Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

গোটা পৃথিবীকেই কি নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চান ট্রাম্প?

পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যে এখনও পর্যন্ত আমেরিকাই, সে নিয়ে সংশয় কমই। অতএব আমেরিকার সর্বোচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তিই যে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, সে নিয়েও সংশয় কম। ক্ষমতার এমন উত্তুঙ্গ শিখরে যাঁদের অধিষ্ঠান, তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি আচরণ, প্রতিটি বার্তা, প্রতিটি সিদ্ধান্ত অত্যন্ত পরিমিত হওয়া প্রয়োজন।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ০৫:০৬
Share: Save:

পদের আপন মহিমাই পদাধিকারীকে পদের উপযুক্ত করে তোলে। এক পরিচিত এক বহুশ্রুত ইংরেজি আপ্তবাক্যের দাবি অন্তত তেমনই। এ ধারণা বা এ তত্ত্বের যথার্থতা নিয়ে আগে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি, এমন নয়। বিতর্ক আগেও মৃদু-মন্দ উঠেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে এই পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের অন্যতম ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ভাবে বার বার তত্ত্বটিকে ভুল প্রমাণ করছেন, তেমনটা আগে সত্যিই ঘটেনি।

পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যে এখনও পর্যন্ত আমেরিকাই, সে নিয়ে সংশয় কমই। অতএব আমেরিকার সর্বোচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তিই যে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, সে নিয়েও সংশয় কম। ক্ষমতার এমন উত্তুঙ্গ শিখরে যাঁদের অধিষ্ঠান, তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি আচরণ, প্রতিটি বার্তা, প্রতিটি সিদ্ধান্ত অত্যন্ত পরিমিত হওয়া প্রয়োজন। ভারসাম্যের বিন্দুমাত্র অভাব অনেক বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত এখনও তা উপলব্ধি করতে পারেননি। গোটা পৃথিবীর কাছে ‘মেল্টিং পট’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল যে আমেরিকা, সেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বসেই গোটা পৃথিবীকে দূরে ঠেলার ভঙ্গিতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। এক জন রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে অবশ্যই নিজের রাষ্ট্রের স্বার্থই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তিনি যে আমেরিকার স্বার্থই সর্বাগ্রে রক্ষা করতে চান, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে খুব একটা ভাবতে চান না, সে কথাটা আরও একটু সৌজন্যে মুড়ে পরিবেশন করা যেত সম্ভবত। সৌজন্যের পরোয়া ট্রাম্প সে দিনও করেননি, আজও করছেন না। কর্মসূত্রে বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছেন যাঁরা, কখনও তাঁদের বিতাড়নের কথা বলছেন। কখনও শরণার্থীদের মুখের উপর আমেরিকার দরজা বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলছেন। শরণার্থীদের যে সব দেশ এখনও আশ্রয় দিচ্ছে, কখনও সেই সব দেশের সমালোচনায় সরব হচ্ছেন। কখনও জার্মানির চ্যান্সেলরের সঙ্গে করমর্দন করতে অস্বীকার করছেন। কখনও নাকি ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হাত মেলাতে গিয়ে সজোরে হাত চেপে ধরছেন এবং পরে নিজেই নাস্তানাবুদ হচ্ছেন। কখনও রাষ্ট্রপ্রধানদের জমায়েতে সামনের সারিতে দাঁড়ানোর তাগিদে মন্টেনেগ্রোর প্রধানমন্ত্রীকে অবজ্ঞার ভঙ্গিতে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে শিরোনামে উঠে আসছেন। কখনও আমেরিকারই নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর অন্য সদস্যদের সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন। সব শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকে বসে বলছেন ‘জার্মানরা খুব খারাপ’। জার্মানিতে তৈরি গাড়ি যাতে আমেরিকায় আর বিক্রি না হয়, তার বন্দোবস্ত পাকা করে ফেলবেন বলেও খোলাখুলি মন্তব্য করছেন।

ট্রাম্পের ঘটানো একের পর এক কাণ্ড কিন্তু আমেরিকাকে রোজ অস্বস্তি উপহার দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে তিনি এই সব দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন, এমন নয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার যখন চলছিল, তখন থেকেই একের পর এক বিতর্কিত কার্যকলাপের জন্য শিরোনামে আসছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু অনেকেই ভেবেছিলেন, ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যগুলো নির্বাচনী রণকৌশল। অনেকেই বিশ্বাস করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প এক জন দায়িত্ববোধ সম্পন্ন রাষ্ট্রনায়কই হয়ে উঠবেন। কারণ তাঁরাও সম্ভবত বিশ্বাস করতেন, পদের মহিমাই পদাধিকারীকে পদের যোগ্য করে তোলে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝিয়ে দিচ্ছেন, পদের মহিমার চেয়ে তাঁর নিজের ‘মহিমা’ অনেক বেশি। তিনি পদের উপযুক্ত হয়ে ওঠার চেষ্টা একটুও করছেন না। পদকে নিজের উপযুক্ত করে তোলার চেষ্টা করছেন বরং। আর সে চেষ্টার সুবাদে দু’হাতে আপ্রাণ ঠেলে নিজের থেকে বহু দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন গোটা পৃথিবীকে। ফলাফলটা কেমন হবে, বোঝার চেষ্টা করছেন তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE