—ফাইল চিত্র।
অধিকারের সীমা না বুঝলে বা আত্মমূল্যায়নে গলদ থাকলে অপদস্থ হওয়ার নানান অবকাশ তৈরি হয়, সর্বসমক্ষে অপ্রস্তুত হতে হয়। এ জগতে অনেকেই হয়তো নিজের নিজের অধিকারের সীমা সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের স্বচ্ছ মূল্যায়ন করে নিতেও অনেকেই পটু। কিন্তু, আরও অনেক বেশি মানুষ সে সবে অত্যন্ত অপটু। পাকিস্তানি রাজনীতিক এবং কূটনীতিকরা সেই অপটুতার প্রমাণ দিচ্ছেন বার বার। দৃষ্টান্তমূলক ভাবে সমালোচিতও হচ্ছেন একের পর এক আন্তর্জাতিক মঞ্চে।
‘টেররিস্তান’— রাষ্ট্রপুঞ্জ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এ বার এই নামে আখ্যায়িত হতে হল পাকিস্তানকে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের তরফ থেকেই গেল এই তীব্র শ্লেষ। পাকিস্তান যে সন্ত্রাসবাদকে লালন করে এবং রফতানি করে, সে অভিযোগ ভারত দশকের পর দশক ধরে করছে। এখন আর এই অভিযোগ শুধু ভারতের নয়, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলেছে প্রায় গোটা বিশ্ব। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যে বিশ্বজোড়া সংগ্রাম চলছে, তাতে ইসলামাবাদের ত্যাগও কম নয় বলে মাঝে-মধ্যেই দাবি করে পাকিস্তানের যে ঘনিষ্ঠ মিত্র, সেই চিনও সম্প্রতি ব্রিকস শিখর সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিতে বাধ্য হয়েছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে অত্যন্ত সাবধানী পদক্ষেপ জরুরি ছিল ইসলামাবাদের তরফ থেকে। কিন্তু অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কয়েক দিন আগে থেকেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খকন আব্বাসি অহেতুক আক্রমণাত্মক হতে শুরু করলেন ভারতের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রগুলির লক্ষ্য ভারতই— এমন চূড়ান্ত অসংবেদনশীল মন্তব্য করলেন। কাশ্মীরে ভারত অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে, মানবাধিকারের চূড়ান্ত অবমাননা করছে বলে অভিযোগ করলেন। প্রত্যাশিত ভাবেই প্রবল প্রত্যাঘাত পেলেন। সন্ত্রাস প্রশ্নে রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে কঠোরতম ভাষায় পাকিস্তানকে আক্রমণ করল ভারত। যে রাষ্ট্র নিজেদের ভূখণ্ডেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, যে দেশকে আন্তর্জাতিক মহলের বড় অংশ আজ ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ তকমা দেয়, সেই দেশ কাশ্মীর নিয়ে মুখ খোলার অধিকার পায় কোথা থেকে? এমন প্রশ্নই তোলা হল।
আরও পড়ুন:পাকিস্তান তো টেররিস্তান! তোপ দিল্লির
রাষ্ট্রপুঞ্জে কাশ্মীর প্রশ্ন তোলা হলেই যে ভারত চতুর্গুণ প্রাবল্যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হবে, সে কথা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বা পাক কূটনীতিকরা আঁচ করেননি, এমনটা বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। পাক প্রধানমন্ত্রীর পরমাণু বোমা সংক্রান্ত মন্তব্য এবং কাশ্মীর-খোঁচাকে তাই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অঙ্গই মনে করছেন কূটনীতিকরা। কিন্তু পরিকল্পনা যতই সুনির্দিষ্ট হোক, তা যে সুবিবেচিত এবং সুচিন্তিত নয়, সে বেশ স্পষ্ট হয়ে গেল। আন্তর্জাতিক মহল এখন সন্ত্রাসকে পৃথিবীর বৃহত্তম বিপদগুলির একটি বলে মানছে। আন্তর্জাতিক মহল এখন পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের অন্যতম সেরা আঁতুড়ঘর বলেও মানছে। বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাই পাকিস্তানের এমন কিছু বলা উচিত ছিল না, যাতে সন্ত্রাস প্রশ্নে তীক্ষ্ণ আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। কারণ সন্ত্রাস প্রশ্নে ওই মঞ্চে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর মতো কাউকে পাওয়া যাবে না। এ সব জেনেও কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে কোণঠাসা করার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন আব্বাসি। পরমাণু বোমা ভারতের বিরুদ্ধে প্রয়োগের জন্যই বানানো হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিলেন। ভারতের অবশ্যম্ভাবী প্রত্যাঘাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাস্তানাবুদও হলেন।
কাশ্মীর প্রশ্নে পাক প্রধানমন্ত্রীর এই চড়া সুর পাক রাজনীতির অভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতার ফসল হতে পারে। চড়া স্বরে ভারত-বিরোধিতা এবং কাশ্মীরকে ভারতের কাছ থেকে কোনও এক দিন ছিনিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখানো পাকিস্তানের রাজনৈতিক ময়দানে বার বারই করতালির ঝড় তোলে। ২০১৮-র সাধারণ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে হয়তো আব্বাসি সেই করতালির ঝড়টাই তুলতে চেয়েছিলেন নিজের দেশের অন্দরমহলে। সে ঝড় উঠল কি না, তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জে যে পাকিস্তানকে ভয়াবহ ভারতীয় ঝড়ের মুখে পড়তে হল, তা গোটা বিশ্বই দেখল।
ওসামা বিন লাদেন বা মোল্লা ওমরদের মতো শীর্ষ জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিল পাকিস্তান। আশ্রয় দিয়ে রেখেছে দাউদ ইব্রাহিমকেও। ইসলামাবাদ অস্বীকার করলেও, খোদ দাউদের ভাই-ই জানাচ্ছেন, দাউদ পাকিস্তানে বহাল তবিয়তে এখনও। এমন অসুবিধাজনক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে পাক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ অত্যন্ত কৌশলী হওয়া জরুরি ছিল। হল উল্টোটাই। নিজে নড়বড়ে ঘরে বসে অন্যের দেশে ভূকম্পন ঘটাতে চাইলেন যেন আব্বাসি। ফলটাও পেলেন হাতেনাতেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy