স্বাধীনতাকে ভয় পাইলে কি চলে? জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় আদি প্রতিষ্ঠানের বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা এই প্রশ্নটির উত্তর সন্ধান করিতে পারেন। তাঁহাদের সংশয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দেশের মোট ৬১টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যে পূর্ণ স্বশাসনের অধিকার দিয়াছে, তাহা বিপরীত ফলদায়ী হইবে। শিক্ষা ক্রমে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হইবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরও বেশি স্বৈরাচারী হইয়া উঠিবে। উচ্চশিক্ষার মূল উদ্দেশ্যটিই এই আপাত-উদারতার মাঠে মারা যাইবে। ভয়গুলি সম্পূর্ণ অমূলক নহে, কিন্তু এই পরিণতি অনিবার্যও নহে। স্বশাসনের অধিকারটি কী ভাবে ব্যবহার করিবে, তাহাই নির্ণায়ক হইবে। শিক্ষাকে নির্জলা বাণিজ্যিক পণ্য বলিয়া দাবি শিকাগো স্কুলও করিবে না। কিন্তু, উচ্চশিক্ষা কেন শুধু খয়রাতিতেই চলিবে, তাহারও যুক্তি নাই। এবং, ইউজিসি-র নির্দেশিকায় নূতন পাঠ্যক্রমের ক্ষেত্রেই ব্যয়ভার বহনের দায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর ন্যস্ত হইয়াছে। পুরাতন পাঠ্যক্রমগুলির ক্ষেত্রে সম্ভবত যে ব্যবস্থা ছিল, তাহাই থাকিবে। নূতন কোর্সের ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্তের অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের— প্রয়োজনে ‘ক্রস সাবসিডি’র ব্যবস্থা করা যাইতে পারে। অর্থাৎ, যে ছাত্ররা পাঠ্যক্রমের ব্যয়ভার বহনে সক্ষম, তাহাদের হইতে টাকা তুলিয়া অভাবী ছাত্রদের জন্য কম খরচের ব্যবস্থা করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এনডাওমেন্ট জোগাড় করিতে পারে। উপায় অনেক। ব্যবহারের অধিকারও অবাধ। কোন প্রতিষ্ঠান তাহা কত দূর করিতে পারিবে, তাহা প্রতিষ্ঠানের উপরই নির্ভর করিতেছে।
স্বশাসনের সূত্রে বেসরকারি পুঁজির অনুপ্রবেশের প্রশ্নও উঠিতেছে। পুঁজির সহিত প্রকৃত উচ্চশিক্ষার কোনও বিরোধ নাই, বরং সাযুজ্য রহিয়াছে। টাকা লইলেই যে শিক্ষায় অথবা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় পুঁজির হস্তক্ষেপ মানিয়া লইতে হইবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নাই। কী ভাবে পুঁজির চাপ সামলানো যায়, তাহা শিখিতে হইবে। সেই কাজটিতে সাফল্য নির্ভর করিতেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের জোরের উপর। কর্তৃপক্ষের স্বৈরাচারী হইয়া উঠিবার আশঙ্কাটির উত্তরও এই গণতন্ত্রই। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে আলোচনার পরিসরগুলিকে মজবুততর করিতে হইবে, রাষ্ট্রীয় খবরদারিও ঠেকাইতে হইবে। মঞ্জুরি কমিশনের কর্তালি যদি কমে, তবে কাজটি অপেক্ষাকৃত সহজ হওয়ারই কথা। কিন্তু, সতর্ক থাকিতে হইবে। নিরন্তর নজরদারিই স্বাধীনতার মূল্য, এই কথাটি ভুলিলে চলিবে না।
পূর্ণ স্বশাসনের অধিকার সব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমান ফলদায়ী না-ই হইতে পারে। কোনও প্রতিষ্ঠান এই স্বাধীনতাকে ব্যবহার করিতে পারে নূতনতর উচ্চতায় পৌঁছানোর কাজে, আবার অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান স্বশাসনের স্রোতে ভাসিয়া বিপর্যয়ের ঘাটে উঠিতে পারে। স্বাধীনতার ধর্মই এই। কোনও প্রতিষ্ঠান যদি ক্রমাবনতির ঢালে গড়াইয়া যায়, মঞ্জুরি কমিশন কি ফের তাহার রাশ ধরিতে পারে? তাহা অত্যন্ত ভুল হইবে। স্বাধীনতার সিদ্ধান্তটি অ-প্রত্যাহারযোগ্য। কোনও প্রতিষ্ঠান যদি তলাইয়া যায়, তবে তাহা সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের ভুল। সেই অবনমন ঠেকাইবার দায়িত্বও অভ্যন্তরীণ হওয়াই বিধেয়। যদি কোনও প্রতিষ্ঠান নিজেকে সামলাইতে না পারে, তবে ভাসিয়া যাওয়াই ভবিতব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy