ছবি:সংগৃহীত।
পদক্ষেপটা বেশ সুচিন্তিত, রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ছাপ রয়েছে। কিন্তু সর্বসম্মতির রাজনৈতিক সদিচ্ছা আদৌ রয়েছে কি না, সে প্রশ্ন রয়েই গেল।
বর্তমানে বিহারের রাজ্যপাল পদে থাকা রামনাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি তথা এনডিএ মনোনীত প্রার্থী। অমিত শাহ এ কথা ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই এ বারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শাসক এবং বিরোধীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা বহু গুণ বেড়ে গেল। ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কখনও ভোটাভুটি হয় না, এমনটা একেবারেই নয়। তাই এ বারের নির্বাচনে ভোটাভুটি দেখতে হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তবু প্রশ্ন উঠছে, কারণ শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই এ বার সর্বসম্মত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী মনোনয়নে জোর দিচ্ছিল এবং সেই লক্ষ্যে আলোচনা চলছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনেও হচ্ছিল।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে যাঁর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি, তিনি দীর্ঘ দিন দলের সঙ্গে রয়েছেন, নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন। তাঁর সঙ্গে দলের প্রধান প্রেরণা কেন্দ্র রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সম্পর্ক নিবিড়। তিনি উত্তরপ্রদেশের নেতা এবং দলিত সমাজের নেতা। জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটটা এখন যেমন, তাতে এই রকম কোনও নেতাকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়াই সবচেয়ে সুবিধাজনক সিদ্ধান্ত ছিল মোদী-শাহ জুটির কাছে।
২০১৪ থেকে একের পর এক নির্বাচনে দলিত সম্প্রদায় ঢেলে ভোট দিয়েছে বিজেপিকে। সাম্প্রতিকতম নিদর্শন উত্তরপ্রদেশ। বেনজির সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ভর করে যোগী আদিত্যনাথ যে আজ লখনউয়ের মসনদে, তার নেপথ্যে উত্তরপ্রদেশের দলিত সম্প্রদায়ের ভূমিকা অনেকটাই। তা সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাত, মহারাষ্ট্রের মতো একের পর এক বিজেপি শাসিত রাজ্যে গত কয়েক বছরে দলিতদের উপর অত্যাচারের একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। দলিতদের মধ্যে বিজেপির মুখচ্ছবি বেশ খানিকটা বিরূপও হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে রামনাথ কোবিন্দের নাম ঘোষণা সেই ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিল। একের পর এক নির্বাচনে বিজেপির ঝুলি দু’হাতে ভরিয়ে দিচ্ছে যে রাজ্য, সেই উত্তরপ্রদেশ পুরস্কৃত হল। দলিত প্রার্থীকে ময়দানে নামিয়ে বিরোধীদেরও বেশ খানিকটা বেকায়দায় ফেলে দেওয়া গেল। অর্থাৎ, এক বাণে অনেক শিকারের বন্দোবস্ত করতে চাইলেন মোদী-শাহ।
সুচিন্তিত প্রক্রিয়ায় প্রার্থী বাছাই কোনও রাজনৈতিক অপরাধ নয়। বিজেপি কাকে প্রার্থী করবে, তা বিরোধীদের মতামতের উপরেও নির্ভর করে না। কিন্তু বিরোধীরা সর্বসম্মত প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর, শাসক সে প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার বিষয়ে যে রকম সদিচ্ছা দেখিয়েছিল, প্রার্থী বাছাইয়ের কৌশলটা তার সঙ্গে ঠিক খাপ খেল না।
রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা করতে বিরোধীদের দরজায় দরজায় গিয়েছেন বিজেপি নেতারা, কিন্তু কোনও নাম ঝুলি থেকে বার করেননি। বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করতে চায় শাসক দল, বার বার বিজেপির তরফে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আলোচনাকে কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছতেই দেওয়া হয়নি। তার পর এক দিন দলীয় বৈঠকে প্রার্থীর নামে সিলমোহর এবং আচম্বিত ঘোষণা। এই পদ্ধতিকেই ‘একতরফা’ বলছেন বিরোধীরা।
বিজেপি বা এনডিএ-র প্রার্থী কে হবেন, বিজেপি বা এনডিএ-ই তা স্থির করবে। এতে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। কিন্তু সর্বসম্মত প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টাই হয়েছে বলে যদি দাবি করা হয়, তা হলে সে দাবি পরিহাসের মতো শোনায়। সর্বসম্মত ভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটা ঠিক এ রকম নয়। রাজনৈতিক ঘুঁটি যে ভাবে সাজিয়েছে বিজেপি, তাতে রাইসিনার প্রাসাদে পৌঁছনোর পথ রামনাথ কোবিন্দের জন্য প্রশস্ত হয়ে উঠতেই পারে। কিন্তু জাতীয় সর্বসম্মতির ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তিতে রাষ্ট্রপতি পদে বসানোর চেষ্টা হয়েছিল, এমন দাবি না করাই বোধ হয় সমীচীন হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy