Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Education

দৃষ্টান্তটা ইতিবাচক, তবে প্রশাসনের তরফে আরও সক্রিয়তা কাম্য

বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে পপি দত্ত উচ্চমাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ নম্বর পাওয়ার পর আর পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চারদিকে অন্ধকার গাঢ় হচ্ছিল যেন। বাবার পক্ষে উচ্চশিক্ষার খরচ টানা যে অসম্ভব, তার চেয়ে অমোঘ সত্য জীবনে আর কিছুই ছিল না।

মেধাবী: পপি দত্ত। নিজস্ব চিত্র

মেধাবী: পপি দত্ত। নিজস্ব চিত্র

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ০৫:৪৩
Share: Save:

একটা ভাল দৃষ্টান্ত তৈরি হল। মেধাবী পড়ুয়ার ছাত্রজীবন শেষ হয়ে যেতে যেতে বেঁচে গেল। কোনও কাকতালীয় ঘটনার জেরে বা আশ্চর্য সমাপতনের কারণে এ সব ঘটল, এমন নয়। স্বাভাবিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়েই বরং পপি দত্ত তাঁর প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেললেন এবং উচ্চশিক্ষার সিঁড়ি খুঁজে নিলেন। একই সঙ্গে এই স্পষ্ট হল যে অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা মেধার বিকাশের পথে আজ আর খুব বড় বাধা নয়। সহযোগিতার জন্য অনেক হাত প্রস্তুত আজ, শুধু খুঁজে নেওয়ার আগ্রহ এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তিটা জরুরি।

মেধা আর অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য যে সব সময় সহাবস্থান করে না, সে ধ্রুব সত্য। মেধাবী পড়ুয়ার উচ্চশিক্ষার দরজা অর্থনৈতিক কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে, এমন দৃষ্টান্ত অনেক রয়ছে। আবার এমন দৃষ্টান্তের সন্ধান পেলেই এ সমাজ তথা এ প্রশাসন সক্রিয় হয়েছে, তেমন দৃষ্টান্তও ভূরি ভূরি তুলে ধরা যায়। পপি দত্ত নিজের দুর্দশার কথা সর্বসমক্ষে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিলেন, সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন, অবিলম্বে সহায়তার আশ্বাসও পেয়েছেন। কিন্তু নিজেদের দুর্দশার কথাগুলো বা একান্ত জরুরি চাহিদার কথাগুলো তুলে ধরার জায়গাই যাঁরা খুঁজে পান না, তাঁদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। নজর দেওয়া দরকার সে দিকটাতেও।

বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে পপি দত্ত উচ্চমাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ নম্বর পাওয়ার পর আর পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চারদিকে অন্ধকার গাঢ় হচ্ছিল যেন। বাবার পক্ষে উচ্চশিক্ষার খরচ টানা যে অসম্ভব, তার চেয়ে অমোঘ সত্য জীবনে আর কিছুই ছিল না। কিন্তু সত্যের মতো মেধার শক্তিও অমোঘ হয়ে ধরা দিল। তাই সংবর্ধনার মঞ্চেই আঁধার কাটল। পপির প্রতিবন্ধকতার কথা শুনেই, মন্ত্রী থেকে আমলা, সকলে সাহায্যের হাত বাড়ালেন। কিন্তু পপি দত্তকে দু’দিন আগে পর্যন্ত যে আঁধার ঘিরে ছিল, আজ আর কারওকে তেমন দুর্ভাগ্যের আঁধার ঘিরে নেই, এ কথাও হলফ করে বলা যায় না। তাই পপিদের স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে খুঁজে নেওয়ার চোখটাও এ সমাজের তথা প্রশাসনের তৈরি হওয়া উচিত।

মেধাবী পড়ুয়া নিজে উপযুক্ত মঞ্চ চিনে নেবেন, উচ্চশিক্ষার সুযোগ চেয়ে আর্তি জানাবেন, তার পর প্রশাসন এবং সমাজ অগ্রসর হবে, পদ্ধতিটা এ রকম হওয়া কাম্য নয়। প্রশাসন এবং সমাজ স্ব-উদ্যোগে মেধাবীকে চিনে নেবে, প্রতিবন্ধকতাও বুঝে নেবে, বন্দোবস্তটা তেমনই হওয়া উচিত। সেটাই বিজ্ঞানসম্মত। মিডিয়া অনেকখানি দায়িত্ব পালন করছে এখন। অনেক প্রান্তিক ঘরে-দুয়ারে সে আলো ফেলছে। সে ভূমিকা প্রশংসনীয় হলেও আত্মসন্তুষ্টির অবকাশ অবশ্য এখনও নেই। আলোকবৃত্তটা আরও প্রসারিত হওয়া সম্ভব, আর ও অনেক গভীরে পৌঁছনো সম্ভব। প্রশাসন এবং সমাজ যদি সমন্বয় রেখে চলতে পারে গণমাধ্যমের সে উদ্যোগের সঙ্গে, তা হলেই অনেক পপি দত্তর কাজ সহজ হয়ে যাবে। নিকষ অন্ধকার থেকে আরও অনেক মণি-মুক্তো তুলে আনা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE