Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Business News

‘অচ্ছে দিন’-ই বটে, কিন্তু কার জন্য?

তেলে যেন আগুন লেগে গিয়েছে আচমকা। দশ দিনে ন’বার বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম। মূল্যবৃদ্ধি যে সময়টায় হল, সে দিকে তাকালে মনে হচ্ছে, সময়টা নির্বাচিত। ভোট ছিল, তাই মূল্যবৃদ্ধি ঢাকা-চাপা দিয়ে কোনওক্রমে আটকে রাখা হয়েছিল যেন। ভোট মিটতেই ঢাকনা সরেছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ০০:৩৬
Share: Save:

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। কেউই মনে করতে পারছেন না, আগে কবে এই রকম ‘অচ্ছে দিন’ দেখা গিয়েছে। ‘অচ্ছে দিন’ কারও না কারও তো বটেই। ভারতবাসীর জন্য ‘অচ্ছে’ না হোক, তেল ব্যবসায়ী রাষ্ট্রগুলির জন্য দিনকাল ‘অচ্ছে’ তো বটেই।

তেলে যেন আগুন লেগে গিয়েছে আচমকা। দশ দিনে ন’বার বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম। মূল্যবৃদ্ধি যে সময়টায় হল, সে দিকে তাকালে মনে হচ্ছে, সময়টা নির্বাচিত। ভোট ছিল, তাই মূল্যবৃদ্ধি ঢাকা-চাপা দিয়ে কোনওক্রমে আটকে রাখা হয়েছিল যেন। ভোট মিটতেই ঢাকনা সরেছে। আর তাতেই যেন এত দিন ধরে সমন্বিত প্রবল চাপ পেট্রোপণ্যের দাম উল্কাবেগে বাড়িয়ে নিয়ে চলেছে।

পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার এ দেশে বেনজির। আগে কখনও এত অল্প সময়ে এত বার দাম বাড়েনি পেট্রল-ডিজেলের। স্বাভাবিক ভাবেই হাহাকারের পরিস্থিতি। সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছে পরিবহণ ক্ষেত্র। ফলে দেশ জুড়ে ধর্মঘটের ডাক শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন যানবাহন মালিক সংগঠন ধর্মঘটে যাচ্ছে। ধর্মঘটে যাচ্ছে পাম্প মালিকদের সংগঠনও।

পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চোটটা অবশ্য শুধু পরিবহণ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকে না। সুসংহত শৃঙ্খলের মতো জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে দেয় পেট্রল-ডিজেলের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে, ফলে নাগরিকের দিন গুজরানের খরচ বাড়ে। ডিজেলের উপর নির্ভর করে সেচের কাজ চলে এ দেশের বহু চাষের খেতে। তাই ডিজেলের দামে রেকর্ড উত্থান হলে চাষের খরচও বেনজির ভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। অতএব কৃষিজ পণ্য তথা খাদ্যশস্যের বাজারেও আগুন লাগার আশঙ্কা থাকে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

সহজ-সরল হিসেব জানল‌েই পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বাজারে আগুন লাগার সম্পর্ক বোঝা সম্ভব। এর জন্য অর্থনীতির পণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তা সত্ত্বেও কেন পেট্রোপণ্যের দাম এমন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বাড়তে দেওয়া হয়, কেন নাগরিককে এবং দেশের বাজারকে এমন অনিশ্চয়তা এবং আতান্তরের মধ্যে পড়তে দেওয়া হয়, সে প্রশ্নের জবাব পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে কী ভাবে অন্য সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়, রাজনীতিকরা তা জানেন না এমনটা কিন্তু নয়। পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ নাগরিকের উপর কতটা প্রভাব ফেলে, সে কথা বিলক্ষণ জানেন নেতারা। জানেন বলেই কর্নাটক নির্বাচনের আগে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানা হয়। আর ভোট মিটতেই উল্কাবেগে দাম বাড়তে শুরু করে।

আরও পড়ুন: ১০ দিনে ৯ বার বাড়ল তেলের দাম, রেকর্ড গড়ল ডিজেল, ১৮ জুন বড়সড় ধর্মঘট পরিবহণে

আরও পড়ুন: প্রতিবেশী প্রায় সব দেশের থেকে ভারতে তেলের দাম বেশি

‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন এখনও ভোলেননি ভারতবাসী। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা কবে ঢুকবে, সে প্রশ্ন এখনও করেন অনেকেই। বিদেশ থেকে কতটা কালো টাকা দেশে ফিরল, সাধারণ নাগরিক তাও জানতে আগ্রহী। কিন্তু নেতারা আপাতত এ প্রশ্নের উত্তর দিতে খুব একটা আগ্রহী নন। যে কোনও উপায়ে সরকার ধরে রাখাই তাঁদের লক্ষ্য এখন। সেই কারণেই সংখ্যার খেলায় মেতে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। অন্য দিকে সংখ্যা যে মূল্যবৃদ্ধির রূপ নিয়ে আম আদমির জীবনে খেলা দেখাতে শুরু করেছে, সে কথা সম্ভবত খেয়াল থাকছে না অধিকাংশ রাজনীতিকেরই। এই ঔদাসীন্য এবং এ রকম অবাধ মূল্যবৃদ্ধিতে অবিলম্বে ছেদ পড়া দরকার। না হলে আম আদমির জন্য তো দূরের কথা, নিজেদের জন্যও ‘অচ্ছে দিন’–এর স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাবেন রাজনীতিকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE