অনেক দিন পর আবার শোনা গেল সেই চড়াম চড়াম ধ্বনি। বেশ কিছু দিন নিজের ‘অলঙ্কার’গুলোকে কিয়ৎ প্রচ্ছন্ন রেখেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু আর বোধ হয় সম্ভব হল না। তাঁর জেলায় তাঁর দলের ছাতার তলায় না থেকেও কিছু মানুষ জোটবদ্ধ হচ্ছেন, তাঁর ঝান্ডা না ধরেও একদল লোক গলা উঁচিয়ে কথা বলছেন এবং নিজেদের দাবিদাওয়া পেশ করছেন। এর পরেও বীরভূম তৃণমূলের ‘বীরপুঙ্গব’ নীরব থাকবেন, এমনটা আশা করা নিশ্চয়ই উচিত নয়। উচিত যে নয়, তা মনে করিয়ে দিলেন অনুব্রত মণ্ডল আরও এক বার।
গণতন্ত্রের ঠিক বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে অনুব্রত মণ্ডলের এই সব শাসানি নতুন কিছু নয়। আগেও একাধিক বার এমনটা করেছেন তিনি। মাঝে কিছু দিন সব কিছুই বোধ হয় বড্ড অনুকূল ছিল অনুব্রতদের জন্য। তাই সম্ভবত প্রয়োজন পড়ছিল না এই সব ‘অস্ত্রের’। আজ প্রয়োজন হতেই ফের বের করেছেন পুরনো এবং বহু ব্যবহৃত সেই ‘অস্ত্র’।
গণতন্ত্রকে লুঠ করার বা কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণ নাগরিকের অধিকারকে লুঠ করার প্রবণতা এ পৃথিবীতে নতুন নয়। বাংলায় বা ভারতে শুধু নয়, পৃথিবীর প্রায় সব গণতান্ত্রিক প্রান্তেই কখনও না কখনও এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি সেই প্রবণতারই সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত তৈরি করছেন। অনুব্রত মণ্ডল নিজে সম্ভবত বিশ্বাস করছেন, তাঁর এই ‘শাসন’ বা ‘নিয়ন্ত্রণ’ দীর্ঘস্থায়ী হবে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভয় দেখিয়ে বা দমননীতি প্রয়োগ করে কিছু দিনের জন্য কিছু মানুষকে বশে রাখা যায়, দীর্ঘ সময়ের জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না।
আরও পড়ুন: চাষি-তৃণমূল সংঘর্ষে তপ্ত বোলপুর, বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার শাসানি কেষ্টর
ইতিহাস আসলে এক সুদীর্ঘ প্রবাহ। তার বিশালত্বের প্রেক্ষিতে এই অনুব্রত মণ্ডলরা নেহাত্ই ক্ষুদ্র অস্তিত্ব। ক্ষুদ্র অস্তিত্বও অনেক সময় তার ইতিবাচকতার সুবাদে ইতিহাসে অমর হয়ে যায়। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত নেতি অপেক্ষাকৃত বৃহত্ অস্তিত্বকেও ইতিহাসের প্রবাহে বিস্মৃতিতে ঠেলে দিতে পারে। কোনও গরলের আচম্বিত সঞ্চরণ কোনও বৃহত্ প্রবাহকেও কিছু সময়ের জন্য ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে পারে হয়ত। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মেই জীবনের প্রবাহ সেই গরলের কবল থেকে নিজেকে অত্যন্ত দ্রুত মুক্ত করে এবং গরলকে চিরতরে বর্জন করে। এ কথাও অনুব্রত মণ্ডলদের মাথায় রাখা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy