Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জরুরি অবস্থা

গোটা দুনিয়ায় এই কারণে যে ৯০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়, তাহাদের ২৮ শতাংশই এই মহান দেশের নাগরিক। শুনিয়া ছাতি ফুলিয়া যাইতে পারে যে, বায়ুদূষণের কারণে ভারতে ওই বৎসরে প্রাণ হারাইয়াছেন ১৮ লক্ষ মানুষ আর জলদূষণের জন্য সাড়ে ছয় লক্ষ মানুষ।

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

কো নও কোনও বিষয় আছে, যাহা লইয়া আলোচনা কঠিন কাজ, আর আলোচনা না করা কঠিনতর কাজ। এই মুহূর্তে ভারতের বায়ুদূষণ তেমন একটি বিষয়। অতিচর্চিত অতি-তর্কিত এই বিষয়টি লইয়া আবারও কিছু বলা, কিংবা শোনা এবং পড়া, যথেষ্ট ক্লান্তিকর। কিন্তু ইহা লইয়া কিছু না বলা— ভয়ংকর রকমের বিপজ্জনক। বিষয়টি এমন জরুরি অবস্থায় পৌঁছাইয়াছে যে সোজা কথা সোজা ভাষাতেই বলা ভাল: সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য-মতে, ভারত এই মুহূর্তে বিশ্বের মধ্যে দূষণজনিত মৃত্যুতে প্রথম স্থানে! ল্যান্সেট পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ভারতে দূষণজনিত মৃত্যুর সংখ্যা পঁচিশ লক্ষ। গোটা দুনিয়ায় এই কারণে যে ৯০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়, তাহাদের ২৮ শতাংশই এই মহান দেশের নাগরিক। শুনিয়া ছাতি ফুলিয়া যাইতে পারে যে, বায়ুদূষণের কারণে ভারতে ওই বৎসরে প্রাণ হারাইয়াছেন ১৮ লক্ষ মানুষ আর জলদূষণের জন্য সাড়ে ছয় লক্ষ মানুষ। ইহার মধ্যে হৃদ্‌যন্ত্রঘটিত, ফুসফুসঘটিত সব রকম রোগই আছে, ফুসফুসের ক্যানসার যাহার মধ্যে একটি বিরাট অংশ দখল করে। আরও কতগুলি তথ্য ইহার সঙ্গে জুড়িয়া দিলে কলিকাতাবাসীর গর্ব উৎপাদন করা যাইতে পারে: যেমন, গোটা বিশ্বের দূষণ-মানচিত্রে প্রধান দূষিত স্থান হিসাবে যেগুলি মার্কামারা হইতে পারিয়াছে, তন্মধ্যে কলিকাতার একটি অঞ্চল সগর্বে বিরাজমান, যাহার নাম তিলজলা-পিকনিক গার্ডেনস।
এ ছাড়া ওই মানচিত্রে বিহারের আরা আছে, ভেলোরও আছে। দিল্লি অবশ্যই একটি দূষণকেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হইয়াছে যেখানে দূষণমাত্রা ‘ইমার্জেন্সি’ মাত্রা ছাড়াইয়া গিয়াছে। সংক্ষেপে, ইহাই হইল চিত্র। চিনের সহিত নাকি ভারতের পদে পদে সাংঘাতিক প্রতিযোগিতা। অথচ দূষণমাত্রায় চিন ভারতকে কিছুটা পিছনে ফেলিলেও দূষণঘটিত মৃত্যুর হিসাবে কিন্তু ভারত চিনকে অনেক দূর ছাড়াইয়া গিয়াছে।

আর সেই চিত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় ও কলিকাতাবাসীরা কী করিতেছে তাহা গত দুই দিনের দীপাবলির অভিজ্ঞতাতেই প্রমাণিত। বাস্তবিক, সামগ্রিক চিত্রের ভয়ংকরতা মাথায় রাখিলে, এই বার দীপাবলিতে শব্দবাজির দাপট কিংবা আতসবাজির ধোঁয়া কয় ছটাক কমানো গেল, সেই হিসাব নেহাতই অপ্রাসঙ্গিক। দেশের অবস্থা যেমন, তাহাতে আত্মসংশোধনের পথে অতি দ্রুত দৌড়ানো দরকার, তবেই যদি শেষরক্ষা হয়। ইহা ঠিক যে, এ বার দিল্লিতে আদালতের নির্দেশ মান্য হউক না হউক, একটি সুফল ফলিয়াছে, গোটা জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে এ বিষয়ে সচেতনতা অনেক দূর বাড়িয়াছে। অনেকেই অবশ্য নির্দেশের বিপক্ষে, তথ্যপ্রমাণের সত্যতা বিষয়ে সন্দিহান, সংকটের স্বরূপ তাহাদের কাছে পরিহাসের বিষয়। কিন্তু লক্ষণীয়, এমনকী এই গোত্রের মধ্যেও দূষণবিষয়ক আলোচনা ছড়াইতেছে: সমালোচনাও তো এক প্রকারের আলোচনা! শুধু দিল্লি নহে, ভারতের অন্যত্রও, এমনকী এই স্বভাবনিদ্রিত কলিকাতাতেও দূষণ সম্পর্কে চেতনা কিঞ্চিৎ উন্নত হইতেছে। এইটুকুই আশা।

তবে, আশামাত্র। পরিবর্তন ঘটাই একমাত্র সমাধান নয়, পরিবর্তনকে দ্রুত ঘটিতে হইবে। এত দ্রুত যে তাহা যেন তথ্যের গতি উল্টা দিকে ঘুরাইয়া দিতে পারে, মৃত্যুসংখ্যা থামানোই নয়, ভারতকে দূষণভয়াবহতার বিশ্বতালিকায় ঠেলিয়া নীচে নামাইয়া দিতে পারে। বাজি লইয়া তর্কবিতর্ক এ যাত্রা জমিয়া উঠিল, ভাল কথা, কিন্তু আসল সমস্যা বাজি নহে। বৎসরভর যে যানবাহনজনিত, শিল্পজনিত, দহনজনিত দূষণে রাজধানীর প্রাণ ওষ্ঠাগত, কলিকাতার মধ্যস্থলে যে পরিমাণ রাসায়নিক ও জৈব দূষণ মহাপরাক্রমে প্রসারিত হইয়া চলিতেছে, সেই সবের ব্যবস্থা কী হইবে, কে করিবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Air Pollution Global Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE