Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

গ্রাম ভাল থাকলে শহরও বাঁচবে, দেশটা এগোবে। গ্রামই বেঁচে থাকার রসদ জোগায়, শিল্প ও সংস্কৃতির মৌলিকতা গ্রামেই মিলতে পারে। কিন্তু সেই গ্রাম আজ হারিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতির কল্যাণে, তথাকথিত ‘উন্নয়ন’-এর দাপটে, মিডিয়া ইন্টারনেট সহ চটুল বিনোদনের অনিবার্য গ্রাসে গ্রাম তার নিজস্বতা হারাচ্ছে।

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

গ্রাম কেন শহর হতে চাইবে

গ্রাম ভাল থাকলে শহরও বাঁচবে, দেশটা এগোবে। গ্রামই বেঁচে থাকার রসদ জোগায়, শিল্প ও সংস্কৃতির মৌলিকতা গ্রামেই মিলতে পারে। কিন্তু সেই গ্রাম আজ হারিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতির কল্যাণে, তথাকথিত ‘উন্নয়ন’-এর দাপটে, মিডিয়া ইন্টারনেট সহ চটুল বিনোদনের অনিবার্য গ্রাসে গ্রাম তার নিজস্বতা হারাচ্ছে। যাত্রাপালা, লোকগান, পুতুলনাচ আজ লুপ্তপ্রায় শিল্প। বাঙলার পটচিত্র বিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে। অথচ আজ বাংলায় তার চর্চা ক্ষীণ লয়ে চলছে। ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প, লোকশিল্প আজ ধ্বংসের মুখে। সমাজের উৎসব আজ রাজনীতিনিয়ন্ত্রিত। গ্রাম এখন শহরকে কপি করে কেতাদুরস্ত আধুনিক হতে চাইছে। সিনেমা ও মেগা-সিরিয়ালের প্রতি অত্যধিক ঝোঁক বাংলার গ্রামের পারিবারিক জীবনযাত্রাকেও অতিমাত্রায় ‘প্যাসিভ’ করে তুলেছে। হিংসা, ষড়যন্ত্র, অপরাধকে সবাই গোগ্রাসে গিলছে। নান্দনিক চর্চা ক্রমশ জীবন থেকে বিদায় নিচ্ছে। আজকের গ্রামের মহিলারা আর আসন, সোয়েটার বোনেন না, সেলাইকে ছুটি দিয়েছেন। রেডিমেড ঘর-সাজানোর উপকরণে আসক্তি বাড়ছে। অবসর সময়ে বই পড়ার অভ্যাসটাও এখন অতীত।

গ্রাম শহর হতে চাইছে, এটাই সব থেকে বিপদ। নিজস্ব সত্তাকে অস্বীকার করার মধ্যে গৌরব নেই, আছে আত্মঘাতী মানসিকতা। শহর যে বাংলা ভাষা ব্যবহার করে গ্রামও তা অনুকরণ করার চেষ্টা করছে। টিভি সিরিয়াল তাতে সহায়কের ভূমিকা গ্রহণ করছে। গ্রামের ভাষার স্থানীয় বৈশিষ্ট্যগুলো ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। বসে আঁকো, কুইজ, আবৃত্তি-গান-নাচ, যোগব্যায়ামের মতো বিষয়গুলি লোকজ উৎসবে জায়গা করে নিচ্ছে। সংস্কৃতির চরিত্র পাল্টাচ্ছে।

গ্রামের কীসে ভাল হয় সেটাই আমাদের শাসক ও রাজনীতিকরা বুঝে উঠতে পারেননি। কলকাতাকে লন্ডন হওয়ার স্বপ্নে ভাসানোর মতো গ্রামকে শহরে পরিণত করার বাসনা ঠিক নয়। গ্রাম কারও অনুকম্পা আশা করে না, কিন্তু গ্রামের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাক, তা গ্রাম চায় না। মসৃণ অবৈজ্ঞানিক পাকা-রাস্তা, যত্রতত্র গভীর নলকূপ, রাস্তা আর খালের ধারে রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ে সাধারণের দখলে গড়ে ওঠা অবিন্যস্ত দোকান ও বাসগৃহ, দূষিত আবর্জনার স্তূপ, ইটভাটার ধোঁয়া-ধুলো গ্রামকে শ্রীহীন করে তুলছে। প্রকৃতির সঙ্গে উন্নয়নের পরিমিতিবোধই পরিবেশকে সুন্দর করে তোলে। সেই বাঁধনটা না-থাকার ফলে এই অবস্থা। যারা ছবি আঁকি, মূর্তি গড়ি, গান গাই, কবিতা লিখি তারা খুঁজে বেড়াই গ্রামের সেই অকৃত্রিম অনন্য রূপটা, ধরতে চাই মাটির গন্ধ, সুর, সহজ হৃদয়টাকে। শহরে-থাকা এক বন্ধু গ্রামে আসার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। দমবন্ধ গুমোট খাঁচার জীবন থেকে মুক্তি পেতে গ্রামের প্রকৃতির কোলের মতো সুন্দর ও নিরাপদ জায়গা আর কোথায় হতে পারে! যারা গ্রামকে শহর বানিয়ে দিতে চায়, তারা আসলে প্রকৃতিকে ভালবাসতে শেখেনি। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাতে দায়ও অনুভব করেন না। কৃত্রিম গ্রাম বানিয়ে, গ্রামের সংস্কৃতির প্রদর্শন করে কলকাতায় দুর্গোৎসবে মণ্ডপসজ্জা হয়। একটা সময় আসবে গ্রামের চেহারা ধরা থাকবে কোন পরিকল্পিত উদ্যানে।

শহরকেন্দ্রিক উন্নয়ন ও শিক্ষিত সুবিধাভোগী সচেতন সম্প্রদায়কে তুষ্ট করতে গিয়ে গ্রামকে বরাবরই উপেক্ষার পাত্র হতে হয়েছে। সরকারের দায়িত্ব একটা ভারসাম্যযুক্ত অর্থনৈতিক ও পরিকাঠামোগত উন্নয়ন বজায় রাখা ও যথাসাধ্য কর্মসংস্থানের চেষ্টা করা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর বিভাজন ও কোঁদল লাগানোর কৌশলে, বৃহতের আস্ফালনে বাংলার গ্রাম ছিন্নভিন্ন হচ্ছে। রাজনীতির সর্বব্যাপী করাল গ্রাস থেকে যেন বাংলার গ্রামের রেহাই নেই। ক্ষুদ্র রাজনীতি বাংলার সংস্কৃতিকে নষ্ট করছে। ক্লাব-কালচারে মগ্ন গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের পৃষ্ঠপোষকতা আখেরে সংস্কৃতি ধ্বংসেরই নামান্তর। একমাত্র মানুষের শুভবোধ ও একতার স্পৃহা সব কিছু রুখে দিতে পারে।

উত্তম ভৌমিক

চন্দ্রামেড়, ধলহরা, তমলুক

যুক্তি ও ধর্ম

আপনারা লিখেছেন, ‘পেট্রল, লাঠি, ক্রোধ এবং তরল স্থূল ধর্মবোধ— এইগুলি খুব সহজে সংগ্রহ করে ফেলেছে ভারতের অধিকাংশ মৌলবাদী সংগঠন...।’ (‘পুড়াইব সুখে’, সম্পাদকীয়, ১৭-৩) শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বের ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনগুলোর হাতিয়ারে ভিন্নতা থাকলেও তাদের মূল জ্বালানি কিন্তু ওই ক্রোধ, যা তারা পেয়েছে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম থেকেই। অচলায়তন ধর্মের কোন বিকাশ নেই। ধর্মে কম জানা বা আরও জানা বলে কিছু হয় না। অন্ধ আনুগত্য ও প্রশ্নহীন আত্মসমর্পণই ধর্মের অন্তর্গত থাকার প্রথমিক শর্ত।

আপনারা আরও একটা কথা লিখেছেন, ‘...যাহার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিতেছি তাহার যুক্তিগুলি অনুমান করিতে হয়, প্রতিযুক্তি সাজাইতে হয়, এবং এতটা চিন্তার আবহাওয়ায় আসিয়া পড়িলে প্রহারোদ্যত মুষ্টি আপনিই শিথিল হইয়া যাইবার আশঙ্কা থাকে।’ প্রথমত, ধর্মে বিপক্ষের যুক্তিকে সম্মান জানানোর কোনও সংস্থান নেই। দ্বিতীয়ত, ধর্মে বিপক্ষের যুক্তিকে আমল দিয়ে চিন্তা করার আবহাওয়া থাকলে এত দিনে ধর্মবাদীদের প্রহারোদ্যত মুষ্টি নয়, ‘ধর্ম’ই শিথিল হয়ে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিত।

ঐতিহাসিক কাল থেকেই দেখা যায়, জগৎ ও জীবনকে দেখার দুটো দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। একটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ। অন্যটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ। দুটি বিষয় পরস্পর দ্বন্দ্বমূলক। বিজ্ঞানের সত্য ধর্মের ধারণাকে সর্বদা বিঘ্নিত করে। অপর দিকে ধর্ম বিজ্ঞানের সত্য উদ্ঘাটনে বাধা দেয় সর্বতোভাবে। ইতিহাস বিচার করলে দেখা যাবে, বিজ্ঞান ও ধর্ম প্রায় দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। অলৌকিকতা ও বিশ্বাস যেখানে ধর্মের প্রাণ, বাস্তবতা ও প্রমাণ সেখানে বিজ্ঞানের অবলম্বন। কেবলমাত্র তত্ত্বগত দিক থেকেই নয়, ইতিহাসেই দেখা যায়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নানা ভাবে বিজ্ঞানের পথে বাধা দান করেছে। বিজ্ঞানীদের আক্রমণ করেছে, হত্যা করেছে— দ্বন্দ্বের ক্ষেত্র এতটাই বিস্তৃত। ইউরোপে ব্রুনো থেকে কোপার্নিকাস ও গ্যালিলিও সেই ধর্মবাজদের শিকার হয়েছেন নির্মম ভাবে। এ দেশে চার্বাক/ লোকায়ত দর্শনের মুনিঋষিরা প্রতিপক্ষীয়দের হাতে চরম লাঞ্ছিত হয়েছেন। বহু যুগ ধরে সমাজে অবিজ্ঞান, অপবিজ্ঞান চর্চা ও প্রয়োগ পাহাড়প্রমাণ। আবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে এ সব অবিজ্ঞান, অপবিজ্ঞান চর্চিত হয় প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বাতাবরণে। সেই প্রতিষ্ঠানের কুশীলবরাই আজ মৌলবাদের আস্ফালন দেখাচ্ছে দুনিয়া জুড়ে।

ধর্মের নানান ‘ক্রোধ’ চালু আছে ধর্মের জন্মলগ্ন থেকে। তবুও ধর্মের নিগড় ভেঙে বেরিয়ে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মানবিক স্বার্থের প্রয়োজনীয় সূত্র। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সামনে ধর্ম বার বার কেবল তার ভুলগুলো নিয়ে অপদস্থই হয়নি, তার ভ্রান্ত স্বরূপও উন্মোচিত হয়েছে লাগাতার ভাবে। এ ভাবেই মানুষের সভ্যতা এগিয়ে চলেছে।

সাধন বিশ্বাস

কলকাতা-১২২

ছাত্ররা এখন

ছাত্র আর শিক্ষকের সম্পর্ক আজ নামতে নামতে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে বলা খুব মুশকিল। যেমন ধরা যাক, শিক্ষক পড়াচ্ছেন, এমন সময় তাঁর সামনে থেকেই গোটা দুই ছেলেমেয়ে ব্যাগ কাঁধে করে সটান দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। কিংবা ক্লাসের মাঝে কয়েক জন কানে হেডফোন দিয়ে কোনও অনুমতি ছাড়াই ক্লাসে ঢুকে বেঞ্চ দখল করে বসল— অ্যাটেনডেন্স দরকার। এ সব আজকাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে হামেশাই ঘটছে। এর সঙ্গে আবার কারণে অকারণে ছাত্র শিক্ষকের বিতর্ক তো রয়েইছে। কিন্তু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি যখন দেখি কিছু কিছু স্কুলেও এ সব ঢুকে পড়েছে, তখন বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয় না যে আজকাল শুধু শিক্ষা কেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগুলোও শৃঙ্খলার অভাবে ভাঙতে বসেছে।

তন্ময় দেবনাথ

কলকাতা-১০৩

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE