Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
প্রবন্ধ

সহজ ছবিটা নষ্ট চোখে না দেখলেই নয়?

উপার্জনে, শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে আমাদের মুসলিম সমাজ অনেক পিছিয়ে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি তারই ফল। এবং ঘটনা হল, সেই বৃদ্ধির হার কমছে। অথচ হিন্দুত্বের রাজনীতির ধ্বজাধারীরা ‘গেল গেল’ রব তুলছেন। দশচক্রে মিথ্যেটাকে সত্যি করে তোলার তৎপরতা চলছে।বে চারা কর্ণ। অর্জুনকে বধ করার জন্য তাঁর তূণে একাঘ্নী অস্ত্র ছিল। কিন্তু পাঁচ জনের চাপাচাপিতে সে অস্ত্র ঘটোৎকচের ওপর বাজে খরচ করে ফেলতে হয়। অস্ত্রটি মোক্ষম, কিন্তু আজকের ভাষায়, ‘সিঙ্গল ইউজ’ ছিল— তাকে এক বারই মাত্র ব্যবহার করা চলে।

দেখলে ভয় লাগে বুঝি? রেড রোড, কলকাতা, ২০১৪। ছবি: সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।

দেখলে ভয় লাগে বুঝি? রেড রোড, কলকাতা, ২০১৪। ছবি: সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।

অমিতাভ গুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

বে চারা কর্ণ। অর্জুনকে বধ করার জন্য তাঁর তূণে একাঘ্নী অস্ত্র ছিল। কিন্তু পাঁচ জনের চাপাচাপিতে সে অস্ত্র ঘটোৎকচের ওপর বাজে খরচ করে ফেলতে হয়। অস্ত্রটি মোক্ষম, কিন্তু আজকের ভাষায়, ‘সিঙ্গল ইউজ’ ছিল— তাকে এক বারই মাত্র ব্যবহার করা চলে। নরেন্দ্র মোদীকে দেখলে তাঁর নির্ঘাত হিংসে হত। ভোটের বাজারে তাঁর তূণেও একটি অমোঘ অস্ত্র আছে— ধর্মভিত্তিক জনশুমারির ফলাফল। অস্ত্রটি একেবারে ছপ্পড় ফুড়ে পাওয়া। মনমোহন সিংহ সাহস করে সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে উঠতে পারেননি। নরেন্দ্র মোদী দেখিয়ে দিয়েছেন, কী ভাবে সেই অস্ত্রের ব্যবহার ও পুনর্ব্যবহার সম্ভব। বিহারের মহাগুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়তেই রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া-র অফিস থেকে প্রকাশিত হল ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার পরিসংখ্যান। তার আগে, জানুয়ারি মাসে, কী করে যেন ফাঁস হয়ে গিয়েছিল এই পরিসংখ্যানটাই। কী করে হয়েছিল, অনুমান করতে সমস্যা নেই, কারণ তখন দরজায় কড়া নাড়ছিল দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের আগেও আরও এক বার ব্যবহৃত হবে এই পরিসংখ্যান, আশা করতে দোষ কী?

নিছক একটা পরিসংখ্যানই তো। ভোটের রাজনীতির ময়দানে তা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কেন? ভারতে মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হিন্দুদের তুলনায় বেশি, অথবা গত দশ বছরে জনসংখ্যায় মুসলমানদের অনুপাত ০.৮ শতাংশ-বিন্দু বেড়েছে, এই হিসেব বেশ করে ছড়িয়ে দিতে পারলেই হিন্দু ভোটের সিংহভাগ জমা পড়বে বিজেপি-র ঝুলিতে— এমন ধারণা কেন ভাসে জাতীয় রাজনীতির হাওয়ায়?

প্রশ্নটা জরুরি। এবং, তার উত্তর ভারতের বহুত্বের পক্ষে সুসংবাদ নয়। সত্যি কথা হল, মুসলমানরা প্রবল ভাবে জনসংখ্যা বাড়িয়ে ক্রমে ভারত নামক দেশটাকে ‘দখল’ করে নেবে, হিন্দুরা ‘নিজভূমে পরবাসী’ হবে— দেশের প্রায় একশো কোটি হিন্দুর একটা বড় অংশ স্বেচ্ছায় এই সুপরিকল্পিত গুজবে বিশ্বাসী। অতএব, এই গুজব়টাকেই যদি পরিসংখ্যানের মাটিতে দাঁড় করানো যায়, ভোটের বাজারে তার দাম তো থাকবেই। ঘৃণার সঙ্গে ‘প্যারানয়া’-র মিশেলের কোনও মার নেই।

অনুমান করা যায়, আবারও সঙ্ঘ পরিবারের বড়দা-মেজদারা হিন্দুদের অন্তত চারটি করে সন্তান উৎপাদন করতে বলবেন, সাধ্বী প্রাচীরা মনে করিয়ে দিতে পারবেন কী ভাবে ‘প্রত্যেক মুসলমান মহিলা ৪০টি করে সারমেয়ের জন্ম দিয়ে চলেছে’। সবচেয়ে বড় কথা, এখন তাঁদের মাথার ওপর নরেন্দ্রভাই আছেন, যিনি ২০০২-এর দাঙ্গার পর তৈরি হওয়া মুসলমান শরণার্থী শিবিরগুলোকে ‘সন্তান উৎপাদনের কারখানা’ বলেছিলেন।

ডাহা মিথ্যে ও পরিসংখ্যান

ভারতে কেন হিন্দুদেরই সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকতে হবে, মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে সমস্যা কোথায়, সঙ্ঘ পরিবারের কাছে এই প্রশ্ন করে লাভ নেই। তাঁরা আরও এক দফা অলীক আতঙ্কের গল্প শোনাবেন। সেই গল্পগুলো চেনা, এখানে তার পুনরাবৃত্তি অপ্রয়োজনীয়। কেন সঙ্ঘের রাজনীতি সেই গল্পগুলোকে কেন্দ্র করেই ঘোরে, কেন ভারতে পাকিস্তান তৈরি হওয়ার জুজু দেখিয়ে তাঁরা আসলে ভারতকে একটা ‘হিন্দু পাকিস্তান’ বানানোর খোয়াব দেখেন, সেই প্রশ্নগুলো জরুরি, কিন্তু আপাতত সেই প্রশ্নে ঢুকব না। বরং দেখব, সঙ্ঘ পরিবার ভোটের বাজারে যে ‘আতঙ্ক’ ফিরি করে, সেটা কত দূর সত্যি। অদূর ভবিষ্যতে কি মুসলমানরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারেন?

২০০১ থেকে ২০১১ অবধি ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা বেড়েছে ২৪.৬ শতাংশ, আর হিন্দুদের সংখ্যা বেড়েছে ১৬.৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ, এই দশ বছরের প্রতি বছর এই দুই গোষ্ঠীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির গড় হার যথাক্রমে ২.২ ও ১.৫৬ শতাংশ। এই হার যদি অপরিবর্তিত থাকে, জনসংখ্যায় হিন্দুদের টপকে যেতে মুসলমানদের কত বছর সময় লাগবে, মোহন ভাগবতরা জানেন? অঙ্কের হিসেব বলে দেবে, দুশো বছরেরও বেশি। ২২২০ সালে কী হবে, সেই গল্প বেচে ২০১৫ সালের ভোট জিততে চাওয়া কিন্তু ‘অচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতির চেয়েও বড় মিথ্যাচার।

এই মিথ্যাচারটা আসলে তার চেয়েও বড়। কারণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অপরিবর্তিত থাকবে না। মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ে প্রচার চালানোর সময় হিন্দু নেতারা মুসলমানদের চারটে বিয়ের কথা বলবেন, অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গ টানবেন, এমনকী জনসংখ্যা বাড়িয়ে হিন্দুদের টপকে যাওয়ার ষড়যন্ত্র-তত্ত্বেরও অবতারণা করবেন, কিন্তু ভুলেও কখনও এ কথা বলবেন না যে, স্বাধীন ভারতে কখনও মুসলমান জনসংখ্যা এত কম হারে বাড়েনি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের দশক অবধিও মুসলমান জনসংখ্যার দশসালা বৃদ্ধির হার ছিল ৩০ শতাংশের কাছাকাছি— তার পরের দশকে সেই হার নেমে এসেছে ২৪.৬ শতাংশে। তাঁরা বলবেন না, আলোচ্য দশকে হিন্দুদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যতখানি কমেছে, মুসলমানদের হার কমেছে তার চেয়ে ঢের বেশি। তাঁরা জোর গলায় বলবেন, মার্কিন গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছে, ২০৫০ সালে ভারতেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমান থাকবেন। কিন্তু এই কথাটা বেমালুম চেপে যাবেন যে সেই একই সংস্থা জানিয়েছে, ওই ২০৫০ সালেই ভারতের মুসলমান জনসংখ্যা পৌঁছে যাবে রিপ্লেসমেন্ট ফার্টিলিটি রেটে— অর্থাৎ, সেই সময় এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে মুসলমানদের সংখ্যা একই থাকবে।

সবচেয়ে বড় কথা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বৃহত্তর ছবিটি ভুলেও দেখবেন না হিন্দু নেতারা। দেখাবেন না তো বটেই। সেই ছবিটা সামনে এলে যে স্পষ্ট হয়ে যাবে— জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার একটি নির্দিষ্ট অভিমুখে চলছে। ২০১১ সালের জনশুমারিতে দেখা যাচ্ছে, দশ বছরে তফশিলি জাতি এবং জনজাতিভুক্তদের জনসংখ্যা বেড়েছে যথাক্রমে ২০.৮ শতাংশ আর ২৩.৭ শতাংশ। যেহেতু এই দুটি শ্রেণির বড় অংশই ঢুকে পড়েছে হিন্দু জনসংখ্যার হিসেবে, অতএব স্পষ্টতই, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে কম বর্ণহিন্দুদের মধ্যে। কেন, সেই কারণে একটু পরে আসছি। তার আগে দুটো কথা স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন। এক, সামাজিক-অর্থনৈতিক দিক থেকে যারা কার্যত সমগোত্রীয়, সেই মুসলমান ও নিম্নবর্গের হিন্দুদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় একই স্তরে রয়েছে, এবং প্রায় একই হারে কমছে। দুই, বর্ণহিন্দুই হোক বা মুসলমান, সবার ক্ষেত্রেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে রিপ্লেসমেন্ট ফার্টিলিটি রেট-এর দিকে যাচ্ছে— কেউ আগে পৌঁছোবে, কেউ কিছু পরে, এই যা ফারাক।

উন্নয়ন, উন্নয়ন

কেন বর্ণহিন্দুদের তুলনায় মুসলমান বা দলিতদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম গতিতে কমছে, সেই উত্তর সঙ্ঘ পরিবারের পাঠশালায় খুঁজে লাভ নেই। তাঁরা যা বলবেন, সেটা রাজনীতি, এবং বিষাক্ত রাজনীতি। তবে, দুনিয়া জুড়ে এই প্রশ্নের উত্তর কম দিন ধরে খোঁজা হচ্ছে না। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের তুলনা, দেশের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি, গোষ্ঠীর মধ্যে তুলনা, সবই হয়েছে। এবং, তার থেকে একটামাত্র উত্তর উঠে এসেছে— জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধর্ম, গায়ের রঙ অথবা বাসস্থানের ওপর নির্ভর করে না, সেটা নির্ভর করে মানুষের আর্থিক অবস্থার ওপর, সমাজে উন্নতির সুযোগের সাম্যের ওপর, ক্ষমতায়নের ওপর। উদাহরণ চাই? দুই ইসলামিক রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া আর পাকিস্তানে জনসংখ্যায় মুসলমানের অনুপাত কাছাকাছি— যথাক্রমে ৮৭ ও ৯৬ শতাংশ। দেশ দুটির বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ১.২৮ ও ২.১১ শতাংশ। আফগানিস্তানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বছরে ৩.০২ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১.৫১ শতাংশ। আরও উদাহরণ চাই? ভারতে কেরলে আর উত্তর প্রদেশে মুসলমানদের মধ্যে শিশুজন্মের হার তুলনা করে নিন, সব সন্দেহ মিটে যাবে।

ভারতে মুসলমানরা গোষ্ঠীগত ভাবে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন, এটাই তাঁদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনামূলক ভাবে বেশি হারের সবচেয়ে বড়, সম্ভবত একমাত্র, কারণ। কতটা পিছিয়ে রয়েছেন, তার কয়েকটা নমুনা পেশ করা যাক। মুসলমানদের মধ্যে সাক্ষরতার হার দেশের গড়ের তুলনায় প্রায় দশ শতাংশ কম। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মুসলমানদের মাথাপিছু ব্যয়ক্ষমতা গোটা দেশে সবচেয়ে কম— ২০০৯-১০ সালের নমুনা সমীক্ষার হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, এক জন হিন্দু গড়ে প্রতি মাসে ব্যয় করেন ১১২৫ টাকা, আর এক জন মুসলমান ৯৮০ টাকা। পাকা শৌচাগারই হোক অথবা শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার, বিবিধ আর্থ-সামাজিক সূচকেই মুসলমানরা জনগোষ্ঠী হিসেবে দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে। সরকারি চাকরিতে মুসলমানদের সংখ্যা কার্যত হিসেবেই আসে না। বস্তুত, সংগঠিত ক্ষেত্রেই তাঁদের উপস্থিতি জনসংখ্যার অনুপাতে উদ্বেগজনক রকম কম। কাজেই, মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সন্ধান না করে বরং দেশের উন্নয়নের অসমতা নিয়ে লজ্জিত হওয়া উচিত।

উন্নয়নের সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সম্পর্ক নিয়ে যদি এখনও সন্দেহ থাকে, ভারতের তৃতীয় জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার পরিসংখ্যানের দ্বারস্থ হতে পারেন। ২০০৫-০৬ সালের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, মুসলমানদের টোটাল ফার্টিলিটি রেট বা মোট প্রজনন-হার খ্রিস্টান ও হিন্দুদের তুলনায় বেশি। কিন্তু, হারটি নিরক্ষরদের মোট প্রজনন হারের তুলনায় কম। দেশের সবচেয়ে গরিব দশ শতাংশ মানুষের মোট প্রজনন হারের চেয়ে আরও কম। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের কম-বেশি হওয়ার কারণ সন্ধান করতে হলে কোন দিকে তাকাতে হবে, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকার কথা নয়, যদি না চোখ দুটো আগে থেকেই সঙ্ঘের ঠুলিতে আটকানো থাকে।

এক মাসের মাইনে বাজি ধরতে রাজি আছি— নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’-এ এই কথাগুলো কোনও দিন উচ্চারিত হবে না। তাঁরা কখনও স্পষ্ট ভাষায়, কখনও ঘুরিয়ে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির জুজু দেখাবেন। বামপন্থীরা বুঝতেই পারবেন না, শ্রেণি ছেড়ে ধর্ম নিয়ে কথা বললে ক্যাপিটাল অশুদ্ধ হবে কি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর মুলায়ম সিংহ যাদবরা আরও এক বার নিজেদের ঝুলিতে মুসলমান ভোট টানার মওকা পাবেন।

যে প্রশ্নটা একান্তই উন্নয়নের, অথবা বঞ্চনার, সেটা নিছক রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়েই থেকে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE