Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

ইরানে, আবার

ধর্মগুরু আলি খামেনেইয়ের বিরুদ্ধে এত সরাসরি অভিযোগ অনেক দিন পর বাহিরের দুনিয়ার কান অবধি আসিয়া পৌঁছাইতেছে।

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৩
Share: Save:

ইরানে এখন তেহরানসহ নানা শহরের রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবাদীদের ক্ষুব্ধ মিছিল। অনেক দিন পর সে দেশে আবার একটি বড় রাজনৈতিক সংকট উপস্থিত হইয়াছে, যাহার কূটনৈতিক সুযোগ লইতে তাহার বন্ধু-দেশ এবং শত্রু-দেশ সকলে মিলিয়া আপাতত বিষম তৎপর হইয়া উঠিয়াছে। ইরানের প্রতিবাদীরা প্রতিবাদ করিতেছেন সরকারের বিরুদ্ধে, সেই সূত্রে শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীগুলির স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে। গত কয়েক দিন যাবৎ হাজারে হাজারে মানুষ রাস্তায় হাঁটিতেছেন, মহিলারাও প্রভূত সংখ্যায় যোগ দিয়াছেন, অনেকেই হিজাব খুলিয়া ফেলিয়া সাদা রুমাল উড়াইয়া মিছিলে হাঁটিতেছেন। তাঁহাদের মুখে ধর্মগুরু এবং অনির্বাচিত ধর্মীয় প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে স্লোগান। সব দেখিয়া-শুনিয়া মনে হইতেই পারে, অতিরিক্ত রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে একটি প্রগতিবাদী আন্দোলন চলিতেছে। ধর্মগুরু আলি খামেনেইয়ের বিরুদ্ধে এত সরাসরি অভিযোগ অনেক দিন পর বাহিরের দুনিয়ার কান অবধি আসিয়া পৌঁছাইতেছে।

তবে কিনা, যে ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব যুগপৎ ইরানের এই পথ-প্রতিবাদ লইয়া উচ্ছ্বসিত, স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট একের পর এক উৎসাহী টুইটের মাধ্যমে যে ভাবে বিক্ষোভকারীদের পিঠ চাপড়াইতে ব্যস্ত, তাহাতে এই সন্দেহ স্বাভাবিক যে, প্রতিক্রিয়াগুলি মোটেই সরল ও স্বাভাবিক নহে। অত্যাচার-অনাচার বনাম মুক্তি-প্রগতির সংঘর্ষ হিসাবে ইহাকে না দেখিয়া বরং কিঞ্চিৎ জটিলতর আন্তর্জাতিক রাজনীতির জিগস’ পাজল-এর অংশ হিসাবে দেখা দরকার। সৌদি আরবের মতে, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির পদত্যাগ করা উচিত। প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই সুন্নি রাষ্ট্র সৌদি আরব শিয়া ইরানের বিপক্ষে অভিযোগ আনিয়াছিল যে রিয়াধের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হানার পিছনে আছে তাহার ‘কালো হাত’। ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হইয়াছিল ইয়েমেন হইতে, যে দেশের সৌদি-সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী জনতাকে নাকি, রিয়াধের মতে, সমর্থন জোগাইতেছিল ইরান। সুতরাং এ বারের ইরান সংকটকেও পশ্চিম এশিয়ার প্রধান দুই শিয়া ও সুন্নি ক্ষমতাকেন্দ্র তেহরান ও রিয়াধের মধ্যে সংঘর্ষের প্রকাশ হিসাবে দেখিবার গুরুতর কারণ আছে।

পশ্চিম এশিয়ার যে কোনও দেশের সংকটেই প্রতিবেশী দেশগুলি সর্বদা কী এক আশ্চর্য পাকে জড়াইয়া যায়। তবে এ বার যিনি বিস্মিত করিতেছেন, তাঁহার নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যে এত দ্রুত এবং এত বেশি ঢুকিয়া পড়িয়া আন্তর্জাতিক রীতিনীতি তিনি বিপুল ভাবে লঙ্ঘন করিতেছেন। তিনি সম্প্রতি ইরানকে সন্ত্রাসবাদী দেশ বলিয়া অভিহিত করিয়া ইরান হইতে সমস্ত পর্যটক ও অভিবাসীর আমেরিকায় আসা আইনত বন্ধ করিবার ঘোষণা করিয়াছিলেন, অর্থাৎ ইরানের নাগরিক সমাজের প্রতি তাঁহার বিষম অবিশ্বাস ব্যক্ত করিয়াছিলেন। আজ আবার তিনিই বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের পাশে গিয়া দাঁড়াইতেছেন। তেহরান দাবি করিতেই পারে যে, ইরানের সমস্যা ইরান মিটাইবে, অন্যান্য রাষ্ট্র অকারণ হস্তক্ষেপ না করিলেই মঙ্গল। এই ধরনের হস্তক্ষেপ কেবল অনৈতিক নহে, অত্যন্ত বিপজ্জনক: স্থানীয় বা আঞ্চলিক সংকটকে তাহা দ্রুত বৃহৎ এবং বিশ্বায়িত করিয়া দিতে পারে। ইতিহাস সাক্ষী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Iran Protest Rally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE