প্রতীকী ছবি।
দিগন্তে নিশানের ওড়াউড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে। লোক-লস্কর সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে সব পক্ষ, যাঁর যে রকম সামর্থ্য। দামামা বেজে উঠবে যে কোনও সময়। আর দিগন্তে দৃশ্যমান ওই তৎপরতা মুহূর্তে চারিয়ে যাবে সর্বত্র, গোটা গ্রামীণ বাংলা হয়ে উঠবে লড়াইয়ের ময়দান— পঞ্চায়েতি লড়াই। কিন্তু তার আগেই অশনি সঙ্কেত প্রগাঢ়। ক্রমশ রক্তাভ হয়ে উঠছে দিকচক্রবাল, সিঁদুরে মেঘ যেন ছেয়ে ফেলছে আকাশটাকে। রক্তের ছিটে লেগেছে যেন আগামীর মেঘের গায়ে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষিত হয়নি। কিন্তু যত কাছে আসছে ভোট, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি। একের পর এক খুনের ঘটনায় রক্তাক্ত হচ্ছে গ্রাম-গঞ্জ।
শাসনে খুন হয়ে গেলেন তৃণমূল নেতা। তার আগে খুন হলেন চাকদহে। তার আগে হাঁসখালিতে। হামলা, পাল্টা হামলা, প্রতিশোধ, এলাকা দখল চলছে নিরন্তর। পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই হিংসাত্মক হয়ে উঠছে পরিস্থিতি।
তৃণমূল নেতাদের উপরে হামলার যে ক’টি ঘটনা ঘটল, সেগুলিতে বিরোধী পক্ষের হাত খুঁজে বার করা গিয়েছে, এমন কিন্তু নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা উঠে আসছে। তৃণমূল নেতৃত্ব সে কথা অস্বীকার করছেন এবং কখনও বিরোধীদের দিকে, কখনও মাওবাদীদের দিকে অভিযোগের তির ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ বিতর্কে কোনও ইতিবাচক ফল নেই। প্রত্যেকেরই উচিত মৃত্যুর মিছিল থামানোর বিষয়ে যত্নবান হওয়া। কারণ খুনের নেপথ্যে যা-ই থাক, যিনিই থাকুন, খুনের রাজনীতি কোনও ভাবেই কাম্য নয়। খুনের পরম্পরা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, তা খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেই স্পষ্ট। কেন ঘটছে একের পর এক খুনের ঘটনা— প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অবিলম্বে খুনোখুনি বন্ধ করতে হবে এবং পুলিশকে সতর্ক থাকতে হবে, এ নির্দেশ তিনি প্রশাসনিক সভা থেকেও দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। একাধিক বার পুলিশকে তিনি বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও, খুনোখুনিতে পুলিশ ছেদ টানতে পারেনি। পঞ্চায়েত নির্বাচন যত কাছে আসছে, ততই বাড়ছে গ্রাম-বাংলার উত্তাপ। খুনোখুনি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো পুলিশ যদি সক্রিয় হতে না পারে, তা হলে ভোটের মরসুমে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা থাকছে।
আরও পড়ুন
শাসনে খুন তৃণমূল নেতা
পঞ্চায়েত নির্বাচন গণতন্ত্রকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার নির্বাচন, সবচেয়ে প্রান্তিক যে নাগরিক, তাঁর উঠোনেও গণতন্ত্রকে হাজির করার জন্য এই নির্বাচন। এ হেন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে যখন এলাকার দখল নেওয়ার বা দাপট বজায় রাখার রাজনীতি শুরু হয়, তখন পঞ্চায়েতিরাজের লক্ষ্যই সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায়। নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যখন রাজনীতি খুনোখুনিতে বদলে যায়, তখন পঞ্চায়েত তত্ত্বই উবে যায়।
আকাশে যে সিঁদুরে মেঘ, রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসক তা বুঝতে পেরেছেন। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, পরিস্থিতির অবনতি যে ততই হবে, তাও সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন। এ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে খুনোখুনিতে মেতে ওঠার প্রবণতা বহু বছর ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে। এ বারও সেই পরিস্থিতিই যে মাথাচাড়া দিতে চাইছে, তা বুঝে নিতে মুখ্যমন্ত্রীর ভুল হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও পুলিশ কেন সতর্ক হতে পারছে না, গোয়েন্দা ব্যবস্থাপনা কেন ঠিক মতো কাজ করছে না, সে প্রশ্ন ভাবাচ্ছে। গ্রাম-বাংলায় উত্তেজনা ক্রমশ বাড়বে, ক্রমশ গ্রামের পর গ্রাম গুলি-বোমা-বন্দুক-বারুদের স্তূপ হয়ে উঠবে, ক্রমশ রাজনৈতিক প্রাণহানির সংখ্যা বাড়তে থাকবে— এটা মেনে নেওয়া যায় না। একাধিক বার প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল থেকে বার্তা আসা সত্ত্বেও পুলিশ কেন সতর্ক হতে পারছে না, কেন গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে চক্রান্তগুলোর খবর পৌঁছচ্ছে না, তা কিন্তু গুরুতর প্রশ্ন। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে, এ কথা মাথায় রাখা দরকার। পুলিশি নজরদারি অবিলম্বে বাড়া দরকার। ঘরপোড়া গরু আমরা। আকাশে সিঁদুরে মেঘটাকে দেখতে পেয়েও যদি সতর্ক হতে না পারি, যদি নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে না পারি, তা হলে প্রমাণিত হয়, আমরা ইতিহাস থেকে তথা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে শিখিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy