থেকে) সজ্জন জিন্দল, লক্ষ্মী মিত্তল এবং মুকেশ অম্বানী। ফাইল চিত্র।

নক্ষত্রখচিত: মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে (বাঁ দিক থেকে) সজ্জন জিন্দল, লক্ষ্মী মিত্তল এবং মুকেশ অম্বানী। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০১
Share: Save:

পরিবর্তন যে হইয়াছে, অস্বীকার করিবার উপায় নাই। দুই দিনের বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে একই সঙ্গে এত জন বিশিষ্ট শিল্পপতির দেখা পূর্বের বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট-এ দেখা যায় নাই। পশ্চিমবঙ্গের মঞ্চে অতিথি হিসাবে আসিয়া তাঁহারা রাজ্যের সম্বন্ধে ভাল কথাই বলিবেন, তাহা প্রত্যাশিত। কিন্তু, পূর্বের সম্মেলনগুলির ‘ভাল কথা’-র সহিত বর্তমানের তুলনা করিলে সুরের পার্থক্যও অশ্রুত থাকিবে না। অনুমান করা চলে, মিত্তল-অম্বানী-জিন্দল আদি শিল্পপতিদের চোখে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্ব পূর্বের তুলনায় বাড়িয়াছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খানিক কৃতিত্ব দাবি করিতে পারেন বটে। বৃহৎ শিল্প, বড় পুঁজির প্রতি তাঁহার মনোভাব এবং অবস্থানে যে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাইতেছে— যেমন, শালবনিতে জেএসডব্লিউ-এর সিমেন্ট কারখানার উদ্বোধনে যে সুর মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা গেল— বণিকমহলের ইতিবাচক ভঙ্গি তাহাকে স্বীকৃতি জানাইল। তবে, ইহাতে আত্মতুষ্ট হইয়া পড়িবার কোনও সুযোগ নাই। রাজ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে, কিন্তু স্থানীয় স্তরে খুচরা অশান্তি অদম্য। সিন্ডিকেটও হাওয়ায় মিলাইয়া যায় নাই। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বড় পুঁজিকে আকর্ষণ করিতে হইলে এই সমস্যাগুলির প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ না করিলেই নহে। রাজ্যে যদিও জাঁকাইয়া শীত পড়িয়াছে, শিল্পের ময়দানে বাসন্তী হাওয়ার ছোঁয়া। মুখ্যমন্ত্রী তাঁহার রাজ্যের দরজা জানালা খুলিয়া সেই হাওয়াকে স্বাগত জানাইবেন কি না, তাহাই প্রশ্ন।

দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী হইবার পরের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখিলে ভরসা জাগে, হয়তো এই সম্ভাবনার অঙ্কুরোদ্গম হইবে। তিনি রাজনীতিক, নিজের নির্বাচনী স্বার্থের কথা তাঁহাকে বিলক্ষণ ভাবিতে হইবে। কিন্তু, এই নূতন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— তথ্যপ্রযুক্তির ভাষায় যাঁহাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্শন ২.০ বলিলে ভুল হইবে না— সম্ভবত জানেন, সেই স্বার্থই একমাত্র নহে। শিল্প বই নিস্তার নাই, এবং তেলেভাজায় শিল্পের কাজ হইবে না। বড় পুঁজিকে আকর্ষণ করিতে হইলে তাহার স্বার্থের কথাও ভাবিতে হইবে। সিঙ্গুরের শ্মশান হইয়া যাওয়া ৯৯৭ একর যদি প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞান হয়, শালবনির সিমেন্ট কারখানা তবে দ্বিতীয় মমতার সিলমোহর। তিনি মিতবাক হইয়াছেন, অন্তত জনসমক্ষে যুক্তিহীন জেদের ভাষা পরিহার করিয়াছেন। মাসকয়েক পূর্বের লন্ডন সফরে তাঁহার এই সংযত ভঙ্গি চোখে পড়িয়াছিল। ইকো পার্কের বাণিজ্য সম্মেলনেও তাহা দেখা গেল। পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে তিনিই সত্য— মারিলেও তিনিই মারিবেন, শিল্প আনিলেও তিনিই আনিবেন। অতএব, তাঁহার যদি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে, রাজ্যের পক্ষে সুসংবাদ বইকি।

তবে, এখনও সবই সম্ভাবনার স্তরে। বিনিয়োগের প্রস্তাব অথবা মউ সাক্ষরের সহিত প্রকৃত লগ্নি ও কর্মসংস্থানের ফারাক কতখানি, সম্মেলনের মঞ্চে শিল্পপতিদের বহু প্রতিশ্রুতিই যে সম্মেলন শেষ হইবার পূর্বেই হাওয়ায় মিলাইয়া যায়, পশ্চিমবঙ্গ অভিজ্ঞতায় জানে। বস্তুত, ভারতে রাজ্যস্তরে বাণিজ্য সম্মেলনের বৃহত্তম নাম ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-ও এই ফারাকটি টের পাইতেছে। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর পরিবর্তনেরও সূচনা হইয়াছে মাত্র। তাঁহাকেও এখনও অনেক পথ হাঁটিতে হইবে। জমি হইতে সিন্ডিকেট, প্রচুর প্রশ্নে দ্ব্যর্থহীন অবস্থান লইতে হইবে, সাহসী সিদ্ধান্ত করিতে হইবে। লগ্নি টানিবার জন্য শিল্পমহলের সব দাবি বিনা প্রশ্নে মানিয়া লওয়ার প্রয়োজন নাই— শিল্পমহল তেমন আশাও করে না। দরকার সহযোগিতার মনোভাব, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। এবং সেই সহযোগিতার জন্য যেন প্রতি বার মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ না হইতে হয়। প্রশাসনের সব স্তর এই ইতিবাচকতায় দীক্ষা লইলে লগ্নিও আসিবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE