Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
প্রবন্ধ ১

এই বিজেপি তো জরুরি অবস্থার সন্তান

জরুরি অবস্থার বার্ষিকী পালনে ভারতীয় জনতা পার্টির উৎসাহ বরাবরই প্রবল। সেটা কি শুধুই গণতন্ত্রের সুস্বাস্থ্য কামনায়? না কি, স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীর কথা ধার নিয়ে বলা যায়, তাঁদের দল এবং সঙ্ঘের পক্ষে ইমার্জেন্সি ছিল একটা বড় ‘সুযোগ’?জ রুরি অবস্থার পঁচিশ বছর পূর্ণ হওয়ার সময়ে ভারতের তখ্ত-এ ছিল বিজেপি সরকার, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। জরুরি অবস্থার চল্লিশ বছরেও কেন্দ্রে সেই বিজেপি সরকার। ২০০২ সালের মতো এ বছরেও দেখা গেল, জুন মাস আসতেই মহা উদ্দীপনা, ২৫ তারিখটি ভাল করে পালন করতে হবে। সে দিনের মতো আজও প্রধানমন্ত্রী আবেগ-থরোথরো বার্তা দিলেন।

জরুরি উৎসব। জরুরি অবস্থার ৪০তম বার্ষিকী পালনে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, নয়া দিল্লি, ২৫ জুন।

জরুরি উৎসব। জরুরি অবস্থার ৪০তম বার্ষিকী পালনে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, নয়া দিল্লি, ২৫ জুন।

সেমন্তী ঘোষ
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

জ রুরি অবস্থার পঁচিশ বছর পূর্ণ হওয়ার সময়ে ভারতের তখ্ত-এ ছিল বিজেপি সরকার, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। জরুরি অবস্থার চল্লিশ বছরেও কেন্দ্রে সেই বিজেপি সরকার। ২০০২ সালের মতো এ বছরেও দেখা গেল, জুন মাস আসতেই মহা উদ্দীপনা, ২৫ তারিখটি ভাল করে পালন করতে হবে। সে দিনের মতো আজও প্রধানমন্ত্রী আবেগ-থরোথরো বার্তা দিলেন। বাজপেয়ীর পনেরো বছর আগের বক্তব্যটিই আবার শোনা গেল মোদীর মুখে: জরুরি অবস্থার স্মৃতি ভোলা যায় না, ভুলতে দেওয়া যায় না। ভারতীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়টির স্মৃতি জাগিয়ে রাখতে হবে গণতন্ত্রেরই স্বার্থে।
তাই কি? কেবল ‘গণতন্ত্র’-এরই স্বার্থে? ১৯৭৫-এর ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী যখন ভারতীয় সংবিধানকে সাময়িক ভাবে ত্যক্ত করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন, স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে সেটাই অন্ধকারতম মুহূর্ত, কেউ তা অস্বীকার করবে না। কিন্তু শুধু কি সেই কারণেই বিজেপি নেতাদের এত উৎসাহ? ক্ষমতায় না-থাকা-কালীন অন্য বছরগুলিতেও বিজেপির পার্টি ফোরামগুলিতে প্রতি জুন মাসে জরুরি অবস্থার জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান, বক্তৃতামালা ইত্যাদি হয়ে থাকে। সে কি সত্যিই কেবল গণতন্ত্রের সুস্বাস্থ্য-কামনায়?
সত্যিটা বোধহয় একটু অন্য। বাজপেয়ী-মোদীদের পক্ষে সেই সত্যি সর্বসমক্ষে স্বীকার করা মুশকিল। তবু কখনও কখনও মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়। এই যেমন, মোদী এ বার টুইট-বার্তায় জানিয়েছেন: ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর কাছে জরুরি অবস্থা মানেই বহু স্মৃতি, বহু অনুষঙ্গ। বলেছেন, তাঁদের মতো ‘তরুণ কর্মী’দের কাছে ইমার্জেন্সি ছিল একটা বিরাট সুযোগ, ব়ড় করে কাজ করার সুযোগ। অনেক নেতা, অনেক সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম’। নরেন্দ্র মোদীদের এই ‘সুযোগ’-এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বিজেপি-র দৃষ্টিতে ‘জরুরি অবস্থা’-সংক্রান্ত আসল সত্যিটা। বিজেপি আসলে জরুরি অবস্থারই সন্তান। জরুরি অবস্থা জারি না হলে আমাদের আজকের পরিচিত বিজেপি তৈরি হতে পারত না।

বিকল্প জাতীয়তা, বিকল্প জনতা

জরুরি অবস্থার পর ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে দেশের ইতিহাসে প্রথম বার অ-কংগ্রেসি নেতারা উঠে এলেন ক্ষমতার শীর্ষে। স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহ্য-সিক্ত কংগ্রেস ছাড়াও যে অন্যরা এই উচ্চতায় আসতে পারে, সেই প্রথম তার প্রমাণ মিলল। সবে ত্রিশ-ছোঁয়া ভারতীয় গণতন্ত্রের যাত্রায় এটা অত্যন্ত গুরুতর অভিজ্ঞতা, বিকল্পের প্রথম স্বাদ। রামচন্দ্র গুহের ভাষায়, ‘আ ওয়াটারশেড’। সেই বিকল্পের বাস্তবায়নে তো শুধু মোরারজি দেশাই, চরণ সিংহ ছিলেন না, ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের অন্য নেতারাও। সরকারে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই অলক্ষ্যে তৈরি হয়ে উঠল তাঁদের বৃহত্তর অধিকার। বিকল্প জাতীয় সরকার ভাবনার অধিকার।

দুই বছরের মধ্যে জনতা সরকার পরিহাসে পরিণত হলেও সেই অধিকার আর সম্ভাবনার ধিকিধিকি আলোটা কিন্তু জ্বলতেই থাকল। জনতা দল ভেঙে বেরিয়ে এলেন জনসঙ্ঘ বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের নেতারা, তৈরি হল ভারতীয় জনতা পার্টি। কংগ্রেসের মজ্জায় মজ্জায় প্রবাহিত হত যে জাতীয় গৌরব, তার কপালে পরাধীন দেশের জাতীয় সংগ্রাম পরিচালনার যে জয়টীকা, তাকে পেরিয়ে নতুন জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি সহজ কাজ ছিল না। অথচ সত্তর দশকের শেষে উঁকি দিল অন্য এক জাতীয় নেতৃত্বের ইঙ্গিত— স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবের অংশী না হয়েও যাঁরা দেশের উচ্চতম স্তরে প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার রাখেন। কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদের পাশে এই ‘অন্য জাতীয়তাবাদ’ই ‘ভারতীয়’ জনতা পার্টি-র প্রাণরেখা। জরুরি অবস্থা না ঘটলে কি এই অন্য জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব সহজে তৈরি হত? জরুরি অবস্থাকে বিজেপি নেতারা তাই স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধ বলে থাকেন!

কেবল ‘ভারতীয়’ নয়, ভারতীয় ‘জনতা’ পার্টি হওয়ার জন্যেও সময়টি ছিল অত্যন্ত জরুরি। যে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বিজেপি-র জন্মের উৎস, উনিশশো সত্তরের দশকেও তাদের জনসমর্থন ছিল যথেষ্ট সীমিত। উত্তর ভারতের নানা পকেটে তাদের প্রতাপ থাকলেও বড় রাজনীতির চত্বরে তারা তখনও হিসেবের বাইরে। সেই জায়গাটায় বড় মাপের পরিবর্তন ঘটে গেল এ বার। জয়প্রকাশ নারায়ণের ‘সম্পূর্ণ আন্দোলন’-এ সঙ্ঘের যোগ দেওয়ার সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্তে জে-পি’র হাত ধরেই তারা আকারে-প্রকারে বেড়ে উঠল দ্রুত। জে-পি’র আন্দোলনে ‘জেল ভরো’ কর্মসূচিতে প্রতি দিন বিশাল সংখ্যক সঙ্ঘকর্মী গ্রেফতার হতে শুরু করল— দলের নির্দেশ মান্য করে। আপাদমস্তক ‘রেজিমেন্টেড’ এই সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠান। দেখা গেল, বড় আন্দোলনের ভূমি পেয়ে, এবং সৎ ন্যায়নিষ্ঠ ক্ষমতালোভহীন ‘দ্বিতীয় গাঁধী’ জয়প্রকাশের মতো নেতা পেয়ে তার কেন্দ্রীভূত কর্মপন্থা আশ্চর্য রকম ফলপ্রসূ হল। যেন নতুন জীবন পেল তারা। ঠিক এটাই তাদের দরকার ছিল। যে প্রতিষ্ঠানের অঙ্গে অঙ্গে জড়ানো গাঁধী-নিধনের ঐতিহাসিক পাপ, ‘জাতীয়’ আকাশে মুক্তি পাওয়ার জন্য তার পক্ষে এই নতুন ‘জনতা’ জীবন যে কতখানি জরুরি ছিল, পিছনে তাকিয়ে সেটা আমরা দিব্যি বুঝতে পারি।

যোগবিয়োগের খেলা

সব অঙ্কেই যোগ-বিয়োগের একটা সামঞ্জস্য থাকে। জাতীয় কংগ্রেস-এর জনভিত্তি ক্ষয়ের সঙ্গে জনতা আন্দোলন তথা ভারতীয় জনতা পার্টির প্রাপ্তির হিসেবেরও একটা স্পষ্ট সামঞ্জস্য আছে। ভোলা যাবে না, উনিশশো একাত্তরের নির্বাচনে ইন্দিরার বিশাল ‘ল্যান্ডস্লাইড ভিকট্রি’র পর থেকেই কংগ্রেসের জনসমর্থন নিশ্চিত ভাবে ঝরতে শুরু করে। ইন্দিরার একের পর এক পদক্ষেপেই সেই পাতা-খসানোর খেলার শুরু। জরুরি অবস্থা নিয়ে এল গভীরতর, ব্যাপকতর বিক্ষোভ। খর্বিত নাগরিক অধিকার কেবল শহুরে এলিট-দেরই হতাশ ও ক্রুদ্ধ করেনি সে দিন। ক্ষোভের তপ্ত বাতাস গ্রামভারতেও দ্রুত ছ়়ড়াল। জোর খাটিয়ে জমি দখল, জন্মনিয়ন্ত্রণ, কর্মী ইউনিয়নের প্রবল দমন, এ সব যে কী ভাবে সাধারণ মানুষকে বিমুখ করে, সেই হিসেবটা ইন্দিরা বোধহয় নিজেও রাখেননি। বোঝেননি, সঞ্জয় গাঁধীর নেতৃত্বে যুব কংগ্রেসের দুর্বার দাপট কী ভাবে মানুষের মন বিষিয়ে দিচ্ছিল। সাতাত্তরের নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবিটাই কিন্তু এই উদ্‌ভ্রান্ত রাজনীতির একমাত্র ফল নয়।

রাজনীতি-লুডোর বোর্ডটাও গেল পাল্টে। জয়প্রকাশ নারায়ণের যে আন্দোলন এত দিন আবদ্ধ ছিল দেশের একটি অংশে, নানা দিকে তার সমর্থন গড়ে উঠল। যে সব নতুন নেতা, নতুন দল সে দিন এগিয়ে আসছিলেন, এই ব্যাপ্ত জনবিক্ষোভের হাওয়ায় তাঁরা বিশেষ রকম উপকৃত হলেন। হু হু করে বাড়ল সঙ্ঘ ও পরবর্তী কালে নতুন ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থন। কংগ্রেস-বিরোধিতার কর্মসূচির সঙ্গে একটা নতুন জনমুখী রাজনীতির আদল আনতে তাঁদের একেবারেই বেগ পেতে হল না।

অন্য একটি কর্মসূচিও তাঁদের অপরিসীম সাহায্য করল আকারে-প্রকারে বাড়তে: হিন্দুত্ব রাজনীতি। এ ক্ষেত্রেও কংগ্রেসের অনেক দায়িত্ব। তাদের অন্য অনেক নীতির মতো সেকুলারিজম-এর নীতিতেও যে কত ফাঁক, শর্টকাটের কত ফাঁকি, ইন্দিরার শাসনে ইতিমধ্যেই সেটা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফলে, জনসঙ্ঘ যে দিন ভারতীয় জনতা পার্টি হল, তার প্রথম লগ্ন থেকেই তাদের আক্রমণের প্রধান টার্গেট দাঁড়াল, কংগ্রেসের তর্কযোগ্য সেকুলার জাতীয়তা। বিজেপি-র জনমুখিতার আয়োজনের মধ্যে দ্বিধাহীন ভাবে প্রধান হয়ে উঠল ‘হিন্দুত্ব বাঁচাও’ নীতি। আশির দশকের গোড়ায় হই হই করে জয়ী স্লোগান ‘গর্বসে বোলো হাম হিন্দু হ্যায়’-এর প্রত্যক্ষ নিশানা ছিল কংগ্রেসই। তবে কি না, ‘হিন্দুত্ব বাঁচানোর’ কাজ কি কেবল বক্তৃতা আর স্লোগান দিয়েই হয়? মাটির রাজনীতিও খুব দরকার! সুতরাং একের পর এক দাঙ্গা বাধল দেশের নানা প্রান্তে। উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ, মেরঠ, বিহারের বিহারশরিফ, গুজরাতের বডোদরা, গোধরা, আমদাবাদ, অন্ধ্রে হায়দরাবাদ: ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে পর পর ঘটে গেল এতগুলি রক্তাক্ত হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ।

অহংসর্বস্ব

শুরুর দিন থেকে আজ পর্যন্ত, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপির একটি অতি গুরুতর তাস— অনেক সময়েই তুরুপের তাস— দুর্নীতি। দুর্নীতির এই অভিযোগ কি ইমার্জেন্সিকে ছাড়া ভাবা সম্ভব? যে নির্লজ্জ ক্ষমতাকাঙ্ক্ষা এই দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তি, জরুরি অবস্থার সিদ্ধান্ত তো তারই সন্তান। সমস্ত সাংবিধানিক পথগুলিকে কী ভাবে বেঁকিয়ে চুরিয়ে, সংবিধানের মধ্যে লুকিয়ে-রাখা রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদের সাপটিকে ইন্দিরা সে দিন বার করে আনলেন, কী ভাবে গণতান্ত্রিকতার সব ভান ঝেড়ে ফেলে নিজের ও নিজের পুত্রের গায়ে সেই সাপটি জড়িয়ে নিলেন, তাঁর তথা তাঁর পরিবারের তথা তাঁর পরিবারতান্ত্রিক দলের দুর্নীতিপ্রবণতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ তো সেটাই! ১৯৬৯ থেকেই দেখা গিয়েছে, সিন্ডিকেট দমন, কিংবা ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের মতো বড় বড় পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত তিনি একাই নিয়েছেন, একেবারে একা। আলোচনা, পদ্ধতি ইত্যাদির ধার তিনি ধারেননি। দল ও প্রশাসনের একমাত্র কেন্দ্র করেছেন নিজের বাড়িটিকেই। তাঁর স্বৈরতন্ত্রের ভরণপোষণের দায়িত্ব যখন সামলাতে এলেন পুত্র সঞ্জয়, কংগ্রেস হয়ে উঠল দুর্নীতির সেরা পীঠস্থান, সমাজবিরোধীদের বিচরণভূমি। গোষ্ঠীবাজিও গোহারা হেরে গেল ব্যক্তিবাজির কাছে।

দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি ফাউ হিসেবে তাই বিজেপি চিরকালের জন্য পেয়ে গেল আরও একটি কংগ্রেস-বিরোধিতার পোক্ত প্ল্যাটফর্ম: ব্যক্তিতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্র। ইন্দিরার উত্তরাধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বিক্ষোভ জমেনি, নেহরু-কন্যার সর্বজনস্বীকৃত নেতৃত্বগুণই তার কারণ। কিন্তু ইন্দিরা যে ভাবে কনিষ্ঠ পুত্রকে একমাত্র সহকর্মী ও প্রশ্নহীন উত্তরাধিকারী বানিয়ে নিলেন, তার পর পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ খণ্ডনের কোনও পথই রইল না। তার সঙ্গে ইন্দিরা দিয়ে গেলেন তাঁর অহংসর্বস্ব রাজনীতিটিকেও। এক হাতে অতি যত্নে দলের সাংগঠনিক বিনাশ ঘটিয়ে, অন্য হাতে নিজের প্রোফাইলটিকে ঘরে ঘরে পূজিত করে তোলার বন্দোবস্ত করে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই দল, এবং দলই তিনি। দেশের মানুষেরও যাতে এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন না থাকে, জরুরি অবস্থা হয়ে উঠল মুখ্যত তারই আয়োজন।

উনিশশো ত্রিশের দশকে বাবা তাঁর মেয়েকে চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘Democracy and freedom are in grave peril today, and the peril is all the greater because their so-called friends stab them in the back.’ কালক্রমে নেহরু-কন্যা আরও ভয়ঙ্কর কাজটি করলেন— পিছন থেকে নয়, গণতন্ত্রকে একেবারে অন্দরমহল থেকে ছুরি মেরে গেলেন। কী হল সেই মর্মান্তিক ছুরিকাঘাতের ফল? কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের মোকাবিলার পথটাই আর খোলা রইল না। রাজনীতির মঞ্চে ব্যক্তিগরিমা, দুর্নীতি, ধর্মের নামে রাজনীতি, কোনও কিছুই কংগ্রেস বা কংগ্রেস-মহানেত্রীর একার বৈশিষ্ট্য নয়। তবু কংগ্রেস-বিরোধী রাজনীতির সামনে কংগ্রেসের পক্ষ নিয়ে তর্ক তোলার জায়গাটাই চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। দেশের একটা স্থায়ী ক্ষতি ঘটে গেল।

বিজেপির লাভ, বিজেপি-র ‘স্বার্থ’ ঠিক এইখানটাতেই। এই জন্যই বিজেপি নেতাদের ফিরে ফিরে জুন-শেষের জরুরি উৎসব পালন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE