Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

শিশুমৃত্যু ও রাজনীতি

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে নানা দল প্রতিযোগিতা করিবে। বাস্তব বিপরীত। স্বাস্থ্য বলিতে উন্নয়নের কয়েকটি নির্দিষ্ট সূচক বুঝিতেছে বিরোধীরা।

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

ফের পরপর অনেকগুলি শিশুমৃত্যু ঘটিল। এ বার আমদাবাদে। উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, গুজরাত, প্রতিটি রাজ্যেই ক্ষমতায় ভারতীয় জনতা পার্টি। অতএব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ দলনেতারা সমালোচনায় বিদ্ধ হইবেন, তাহা প্রত্যাশিত। কিন্তু বিজেপিকে অপদস্থ করিতেই কি ওই শিশুগুলি জন্মাইয়া বিদায় লইল? সরকারকে আক্রমণ করিয়াই কি বিরোধী, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিকদের কাজ ফুরাইয়াছে? শিশুমৃত্যুর পরিসংখ্যান আজ ভারতে কেবলমাত্র রাজনৈতিক আক্রমণের অস্ত্র। তাহা নিক্ষেপ করিবার জন্য হুড়াহুড়ি, তাহা এড়াইতে প্রশাসন তড়িঘড়ি একটি তদন্ত করিবার আদেশ দেয়। সাধারণত হাসপাতাল কিংবা বিভাগীয় প্রধানকে ছাঁটাই করিয়াই তাহাদের প্রতিকারের উদ্যোগ শেষ হয়। কোথায় ব্যর্থতা, কী করিয়া তাহা প্রতিহত করা যাইত, তাহার আলোচনায় শাসক বা বিরোধী, কেহ আগ্রহী নহে। এনসেফ্যালাইটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় মশকনিধন, হাসপাতালের শিশুবিভাগে আরও উন্নত প্রযুক্তির আমদানি করিয়া তাহার নিষ্পত্তি হইবে না। অনুরূপে, স্বল্প ওজনের কারণে শিশু মুমূর্ষু হইলে তাহার প্রতিকার মায়ের পুষ্টিবিধান। চিকিৎসায় বিলম্ব মৃত্যুর কারণ হইলে তাহার সমাধান জেলার হাসপাতালের উন্নতি। হাসপাতালের উপর তোপ দাগিয়া লাভ নাই।

আশা ছিল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে নানা দল প্রতিযোগিতা করিবে। বাস্তব বিপরীত। স্বাস্থ্য বলিতে উন্নয়নের কয়েকটি নির্দিষ্ট সূচক বুঝিতেছে বিরোধীরা। জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বৃহত্তর ছবিটি সম্পর্কে তাঁহাদের, কিংবা নাগরিক সমাজের আগ্রহ নাই। অতএব শাসক দলও কেবল কয়েকটি সংখ্যায় মনোনিবেশ করিয়াছে। ‘নিরাপদ প্রসব’ নিশ্চিত করিয়া প্রসূতিমৃত্যু কমাইতে সকল প্রসব হাসপাতালে করাইবার নীতি লইয়াছিল ভারত। তাহার পর হাসপাতালে প্রসব বাস্তবিকই বহুগুণ বাড়িয়াছে। কিন্তু হাসপাতাল প্রসূতি বা নবজাতকের জন্য কতটা ‘নিরাপদ’? বহু রাজ্যে অপুষ্ট মায়ের দুর্বল নবজাতকের যথাযথ পরিচর্যা করিবার মতো হাসপাতাল যথেষ্ট নাই, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত কর্মীও নাই। অতএব উচ্চতর হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হইতেছে। এই শৃঙ্খলার কোনও একটি সংযোগস্থলে বিলম্ব হইলেই শিশুরা মরিতেছে। গুজরাতে তাহাই হইয়াছে বলিয়া অনুমান।

অতএব নবজাতকদের বাঁচাইতে চাহিলে সর্বাগ্রে গ্রাম ও মফস্সল শহরের হাসপাতালগুলিকে বাঁচাইতে হইবে। পর্যাপ্ত কর্মী, নিয়মিত প্রশিক্ষণ জুগাইতে হইবে। নজরদারি ও মূল্যায়ন করিয়া কর্মীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করিতে হইবে। সেই সঙ্গে সমাজে অপুষ্টি এবং সংক্রমণ নিবারণের ব্যবস্থা করিতে হইবে। কয়েকশো টাকার খাবার খাওয়াইলে প্রসূতি সুস্থ-সবল সন্তান প্রসব করিতে পারিত। তাহার অভাবে তাহার অপুষ্ট সন্তান জন্মাইবে, এবং তাহাকে বাঁচাইতে রাজকোষ হইতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করিবে সরকার — কোন হিসাবে ইহা উত্তম নীতি? গোড়া কাটিয়া আগায় জল দিয়া লাভ নাই। বালিকা-কিশোরীর পুষ্টিবিধান, বালিকাবিবাহ নিবারণ, নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ, আবর্জনাহীন পরিবেশ, মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণ, এই গোড়ার কাজগুলি না করিলে শিশুমৃত্যু কমিবে না। আরও আধুনিক হাসপাতাল, আরও উন্নত শিশুবিভাগ গড়িয়া লাভ হইবে সামান্যই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child death Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE