অনেক অস্বস্তি আর একরাশ দুশ্চিন্তার মাঝে বোধহয় একটু হলেও স্বস্তি পেলেন সুষমা স্বরাজ। ভারতীয় কূটনীতির মেঘাচ্ছন্ন আকাশে একটু আলো দেখা দিল। আন্তর্জাতিক ময়দানে আবার ধাক্কা খেল পাকিস্তান এবং ভারতের বক্তব্যই অন্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হল। পাকিস্তান ধাক্কা খেল নিজের দুষ্কর্মের কারণেই। তবে, সে দুষ্কর্মের হাঁড়িটা কূটনীতির হাটের মাঝখানে ভেঙে দেওয়ার নেপথ্যে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের ভূমিকা নেহাত্ কম নয়।
দিন কয়েক আগেই মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা রিপোর্টে ট্রাম্পের প্রশাসন পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গরাজ্য’ আখ্যা দিয়েছিল। এ বার সামরিক উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুত আর্থিক অনুদানও আমেরিকা আটকে দিল। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার যে প্রতিশ্রুতি পাকিস্তান দিয়েছিল, তা পাকিস্তান রাখেনি। এতএব আমেরিকাও প্রতিশ্রুত অনুদান দিতে বাধ্য নয়। কথাটা বেশ সোজাসাপটা ভঙ্গিতে জানিয়ে দিল আমেরিকা।
পাকিস্তানের ক্ষতি কিন্তু দ্বিবিধ। প্রথমত, বিপুল অঙ্কের তহবিল হাতছাড়া হল। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান যে সন্ত্রাস লালন করাকে প্রায় রাষ্ট্রীয় নীতি বানিয়ে ফেলেছে, সে সত্য আন্তর্জাতিক পরিসরে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হল।
পাকিস্তান যে সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল, পাকিস্তান যে সন্ত্রাসে মদত দেয়, পাকিস্তান যে সন্ত্রাসকে অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে, ভারতই সে কথা প্রথম জানিয়েছিল বিশ্বকে। ভারতের সে প্রতিবাদে কাজ খুব একটা হয়নি গোড়ায়। কিন্তু এত দিনে ফল কিছুটা মিলতে শুরু করল।
কূটনৈতিক নীতির প্রশ্নে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে রয়েছেন সুষমা। চিনের সঙ্গে টানাপড়েন এখন তুঙ্গে। কূটনৈতিক পথেই ডোকলাম সমস্যার সমাধান খোঁজা হবে বলে ভারত রোজ জানাচ্ছে। কিন্তু, ভারত ডোকলাম থেকে সেনা না সরালে কোনও কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হবে না বলে চিন জানাচ্ছে। কূটনৈতিক পথে ডোকলাম ইস্যু মিটিয়ে নিতে না পারা যদি সুষমার মন্ত্রকের জন্য প্রথম অস্বস্তি হয়, তা হলে দ্বিতীয় অস্বস্তি হল দেশের বিরোধী দলগুলি। ভারত ভ্রান্ত বিদেশ নীতি নিয়ে চলছে এবং তার জেরে বিভিন্ন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে বলে বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করছে। এই পরিস্থিতি কোনও বিদেশ মন্ত্রীর জন্যই যে সুখকর নয়, সে কথা বলে দিতে হবে না। সে সবের মাঝেই অবশেষে সুষমাদের কিছুটা স্বস্তি দিল আমেরিকা। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় চরিত্রের মূল্যায়নের প্রশ্নে ভারতীয় অবস্থানই এ বার আমেরিকার অবস্থান হয়ে উঠল।
শুধু সুষমা স্বরাজ নন, নরেন্দ্র মোদীও অবশ্যই স্বস্তি পাবেন। অনেক দিন পর কূটনীতির ময়দানে ভারত আবার একটু স্বস্তির শ্বাস ছাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy