Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয়

রোদন-কক্ষ

জাপানের টোকিয়ো শহরে একটি হোটেল মহিলাদিগের জন্য বিশেষ ‘কান্নাঘর’-এর ব্যবস্থা করিল, যেখানে গিয়া কোনও নারী প্রাণ খুলিয়া রোদন করিতে পারিবেন। রোদনে সহায়তা করিবার জন্য ঘরে মজুত থাকিবে অশ্রু-উদ্রেককারী সিনেমার ডিভিডি, চোখের জল মুছিবার অতি কোমল টিস্যু, এমনকী মেক-আপ তুলিবার বন্দোবস্ত। বিষণ্ণ ‘মাংগা’ কমিক্‌সও রাখা থাকিবে।

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

জাপানের টোকিয়ো শহরে একটি হোটেল মহিলাদিগের জন্য বিশেষ ‘কান্নাঘর’-এর ব্যবস্থা করিল, যেখানে গিয়া কোনও নারী প্রাণ খুলিয়া রোদন করিতে পারিবেন। রোদনে সহায়তা করিবার জন্য ঘরে মজুত থাকিবে অশ্রু-উদ্রেককারী সিনেমার ডিভিডি, চোখের জল মুছিবার অতি কোমল টিস্যু, এমনকী মেক-আপ তুলিবার বন্দোবস্ত। বিষণ্ণ ‘মাংগা’ কমিক্‌সও রাখা থাকিবে। রূপকথার গল্পে একটি করিয়া ‘গোসাঘর’ থাকিত, যেখানে ঢুকিয়া রাজকন্যা বা রাজপুত্রগণ প্রায়ই খিল দিতেন। আকুল রাজারানি প্রশ্ন করিয়া জানিতেন, তাঁহাদের সন্তানের বিবাহের ইচ্ছা হইয়াছে। কিন্তু আধুনিক জীবনে এত সরল নহে, মানুষের অধিকাংশ দুঃখেরই কোনও সমাধান নাই, তাই অশ্রু বিসর্জনের একটি স্বতন্ত্র কক্ষ সত্যই প্রয়োজন। বাড়িতে বসিয়া কাঁদিবার বহু অসুবিধা। লোকে প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার করিয়া দিবে। কাহাকেও শান্তিতে ক্রন্দন করিতে দিবার শিক্ষা এই সভ্যতা দেয় নাই। তদুপরি, ক্রন্দনের মূল কারণ প্রায়ই ওই প্রশ্নকারী মানুষটিই। অর্থাৎ, স্ত্রী যখন পাষণ্ড স্বামীর ঘর করিতে হইতেছে বলিয়া বালিশে মুখ গুঁজিয়া ফুঁপাইতেছেন, তখন সেই স্বামীই হামলাইয়া পড়িয়া ‘কী হইল? দাঁতের ব্যাথাটি ফের বাড়িয়াছে?’ ফুকারিলে কোন নারী মাথার ঠিক রাখিতে পারেন? আত্মীয়েরা বাড়িতে না থাকিলেও, সেল‌্সম্যানগণ ঘড়ি ঘড়ি কলিং বেল টিপিয়া একটি সুস্থ কান্নার দফা রফা করিয়া দিবে। তদুপরি, নারীদেরও ইদানীং প্রাণপণ অফিস করিতে হয়। কাঁদিবার জন্য সি.এল লইলে নিজের নিকটই হাস্যাস্পদ হইতে হইবে।

জাপানের বহু হোটেল এমন সকল ব্যবস্থা করে, যাহা শুনিয়া প্রথমটা হাসি পায়, পরে বুঝা যায়, ব্যবসায়-বুদ্ধি তাহাদের এক প্রকার সূক্ষ্ম বোধ দিয়াছে। কোনও হোটেল যখন বলে, এই স্থানে আপনি সামান্য মূল্যের বিনিময়ে বিড়াল বা কুকুরের সহিত খেলা করিতে পারিবেন, কারণ আপনার তো বাড়িতে পোষ্য রাখিবার সঙ্গতি নাই বা সেই ঝামেলা পোহাইবার মানসিকতা নাই, বা এই কাফে-তে আসিলে খরগোশকে আদর করিতে পারিবেন, তখন সেই প্রস্তাব আধুনিক মানুষের এক প্রকৃত সমস্যার প্রতিই নজর প্রদান করে। খুব কম সময়ের জন্য প্রণয়ীযুগলকে ঘর ভাড়া দিবার উপযোগিতা তো সহজেই বোধগম্য, বিশেষত রক্ষণশীল সমাজে। এমন স্থানও রহিয়াছে, যেখানে পুরুষ-ক্রেতা শয্যায় ঘুমাইতে পারিবেন অচেনা নারীর পার্শ্বে শুইয়া, তবে কোনও রূপ শারীরিক স্পর্শ নিষিদ্ধ। একটু ভাবিলে বুঝা যাইবে, জাপানের এই বহুবিধ ব্যবস্থার মূল সুর একটিই: মানুষের একাকিত্বের সাময়িক লাঘবের বন্দোবস্ত। আধুনিক মানুষ, যাঁহারা খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করিয়া ফেলিয়াছেন ও সারা দিন টাকার পিছনে প্রাণপণ দৌড়াইবার রুটিনে স্বেচ্ছায় ও সানন্দে বাঁধা পড়িয়াছেন, তাঁহাদের সর্বাধিক দুঃখের কারণ হইল নিঃসঙ্গতা। একটি পাখিকে অর্থহীন শব্দনিচয় বলিয়া কাছে ডাকিবার আরামটুকুও তাঁহাদের নিকট অকুলান। সেই কথা মাথায় রাখিয়া পণ্য পরিকল্পনা করিলে ক্ষতি কী? কাঁদিবার নিভৃত কক্ষটিও এই ধারণারই সন্তান। কেহ অবশ্য রাজনেতিক ঠিকতা-র বশে বলিতে পারেন, এই বন্দোবস্ত কেবল নারীদিগের জন্য করা হইয়াছে কেন? পুরুষরা কি কাঁদিতে পারেন না, না কাঁদিতে চাহেন না? এই মূহূর্তে সমাজ-নির্ণীত স্টিরিয়োটাইপ পুংগণকে প্রকাশ্যে কাঁদিবার অবকাশ দেয় না বলিয়াই, প্রকাশ্যে তাঁহাদের বীরের বর্ম পরিয়া বেড়াইতে বাধ্য করে বলিয়াই বরং তাঁহাদের কাঁদিবার আড়াল-কোটর তৈয়ারি অধিক প্রয়োজন। এই ধারণা জাপানকে দিলে, অচিরেই পুরুষ-ক্রন্দনের স্বতন্ত্র হোটেল নির্মিত হইবে, মনে হয়। তবে, ব্যবসায়টি আড়ালে চলিবে, পর্নোগ্রাফির ন্যায়। না হইলে, কাঁদিবার হোটেল হইতে দোর্দণ্ডপ্রতাপ অফিসার বাহির হইয়া আসিতেছেন দেখিলে কেরানিদিগের মধ্যে হাসিবার ধুম পড়িয়া যাইবে!

য ত্ কি ঞ্চি ত্

ডেনমার্কে নাকি আর নগদ টাকা ব্যবহারই হবে না। স্রেফ কার্ড আর মোবাইল দিয়ে টাকা-চালাচালি। অবশ্য অনেক দিন ধরেই ও-সব দেশে এই কাণ্ড চালু, দু’বছর আগেই সুইডেনে এক বেচারা ব্যাংক-ডাকাত স্তম্ভিত ও হতাশ, কারণ সেই ব্যাংকে একটিও নগদ টাকা নেই! সারা পৃথিবী এই ফর্মা পেলে, পকেটমার ও ভিখিরিদের কী দশা হবে? আর এটিএম-রক্ষীদের? তা ছাড়া, রাতদুপুরে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে গিয়ে গৃহস্থ যদি পাসওয়ার্ড বেমালুম ভুলে যান?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE