প্রৌঢ়ের মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল, আমাদের অমানবিক উদাসীন এক মুখকে।—নিজস্ব চিত্র।
এই নগর জীবন থেকে শৈশব চুরির অভিযোগ আসছিল অনেক দিন ধরে। সম্প্রতি উঠে এল শিশু চুরির গূঢ় অভিযোগ। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের নামেই হোক অথবা সেনার ভূমিকা, নানান ভঙ্গিতে চুরি হতে দেখছিলাম সৌজন্যকেও। এ বার দিনেদুপুরে চুরি হতে দেখলাম মানবিকতা নামের প্রাচীন গৌরবের এক স্তম্ভকে। শনিবার ব্যান্ডেলের এক এটিএম-এর লাইনের পাশে প্রৌঢ়ের মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল, আমাদের অমানবিক উদাসীন এক মুখকে।
এটিএম-এ লাইন দেওয়া অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ওই প্রৌঢ়। টেলিভিশন চ্যানেলে সারা দিন ধরে দেখানো ছবি দেখিয়ে দিল, কী ভাবে নিস্পৃহ এক দীর্ঘ সর্পিল লাইন তাঁকে পাশ কাটিয়ে এটিএম-এ ঢুকল এবং বেরিয়ে গেল— এমনকী মৃত্যুও যে সময়টায় সহনাগরিকদের সুযোগ দিচ্ছিল সাহায্যের হাত বাড়ানোর। বাড়াইনি আমরা কেউই। কারণ, সম্প্রতি যথাযথ নোটের অভাবে কিছুটা বেকায়দায় পড়া আমরা, আপনি বাঁচলে বাপের নাম এই মন্ত্রটি আওড়াতে আওড়াতে ঘরের দরজার খিলগুলো এঁটে দিচ্ছিলাম।
ব্যান্ডেলের এই দৃশ্য কি নিছকই প্রতীকী? ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বলেন, মেস্কিকোর সীমান্তে পাঁচিল তুলে দেবেন, ব্রিটেন যখন বলে বৃহত্তর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে আসাই ভাল, পর মতে অসহিষ্ণু সংস্কৃতির শিকড় যখন ধর্মে-বর্ণে প্রাচীর তোলে এ দেশেও, যখন ডিগ্লোবালাইজেশনই হয়ে দাঁড়ায় চলতি খেলার নিজস্ব রীতি, তখন কি আসলে এটিএমের সামনে এই দৃশ্যটাই বাস্তবের উপযোগী হয়ে ওঠে না?
চণ্ডীমণ্ডপের কালে অনেক গ্রাম্য প্যাঁচপয়জারেও আর্তের পাশে দাঁড়ানোর মানবিকতাটুকু হারাইনি আমরা। বিশ্বায়ন ছিল আরও এক ধাপ এগিয়ে পরস্পরের হাত ধরে এগিয়ে চলার প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ। নতুন এই সময়ে, কী ব্যক্তি কী সমষ্টি, সবাই যদি পাশে দাঁড়ানোর অভ্যাসটুকু ভুলে যাই, তার ধাক্কা সামলাতে পারব তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy