Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Prashant Kishor

সত্যের দিকে তাকানোর সাহসটা দরকার

মাছ না পেয়ে ছিপে কামড়! উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একাংশের আচরণ এখন অনেকটা এমনই যেন। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল তীব্র হতাশার রাত নামিয়েছে কংগ্রেস শিবিরে। দলের এই বেনজির ভরাডুবির দায় কার— সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ঝড় শুরু হয়েছে কংগ্রেসের অন্দরে। কিন্তু আবার একটি দিকভ্রষ্ট ঝড়, সত্যের মুখোমুখি হতে এখনও নিদারুণ সঙ্কোচ, এখনও ভাবের ঘরে চুরি।

নিশানা এ বার প্রশান্ত কিশোর।

নিশানা এ বার প্রশান্ত কিশোর।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭ ০৪:৪২
Share: Save:

মাছ না পেয়ে ছিপে কামড়! উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একাংশের আচরণ এখন অনেকটা এমনই যেন। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল তীব্র হতাশার রাত নামিয়েছে কংগ্রেস শিবিরে। দলের এই বেনজির ভরাডুবির দায় কার— সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ঝড় শুরু হয়েছে কংগ্রেসের অন্দরে। কিন্তু আবার একটি দিকভ্রষ্ট ঝড়, সত্যের মুখোমুখি হতে এখনও নিদারুণ সঙ্কোচ, এখনও ভাবের ঘরে চুরি। না হলে কংগ্রেসের হারের যাবতীয় দায় প্রশান্ত কিশোরের উপরে চাপানোর কথা কারও মাথায় আসা সম্ভব ছিল না।

পোস্টার পড়েছে উত্তরপ্রদেশের এক কংগ্রেস কার্যালয়ের দেওয়ালে— প্রশান্ত কিশোরকে খুঁজে দিলে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার। কোথায় গেলেন প্রশান্ত কিশোর, কংগ্রেসের হারের পর তাঁর দেখা নেই কেন? প্রশ্ন উঠেছে পোস্টারে। হারের পর আড়াই দিন খোঁজ মেলেনি এই ভোটযুদ্ধে দলের প্রধান সেনাপতি তথা কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীরই। তা নিয়ে প্রশ্ন নেই কংগ্রেস কর্মীদের। কিন্তু প্রশান্ত কিশোরের রণকৌশলগত পরামর্শ কেন কাজে এল না, তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন জমতে শুরু করে দিয়েছে নেতা-কর্মীদের মনে।

উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে কংগ্রেস যদি জয়ী হত, বা যদি ভাল ফল করত, কৃতিত্ব নিশ্চয়ই প্রশান্ত কিশোরকে দেওয়া হত না। শীর্ষ নেতৃত্বের জয়ধ্বনিই তখন মুহুর্মুহু শোনা যেত নিঃসন্দেহে। প্রশান্ত কিশোরকে রণকৌশলগত পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করার ‘সুচিন্তিত’ ও ‘সময়োচিত’ সিদ্ধান্তটি কার ছিল, সে নিয়েই যে তখন চর্চা শুরু হত, তা অভ্রান্ত ভাবে আন্দাজ করা যায়। কিন্তু অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের পর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মতো চরিত্র হিসেবেও যে প্রশান্ত কিশোরের কথাই মনে আসবে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের, তা অনেকেই আগে আন্দাজ করতে পারেননি।

গাঁধী পরিবারের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যকে কেন্দ্র করেই এখনও আবর্তন কংগ্রেসের। দলের নেতা-কর্মীরা যদি এই আবর্তনের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তা হলে সে নিয়ে অন্য কারও আপত্তির কারণ থাকতে পারে না। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে এক গাঁধীই যে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিলেন, তিনিই যে দলের প্রধান সেনাপতি ছিলেন, যাবতীয় নীতি নির্ধারণে তিনিই যে শেষ কথা বলছিলেন— সে সত্য কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা এখন যেন কিছুতেই মনে করতে পারছেন না আর। সত্যের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহসই যেন নেই কারও।

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রশান্ত কিশোরকে আক্রমণ করেননি ঠিকই। কিন্তু শুধু শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে দল নয়। রাহুল গাঁধী যতটা কংগ্রেস, প্রশান্ত কিশোরকে কাঠগড়ায় তুলতে চাওয়া নেতা-কর্মীরাও ততটাই কংগ্রেস। তাই বিচ্ছিন্ন আখ্যা দিয়ে পত্রপাঠ নস্যাৎ করে দেওয়াও যায় না এই পোস্টার কাণ্ডকে।

বিপর্যয়ের এক ঘূর্ণাবর্ত এখন কংগ্রেসকে ঘিরে। ঘুরে দাঁড়াতে হলে আত্মসমালোচনা জরুরি, আত্মমন্থন জরুরি। কিন্তু সময়ের সেই দাবিকে এখনও অস্বীকার করার প্রবণতা যেন, সত্যকে চোখ ঠেরে থাকার এক মরিয়া চেষ্টা যেন। মনে রাখতে হবে, স্বেচ্ছায় অন্ধ কেউ হতেই পারেন, তবে তাতে প্রলয় বন্ধ থাকবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE