Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

দায়িত্বজ্ঞানহীনতা সব তরফেই

অমিতাভ মালিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে, এমনটা মেনে নিতেও খুব সমস্যা হচ্ছে। মৃত্যু হওয়ার কথাই তো নয় তাঁর। এই রকম বিপদের মুখে পড়ার প্রশ্নই ওঠা উচিত নয়। কেন উচিত নয়?

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৪৭
Share: Save:

পাহাড়ের পরিস্থিতি এবং তাকে ঘিরে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বেশ কয়েকটা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। হাওয়া বেশ স্পর্শকাতর আজ। অন্ধকারে উত্তর হাতড়ানো বিপজ্জনক হতে পারে। তাই প্রশ্নগুলোকে অনুক্ত রাখা যাচ্ছে না।

অমিতাভ মালিকের মর্মান্তিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ের উত্তেজনার আঁচ নিমেষে চারিয়ে গিয়েছে গোটা বাংলায়। পাহাড় পুড়ছিলই। সমতলেও এ বার সেই দহনের রেশ যেন। ক্ষোভ কোথাও আক্রোশে পরিণত হচ্ছে, আক্রোশ কোথাও প্রতিশোধ স্পৃহায়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকা যে জরুরি এখন, সে কথা বোঝার জন্য প্রশাসনিক কর্তা হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ঠিক এই রকম এক স্পর্শকাতর সন্ধিক্ষণে পাহাড় থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কোনও আলোচনা নেই, পরিস্থিতির দাবি মানার পরোয়া নেই, রাজ্য প্রশাসনের উদ্বেগ সম্পর্কে কোনও মাথাব্যথা নেই। আচমকা নিরাপত্তা বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ আঁচ করে পরে অবশ্য সিদ্ধান্তে সামান্য বদল হয়েছে। ১০ কোম্পানির বদলে ৭ কোম্পানি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাহিনী মোতায়েন রেখেও যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না পাহাড়ে, তখন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তো আরও জোর দেওয়া উচিত। তার বদলে বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা ভাবল কী ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার! প্রশাসনিক ভাবে নেওয়া হল, নাকি সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক ভাবে অনুপ্রাণিত? এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। এ প্রশ্নের জবাব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেই দিতে হবে।

আরও পড়ুন: করেনি কিছু, তাই দায় নিতে নারাজ সিআরপি

অমিতাভ মালিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে, এমনটা মেনে নিতেও খুব সমস্যা হচ্ছে। মৃত্যু হওয়ার কথাই তো নয় তাঁর। এই রকম বিপদের মুখে পড়ার প্রশ্নই ওঠা উচিত নয়। কেন উচিত নয়? কারণ— প্রথমত, খুব বেশি দিন পাহাড়ে কাজ করছিলেন অমিতাভ মালিক, এমন নয়। অতএব, গোটা এলাকা তাঁর নখদর্পণে ছিল, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। তাই রাতের অন্ধকারে অচেনা পাহাড়ে-জঙ্গলে অভিযান চালানোর গুরুভার ওই তরুণ সাব-ইনস্পেক্টরের কাঁধে পড়ারই কথা নয়। দ্বিতীয়ত, বিমল গুরুঙ্গকে ধরতে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে উপযুক্ত প্রস্তুতি ছাড়া যাওয়ার কথা নয় পুলিশের। সম্প্রতি পুলিশই বার বার বলছিল, বিমল গুরুঙ্গ সশস্ত্র কার্যকলাপ শুরু করেছেন। পাহাড়ে-জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে বিমল গুরুঙ্গ দার্জিলিং-কালিম্পং-কার্শিয়াঙে হিংসা বহাল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই যদি হবে, তা হলে বিমল গুরুঙ্গকে তাঁর ডেরা থেকে পাকড়াও করার চেষ্টা হলে সশস্ত্র এবং হিংসাত্মক প্রতিরোধ যে হবে, সে কথা কি পুলিশ প্রশাসনের জানা ছিল না? যদি জানা থাকে, তা হলে বুলেটপ্রুফ সরঞ্জাম বা উপযুক্ত প্রস্তুতি ছাড়া কেন অভিযানে পাঠানো হল অমিতাভ মালিককে? তৃতীয়ত, বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে যে ধরনের অভিযান চালানো হয়, এক জন সাধারণ সাব-ইনস্পেক্টরকে সেই ধরনের অভিযানে পাঠিয়ে দেওয়া হল কোন বুদ্ধিতে? এই রকম গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে অমিতাভ মালিকের মৃত্যুকে ঘিরে। অতএব, পুলিশের সর্বোচ্চ মহল বা রাজ্য প্রশাসন এই মৃত্যুর দায় এড়াতে পারবে না। প্রশ্নগুলোর সদুত্তরও তাঁদেরই দিতে হবে।

পাহাড়ে অশান্তির আগুন এখনও বিপজ্জনক মাত্রায় বহাল। প্রশাসনের সব স্তরের মধ্যে উপযুক্ত সমন্বয়ের ভিত্তিতে এই আগুন নেভাতে হবে। সেখানে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের তরফে অসময়োচিত পদক্ষেপ। রাজ্য প্রশাসনের পদক্ষেপে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। এই ভাবে চললে পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে কবে, বলা শক্ত। কিন্তু অমিতাভ মালিকের মতো মর্মান্তিক পরিণতির মুখে পড়ার আশঙ্কা আরও অনেকের যে থেকে যায়, সে সহজেই অনুমেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE