Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

জীবনসূত্র

ত্যাগের দ্বারা ভোগ করো। ঈশোপনিষদের এই উপদেশ কেবল আধ্যাত্মিক সাধনার দিকনির্দেশ নহে। তাহা দৈনন্দিন জীবনে ভাল থাকিবার সূত্র। সেই সূত্রটি গ্রহণ করিয়া লাভবান হইয়াছেন পাপিয়া সেন ভট্টাচার্য।

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

ত্যাগের দ্বারা ভোগ করো। ঈশোপনিষদের এই উপদেশ কেবল আধ্যাত্মিক সাধনার দিকনির্দেশ নহে। তাহা দৈনন্দিন জীবনে ভাল থাকিবার সূত্র। সেই সূত্রটি গ্রহণ করিয়া লাভবান হইয়াছেন পাপিয়া সেন ভট্টাচার্য। কেবল খাদ্যের অভ্যাস পরিবর্তন করিয়া তিনি দুই বৎসরে বাষট্টি কিলোগ্রাম ওজন কমাইয়াছেন। যে সকল হাল্কা, পুষ্টিকর খাদ্যের অভ্যাস তিনি করিয়াছেন সেগুলি যে শ্রেয়তর, শর্করা ও স্নেহপদার্থ-বহুল যে খাদ্যগুলি ত্যাগ করিয়াছেন সেগুলি যে পরিত্যাজ্য, তাহা কোনও নূতন কথা নয়। পাপিয়াদেবীর খাদ্যতালিকা ব্যতিক্রমী নহে, তাঁহার সংযম ব্যতিক্রমী। যে কোনও গ্রহণেই রাখিতে হইবে কিছু বর্জন, যে কোনও উপভোগের মধ্যে কিছু উপেক্ষা, সেই সূত্রটি তিনি জীবনে গ্রহণ করিয়াছেন। বহু ব্যয়সাধ্য, খরচসাধ্য চিকিৎসা দ্বারা যে ফল হইয়া থাকে, তিনি প্রায় নিখরচায় তাহা লাভ করিয়াছেন। অস্ত্রোপচার-সংলগ্ন বহু ঝুঁকি এড়াইয়াছেন। এমন নহে যে সকল সময়েই কেবল সংযম অভ্যাস করিয়া অতিরিক্ত ওজন ঠেকাইবার অস্ত্রোপচার এড়ানো সম্ভব। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাহা একান্তই প্রয়োজন। কিন্তু সংযত জীবনযাত্রায়, সুষম খাদ্যাভ্যাসে অনেকেই যে তাহা এড়াইতেও পারেন, তাহার নিদর্শনও পূর্বে মিলিয়াছে। কেবল অতিরিক্ত ওজনই নহে। জীবনযাপনের শৈলীর জন্য যে নানা রোগ হয়, এবং জীবনযাত্রা পরিবর্তন করিলে তাহার উপশম হয়, ইহাও নূতন তথ্য নহে। অভাব জীবনে তাহার অভ্যাসের।

সেই অভ্যাস আনিবার কিছু প্রথা সমাজ নিজের অভ্যন্তর হইতেই সৃষ্টি করিয়াছে। তাহার একটি হইল প্রথাগত ধর্মের নানা রীতিনীতি। নানা ধর্মে কোনও একটি দিন, সপ্তাহ, পক্ষ বা মাস ‘পবিত্র’ বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়াছে, যখন সকল প্রকার বিলাসব্যসনে লাগাম পরাইতে হইবে। অপর উপায়টি খেলাধুলার সংস্কৃতির। পশ্চিমের দেশগুলিতে খেলাধুলার চর্চাকে সুস্থ, কর্মক্ষম জীবনের অঙ্গ হিসাবে ধরা হয়। তাহা সাফল্যের একটি উপায় বলিয়াও মনে করা হয়। মেদবহুলতা আলস্য ও উদ্যোগহীনতার লক্ষণ বলিয়া বর্জিত হয়। তৎসহ যৌন-আকর্ষণের শর্ত হিসাবেও সুগঠিত, মেদহীন দেহসৌষ্ঠবের জয়গান গাহিয়া চলে পশ্চিমি সংস্কৃতি। তাহার স্পর্শ এ দেশেও কিছুটা পড়িয়াছে। কিন্তু শৈশবের পর নিয়মিত খেলাধুলা এখনও এ দেশে অভ্যাস হয় নাই। বিশেষত প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের খেলিবার অবসর নাই, সুযোগও নাই।

তাই ওজন বাড়িতেছে সংক্রামক ব্যাধির ন্যায়, এবং ওজন কমাইবার কাজটি একটি শিল্পে পরিণত হইয়াছে।
নানা ক্লিনিক খুলিয়া কিছু আবশ্যক, কিছু অনাবশ্যক, কিছু ক্ষতিকর পদ্ধতি প্রয়োগ করিয়া ওজন কমাইবার ঘোরতর এক কার্যক্রম চলিতেছে। খিদে কমাইয়া ওজন কমাইবার নানা ‘ঔষধ’ প্রয়োগ করা হইতেছে। সহজে দ্রুত ওজন কমাইবার বিজ্ঞাপন আকর্ষণ করিতেছে অনেককেই। তাহাতে শরীরের প্রতিক্রিয়া কী হইবে, সে বিষয়ে সংশয় রহিয়া যাইতেছে।
একটি বিপদ এড়াইতে আরও বড় বিপদের আশঙ্কা ডাকিয়া আনা হইতেছে। পাপিয়া শুধু তাঁহার অধ্যবসায় ও ধৈর্য দিয়া সে সংকট এড়াইয়াছেন। তাঁহার জীবনকে আমূল পরিবর্তন করেন নাই, শুধু তাহার কেন্দ্রে রাখিয়াছেন আতিশয্যের বর্জন।
ইহা লক্ষণীয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Consume sacrifice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE