ফেসবুকে একটি রসিকতা ঘুরিতেছে। বৎসরে বারোটি মাস থাকা সত্ত্বেও এই প্রবল গ্রীষ্মেই কেন নির্বাচন আয়োজিত হয়, সেই প্রশ্নের উত্তরে এক রসিক নাগরিক জানাইয়াছেন, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রে যে ছবিটি থাকে, রোদে পুড়িয়া, ঘামে ভিজিয়া ভোটারদের চেহারাটি ঠিক তেমনই হয়। ছবি মিলাইবার সুবিধার্থেই এই সময়ে ভোট। বিষয়টি যদিও রসিকতার নহে। এপ্রিল-মে মাসে তামিলনাড়ু বা পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় রাজ্যে কী অবস্থা হয়, তাহা জানিতে আবহাওয়াবিদ হওয়ার প্রয়োজন নাই। নেহাত প্রাণের দায় না থাকিলে যে গরমে কেহ রাস্তায় বাহির হইবার কথা ভাবেন না, সেই ঋতুকেই ভোটের জন্য বাছিয়া লওয়া কেন? এই প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর: প্রথা। যেহেতু এই রাজ্যগুলিতে এই সময়েই ভোট হইয়া আসিতেছে, অতএব পাঁচ বৎসরের হিসাবটি বজায় রাখিতে এই প্রবল গ্রীষ্মেই ভোট। কাণ্ডজ্ঞান বলিবে, প্রথাটির বদল প্রয়োজন। ভোট এক দিনের কাজ নহে। ভোটকর্মীরা এই গরমেই ভোট করাইতে যান। পুলিশকর্মীরা এই খর সূর্যকে মাথায় লইয়াই দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক কর্মীরা প্রচারে বাহির হন। অসুস্থতার সংবাদ অবিরল। এমনকী, মৃত্যুও ঘটিয়াছে। অন্য কোনও সময় নির্বাচনের আয়োজন করা যায় কি না, ভাবিয়া দেখিবার সময় আসিয়াছে। রাজনৈতিক দলগুলি উদ্যোগী হইতে পারে।
নির্বাচন মানে যে সাধারণ মানুষের সুনিশ্চিত অসুবিধা, এই কথাটি জনমানসে ক্রমে গাঁথিয়া যাইতেছে। কলিকাতা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় তিন দফার ভোটে দেখা গেল, রাস্তায় গণপরিবহণের চিহ্নমাত্র নাই। শুধু নির্বাচনের দিনই নহে, মধ্যবর্তী দিনগুলিতেও রাস্তাঘাট বাসবিরল। যাহা দুই চারটি চলিতেছে, তাহাতে তিলধারণের স্থান হইলেও হইতে পারে, মনুষ্যদেহের নহে। কারণ, নির্বাচন উপলক্ষে প্রশাসন বাস দখল করিয়া লইয়াছে। নির্বাচনের জন্য যে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সরকারি কর্মীর পরিবহণের প্রয়োজন হয়, তাহার জন্য বাস লাগিবে, তাহা স্বাভাবিক। সেই বাস জোগাড় করিতে হইলে রাস্তার বাসেই হাত পড়িবে, তাহাও স্বাভাবিক। কিন্ত, যে পদ্ধতিতে কাজটি হইয়া থাকে, তাহার মধ্যে অবিবেচনার ছাপ প্রবল। প্রথম কথা, গণপরিবহণকে ব্যাহত না করিয়া অন্য কোনও ভাবে বাস জোগাড় করা যায় কি না, সেই খোঁজ করিতে হইবে। নিতান্তই যদি গণপরিবহণের বাস লইতে হয়, কোন রুট হইতে কয়টি বাস লওয়া হইবে, সেই সিদ্ধান্তটিও বিবেচনাহীন ভাবে করা অন্যায়। সর্বোপরি, বাস দখলের ক্ষেত্রে যে গা-জোয়ারির ভাব দেখা যায়, তাহা পরিত্যাজ্য। আলোচনার মাধ্যমে, মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করিয়াই এই গোত্রের কাজ সম্ভব।
এই আপাত-তুচ্ছ অসুবিধার কথাগুলি আলোচনার বাহিরেই থাকিয়া যায়। তাহার কারণটিও বোঝা সম্ভব। অনুব্রত মণ্ডলদের সামলাইতে, পুলিশ-প্রশাসনকে শাসকদলের মুষ্টি হইতে বাহির করিয়া আনিতে, ভূতের উৎপাত বন্ধ করিতেই সব শক্তি খরচ হইয়া যায়। সাধারণ মানুষ যাহাতে নির্ভয়ে নিজেদের ভোটগুলি দিতে পারেন, তাহা নিশ্চিত করিতেই এত ঝামেলা পোহাইতে হয় যে তাঁহাদের সুবিধা-অসুবিধার দিকে নজর দেওয়ার আর অবকাশ থাকে না। কিন্তু, এই যুক্তিটি ব্যবহার না করাই ভাল। নির্বাচন কোনও আকস্মিক ঘটনা নহে। অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটিলে পশ্চিমবঙ্গে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন যে ২০২১ সালে, অথবা আগামী লোকসভা নির্বাচন ২০১৯-এ, তাহা একেবারে নির্দিষ্ট। অতএব, সময় লইয়া প্রস্তুত হউন। ভাবুন। সাধারণ মানুষের সমস্যার কথাটি বিস্মৃত না হইলে সমাধানও অমিল হইবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy