গ্যালারির করতালির মোহ থেকে মুক্ত, এমন মানুষের দেখা পাওয়া মুশকিল। অতএব, গ্যালারির কথাই মাথায় রেখে বিশিষ্টদের অনেকেই এমন আচরণ করতে থাকেন, কার্যকারণের যৌক্তিক সূত্র অথবা ফলপ্রসূ কার্যকারিতার নিরিখে যার ব্যাখ্যা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
যেমনটা অসম্ভব হয়ে পড়ছে যোগী আদিত্যনাথের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত। সরকারি অফিসারদের উপর নজর রাখতে উত্তরপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী আচম্বিতে অফিসে ঢুঁ মারার ঘোষণাই শুধু করলেন না, বার্তাটাকে কঠোরতর করার লক্ষ্যে এ-ও জানানো গেল, ডিউটি আওয়ারে যে কোনও সময় ফোনেও হানা দিতে পারেন তিনি। প্রশাসনের কাঠামোর বিভিন্ন স্তরে এই ‘বাবু’দের একটা অংশের আচরণ-ব্যবহারে ক্ষুব্ধ আমজনতার কাছ থেকে এই সিদ্ধান্তে করতালিই আসবে, রাজনৈতিক নেতা হিসাবে আদিত্যনাথেরা এটা ভাল করেই জানেন। অতএব গ্যালারিকে মাথায় রেখে খেললেন তিনি।
কিন্তু একই সঙ্গে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিকেও আবাহন করলেন আদিত্যনাথ। রাজনৈতিক প্রশাসন সরকারের দিশা বা লক্ষ্যটাকে পরিচালনা করলেও সরকারি যে বিপুল কর্মকাণ্ড, সেটা নিরন্তর বহতা থাকে যাঁদের কাঁধে ভর করে, তাঁরা হলেন এই সরকারি অফিসার-কর্মীরা— বাবুতন্ত্র। রাজনৈতিক প্রশাসনের প্রধান হয়ে এই স্তম্ভটির সঙ্গে সংঘাতের পথে যাওয়াটা কতটা সমীচীন, সেটার বিচারের আগে আরও একটা ঘটনা ঘটে গেল। সরকারি কাঠামোর এই অফিসার-কর্মীর মেরুদণ্ডটি সম্পর্কে শুধু নিজের সংশয় প্রকাশই নয়, সাধারণের মনে এক অনাস্থা বোধের জন্মের প্রত্যক্ষ মদত রয়ে গেল এই নজরদারির সিদ্ধান্তে। কোনও সরকারের কাছেই সেটা কাঙ্ক্ষিত নয়।
এ হেন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশেই উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তার ‘চামড়া ছাড়িয়ে’ নেওয়ার হুমকি দিতে পারেন কোনও জনপ্রতিনিধি। যেমনটা করেছেন উত্তরপ্রদেশেরই বারাবাঁকির বিজেপি সাংসদ প্রিয়ঙ্কা সিংহ রাওয়াত। এই হুমকিতে যে অন্যায় আছে, সেটা বুঝতেও ব্যর্থ তিনি। বিজেপি এই হুমকিকে ভাল চোখে দেখেনি, এ কথা বলেছে ঠিকই, কিন্তু এক বার আয়নার সামনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন বোধ করবেন কি আদিত্যনাথেরা?
সময় কিন্তু সেটাই দাবি করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy