উড়ান সংস্থা ‘কোয়ান্টাস’-এর সিইও অ্যালান জয়েস সমকামী বিবাহকে সমর্থন জানানোয় অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি টেনিস খেলোয়াড় মার্গারেট কোর্ট জানাইয়াছেন, তিনি ওই সংস্থার বিমানে আর চড়িবেন না। অথচ ইদানীং বহু রাষ্ট্র সমকামের প্রতি বৈরী মনোভাব ত্যাগ করিতেছে, সমকামী বিবাহ বহু স্থানে আইনি স্বীকৃতি পাইয়াছে, সম্প্রতি তাইওয়ান সমকামী বিবাহের অনুমতি দিয়াছে, ওইটিই প্রথম এশীয় দেশ যাহা এই মানসিক প্রসার দেখাইল। বিশ্বখ্যাত টেনিস খেলোয়াড় মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, যিনি বহু দিন ধরিয়া ঘোষিত সমকামী, মার্গারেটকে ব্যঙ্গ করিয়া বলিয়াছেন, হয়তো পরের যাত্রা মার্গারেটকে করিতে হইবে নৌকায় চাপিয়া। মার্গারেট সংবাদপত্রে যে পত্রটি লিখিবার ফলে এই তর্ক ও আলোড়ন, তাহাতে তিনি লিখিয়াছেন, বিবাহ নামক পবিত্র বন্ধনটি কেবল এক নারী এবং এক পুরুষের মধ্যেই ঘটিতে পারে। তিনি শুনিলে নিশ্চয় স্তম্ভিত হইয়া যাইবেন, কেবল পুরুষে-পুরুষে বা নারী-নারীতে নহে, বিবাহ নারীর সহিত রেল স্টেশনেরও হইয়াছে! ক্যালিফোর্নিয়ার এক ৪৫ বৎসর বয়সি মহিলা বলিয়াছেন তিনি গত ৩৬ বৎসর ধরিয়া একটি স্টেশনকে ভালবাসিয়া আসিয়াছেন, আইনি ভাবে না হইলেও, অনুষ্ঠান করিয়া তাঁহাদের বিবাহ হইয়াছে, এবং মহিলা বলিয়াছেন, তাঁহাদের কায়িক ঘনিষ্ঠতা তিনি অনুভব করিতে পারেন।
২০১৩ সালে একটি মার্কিন ছবিতে এক পুরুষ ও এক অপারেটিং সিস্টেম বা ‘ওএস’-এর সম্পর্ক দেখানো হয়। ওই ওএস কম্পিউটার-ব্যবহারকারীর সহিত কথা বলিয়া ও কম্পিউটারে তাহার ক্রিয়াকলাপ দেখিয়া তাহার সম্পর্কে ক্রমাগত জানিতে থাকে ও তাহাকে সাহায্য করিবার চেষ্টা করে। মানুষটি ক্রমশ ওএস-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়, এবং দেখিতে থাকে যে অন্য যে কোনও মানুষ তাহাকে সাহায্য বা সাহচর্য দিলে বিনিময়ে তাহার নিকটে বন্ধুত্ব বা সঙ্গ কামনা করিতেছে কিন্তু ওএস কিছুই চাহিতেছে না। অথচ যখনই মানুষটি ওএস-এর পরামর্শ বা সঙ্গ চাহিতেছে তখনই সে অত্যন্ত উষ্ণতার সহিত তাহা প্রদান করিতেছে। এই নিঃশর্ত ঘনিষ্ঠতা মানুষটির হৃদয় জিতিয়া লয়, সে ওএস-এর সহিত প্রেম করিতে শুরু করে। ইদানীং প্রযুক্তি যে ভাবে সর্ব ক্ষণ আমাদের সঙ্গ দিতেছে, তাহাতে এই কাহিনিকে প্রবল কষ্টকল্পিত বলিয়া দাগিয়া দেওয়া যাইবে না। বরং ভবিষ্যতে নিজ মোবাইলের সহিত বা নিজ কম্পিউটারের সহিত বিবাহ প্রচলিত হইবার সম্ভাবনা প্রবল।
বৎসর সাত পূর্বে তাইওয়ানের এক ত্রিশ বৎসর বয়সি মহিলা নিজেকেই বিবাহ করিয়াছিলেন। একটি হোটেলে ঘটা করিয়া অনুষ্ঠান হইয়াছিল, মহিলা নিজের ডান হাত দিয়া নিজের বাম হাতে আংটি পরাইয়া দিয়াছিলেন, পরের দিন মধুচন্দ্রিমা করিতে চলিয়া গিয়াছিলেন, নিজের সহিত নিজে। ইহা লইয়াও কম রসিকতা হয় নাই, কিন্তু মহিলার যুক্তি ছিল, তিনি যখন নিজেকেই এই গ্রহে সর্বাধিক ভালবাসিয়াছেন, তখন নিজের সহিত থাকিবার এই অঙ্গীকার করিবার মধ্যেই কি আত্যন্তিক সততা নাই? কেহ বলিবে, নিজের সহিত তো থাকিতে হয় প্রত্যেককেই। কিন্তু এই মহিলার অঙ্গীকারের মধ্যে রহিয়াছে নিজেকে যত্ন করিবার, নিজেকে মর্যাদা দিবার, নিজেকে মর্যাদার উপযুক্ত করিয়া গড়িয়া তুলিবার এক সচেতন জাগ্রত পরিকল্পনা। মোট কথা হইল, একটি মানুষ যে কোনও কিছুকেই সর্বাধিক ভালবাসিতে পারেন। কথার ছলে কি বলি না, ওই কবি প্রকৃতপক্ষে তাঁহার কাব্যের সহিতই বিবাহিত ছিলেন? মানুষের ইতিহাসে এমন নারী আছেন যিনি প্যারিসের আইফ্ল টাওয়ারকে বিবাহ করিয়াছেন, এক নারী বার্লিনের প্রাচীরকে, এক নারী তাঁহার মৃত প্রাক্তন প্রেমিককে, এক পুরুষ একটি খ্যাত ভিডিয়ো গেম-এর চরিত্রকে। তাই এক মানুষ অন্য যে কোনও সম্মত মানুষের সহিত বিবাহগ্রন্থি রচনা করিলে, তাহা দেখিয়া অন্য মনোভাবাপন্ন কাহারও বিস্ময় বিরক্তি বিবমিষা জাগিতেই পারে, কিন্তু তাহা প্রকাশ্যে বলিয়া ওই বিবাহসম্পর্ককে অপমান করিবার প্রচেষ্টা নিন্দনীয়। অসামান্য টেনিস খেলোয়াড় ইদানীং ধর্মযাজক হইয়া পবিত্রতার ইজারা লইলেও, তিনি কোনও মানুষ বা গোষ্ঠী বা নির্দিষ্ট যৌন প্রবণতার প্রতি কুমন্তব্য করিলে তাহার সমালোচনা শুনিবেন, আর সংবাদপত্র মন দিয়া পড়িলে বিচিত্র বিবাহ-ইতিহাস সম্পর্কেও অবহিত হইবেন। অবশ্য তাহাতে তিনি সংবাদপত্র পাঠ ছাড়িয়া দিবেন কি না, বলা কঠিন!
যৎকিঞ্চিৎ
এ বলছে আমি মার খাব, ও বলছে আমি মার খাব। বোধ হয় যে বেশি মার খাবে সে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে গ্যাঁট। অন্য যে কোনও দল এই সুযোগে রোববার পত্তন করে সোমবার পাত্তা পাওয়ার দৌড়ে নেমে পড়ুক, কোনও কর্মসূচি দরকার নেই, আদর্শ তো অলীক কাণ্ড, জাস্ট ‘জলকামানে চান করিব’ জপতে জপতে ছাতা ছাড়া সদর দফতর অ্যাটাক! পুলিশও মর্ষকামী মিছিল বহু দিন দেখেনি, ‘মেরেছ লাঠির কানা, তাই বলে কি আর খাব না?’ শুনে তারাও কিঞ্চিৎ বেকুব!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy