Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

বিশ্ববিদ্যা লয়

কেবল ওই অধিবেশনে নহে, গত এক বৎসরে আইআইএম সংস্কারের সূত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক বহু বার স্বশাসনের মাহাত্ম্য লইয়া বক্তব্য পেশ করিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৭
Share: Save:

বিশ্বভারতীর সাম্প্রতিক সংবাদটি বিশেষ দুশ্চিন্তাজনক। দুশ্চিন্তা কেবল বিশ্বভারতীর জন্য নহে। গোটা দেশে সরকারি তত্ত্বাবধানে যে বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা চলিতেছে, গভীর দুশ্চিন্তা হয় তাহার জন্যও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রক হইতে রাষ্ট্রপতির নিকট উপাচার্য মনোনয়নের তালিকা যাইতেছে, রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত লইতেছেন, তাহার পর রাষ্ট্রপতিকে আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করিতে বলা হইতেছে, কেননা এ বার নূতন তালিকা তৈরি হইবে: গোটা ঘটনার মধ্যে কেবল সরকারি হস্তক্ষেপই নহে, সরকারের উদ্‌ভ্রান্ত দিশাহীনতার পরিচয় আছে। রাষ্ট্রপতি নিজ দায়িত্বে সিদ্ধান্ত লন না, সুতরাং বলিতেই হয় যে সরকারি দফতরের দোলাচলের এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত হইয়া থাকিল বিশ্বভারতীর ক্ষেত্রটি। আক্ষরিক অর্থে অভূতপূর্ব। ইতিপূর্বে আইআইটি রুরকিতে তুলনীয় একটি ঘটনা ঘটিয়াছে ঠিকই, কিন্তু সে ক্ষেত্রে অন্তত রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রক হইতে তাহা প্রত্যাহারের চাপ দেওয়া হয় নাই। বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন বিশ্ববিদ্যালয়, একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী আচার্য পদে অধিষ্ঠিত। সেই একটি প্রতিষ্ঠান লইয়া এত দূর অচলাবস্থা তথা দোলাচলাবস্থা— ইহাই বুঝাইয়া দেয় সরকারের কার্যবিধির সামগ্রিক পঙ্গুত্ব কতখানি। যাহার কোনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত লইবার গতি নাই, তাহার নিশ্চয়ই কোনও নীতি বা পদ্ধতিরও বালাই নাই। কিসের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি হয়, কিংবা তালিকা বাতিল হয়, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক কোন পথে চলিতে চাহেন, তাঁহারাই জানেন।

কিংবা তাঁহারাও জানেন না। মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর গত বৎসর সংসদের বাজেট অধিবেশনে প্রত্যয়ী ঘোষণা করিয়াছিলেন যে দেশের শিক্ষানীতির খোলনলিচা এমন ভাবে পালটাইবে ও ‘রিড্রাফ্ট’ হইবে যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হইতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি নির্ভরতা দ্রুত বাড়িয়া যাইবে। ইতিমধ্যে বৎসর ঘুরিয়াছে, বর্তমান মন্ত্রকের সময়ও ফুরাইবার পথে, অথচ এখনও কোনও ড্রাফ্ট বা রিড্রাফ্ট-এর দেখা মিলিল না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নাকি অনেক বেশি স্বশাসন দেওয়ার কথা, কেননা স্বশাসনই মান-উন্নয়নের নিশ্চিত পথ। অথচ বিশ্বভারতীর একটি উদাহরণই বলিয়া দেয়, স্বশাসন তো দূর অস্ত, সরকারি হস্তক্ষেপের সর্বাধিক সুবিধা কী ভাবে নিশ্চিত হইবে, ইহা ভিন্ন মন্ত্রক আর কিছু ভাবিতেছে না। মাঝখান হইতে শ্বাসরোধ হইয়া মরিতে বসিয়াছে বিদ্যার অঙ্গন।

কেবল ওই অধিবেশনে নহে, গত এক বৎসরে আইআইএম সংস্কারের সূত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক বহু বার স্বশাসনের মাহাত্ম্য লইয়া বক্তব্য পেশ করিয়াছে। স্বাধীন গবেষণাই নূতন দিগন্ত খুলিবার পথ, সুতরাং ‘রিসার্চ’ বা গবেষণা ও ‘ইনোভেশন’ বা উদ্ভাবনের দিকে হাঁটিতে হইবে: জাভড়েকর ঘোষণা করিয়াছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের রীতিপদ্ধতিও পালটাইতে হইবে, তাহার অঙ্গুলিহেলনের পরিসর কমাইতে হইবে, এমনও শোনা গিয়াছে। এত কথা তাঁহারা না বলিলেই পারিতেন। কথার মস্ত অসুবিধা, সেগুলি নথিপত্রে থাকিয়া যায়। এবং কেবলই অতীত হইতে ভাসিয়া আসিয়া বর্তমানের গয়ংগচ্ছতা ও সরকারি পেশিচালনার বিপক্ষে সমালোচনার তীক্ষ্ণ ফলা উঁচায়। জাভড়েকররা আর একটু সতর্ক হইলে পারিতেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE