Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

সেমন্তী ঘোষের বক্তব্যের মূল সুরের সঙ্গে আমি একশো ভাগ সহমত (‘বেশ করব, লিখব’, ২৬-৩)। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমিও এক জন নিয়মিত সদস্য এবং অস্বীকার করার উপায় নেই, সত্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘সহিষ্ণুতা’ বস্তুটির অস্তিত্ব আজ প্রায় সঙ্কটে।

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

সহিষ্ণুতা বস্তুটির অস্তিত্ব কই

সেমন্তী ঘোষের বক্তব্যের মূল সুরের সঙ্গে আমি একশো ভাগ সহমত (‘বেশ করব, লিখব’, ২৬-৩)। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমিও এক জন নিয়মিত সদস্য এবং অস্বীকার করার উপায় নেই, সত্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘সহিষ্ণুতা’ বস্তুটির অস্তিত্ব আজ প্রায় সঙ্কটে।

লেখক বলছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া নেহাতই একটা আয়না। যে আয়নায় দেখতে পাই, বাকস্বাধীনতার বিকাশ ও শ্রীবৃদ্ধির নাম করে সেই স্বাধীনতার ওপর কী ভয়ঙ্কর আক্রমণের তরবারি এই সমাজে নেমে আসছে।’ সহমত। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার আক্রমণ সম্পর্কে যেটা বলা চলে; তা হল, যত গর্জায় বাস্তবে তত বর্ষায় না। অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিত্য দিনই ঘটে থাকে, শুধু এফআইআর-এর ঘটনাগুলোই যা একটু আলোড়িত হয়। এ ক্ষেত্রে আরও বেশি আলোড়িত হয়েছে, তিরের নিশানা এক জন প্রথিতযশা কবির দিকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সংবেদনে আঘাতের ঘটনা বহু কাল ধরেই আছে। কারণ, মানুষ এখানে নিজের বক্তব্যকে স্বাধীন ভাবে রাখার সুযোগ পায়। ‘আমি ওকে বলতে দেব না’—এই বক্তব্যটা পেশ করার জায়গাও কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া দেয়। বাস্তবে এমন কথা বললে ‘আপনি বলতে না দেওয়ার কে মশাই?’— বলে প্রশ্ন উঠবেই। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ওঠে। কিন্তু বাস্তবে এই প্রশ্ন বেশি ক্ষণ সরাসরি সহ্য করা মুশকিল; কারণ প্রথমত, অপর পক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলে খানিক ভীতি কাজ করে। দ্বিতীয়ত, যাঁরা ওই পারিষদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ‘আমিও ওকে বলতে দেব না’— বলতে উৎসাহী, বাস্তবে তাঁদের কিছুটা হলেও ঔচিত্যবোধের সম্মুখীন হতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সবের বালাই নেই, ফলে সংবেদ্য বস্তুর তালিকা দিন দিন বেড়ে চলেছে। ধারেভারে ধর্ম খানিক এগিয়ে, ফলে এফআইআর অবধি সে সব গড়ায়। যদিও কবি এখনও গ্রেফতার হননি; স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কবির চিন্তার কোনও কারণ নেই।

সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায় কলকাতা-৫৫

গৌরবের কই

একদা মৎস্য সম্পদে বাংলার বৈচিত্র ও প্রাচুর্য কতটা ছিল, জলাশয়ের অভাবে আজ কল্পনা করাও অসম্ভব (‘বাঙালির পাতে পুঁটি...’, ২০-৩)। একটা উপমা দিলে সে গুরুত্ব কিছু বোঝা যাবে।

রাজশাহী জেলার ধুবলহাটি জমিদারির বিলে কই মাছ একেবারে মুঘল বাদশার হেঁশেলে ঢুকে বাংলার বিজয়কেতন উড়িয়ে দিয়েছিল। মুঘল বাদশাহ ধুবলহাটির জমিদারি এক স্থানীয় ব্যক্তিকে দিয়েছিলেন। খাজনার শর্ত ছিল উপাদেয় এবং লোভনীয়— বাদশাহকে বার্ষিক রাজস্ব টাকাকড়িতে নয়, দিতে হবে কই মাছ দিয়ে। সে কই মাছ ধুবলহাটি বিলে জন্মাত। বার্ষিক খাজনার জন্য দিল্লীশ্বরকে দিতে হত বিশ হাজার কই মাছ। আমার আপশোস যে, মাছ দেওয়া-নেওয়া কোথায় সম্পন্ন হত, তার উল্লেখ ওই বৃত্তান্তে নেই। সে মাছ কি দিল্লিতে পৌঁছে দিতে হত? কে জানে!

পূর্ব বাংলার নানা জাতের তাজা মাছ কলকাতা পৌঁছে দেওয়া এক শ্রেণির মানুষের অধ্যবসায় ও অসাধারণ কায়িক শ্রমের ফলে সম্ভব হত। সরকারের তহবিলে জলকর থেকে ফরিদপুর জেলায় বিশ হাজার পাউন্ড আয় হত। সিলেট জেলা থেকে পাঁচ লক্ষ মণ শুঁটকি চালান হত। হবিগঞ্জের এস ডি ও সাহেব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর মহকুমায় দুই লক্ষ টাকার মাছের ব্যবসা হয়ে থাকে।

বাংলার মাছের কাছে মুঘলের বশ মানা ইতিহাস কি মনে রেখেছে? কই মাছের প্রতি সরকারকে নজর দিতে অনুরোধ করি। বাজারে ভিয়েত কই ছেয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে খাচ্ছেন। সে মাছ স্বাদে নিকৃষ্ট।

এ কে বিশ্বাস কলকাতা-৫২

পরিকাঠামো নেই

একটি জুনিয়র হাই স্কুলে শিক্ষকতা করার সুবাদে বিভিন্ন বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলতে পারি যে, এই বিদ্যালয়গুলিতে শুধু ছাত্র অনুপাতে শিক্ষক যথেষ্ট থাকলেই শিক্ষার সার্বিক মান বাড়ানো সম্ভব নয়। প্রথমত বলি, আর টি ই অ্যাক্ট অনুসারে, প্রত্যন্ত গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এবং বিনা ব্যয় ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের (ফ্রি অ্যান্ড কম্পালসরি এডুকেশন) উদ্দেশ্যে সর্বশিক্ষা মিশনের আর্থিক সহায়তায় এই বিদ্যালয়গুলো নির্মিত। এখানে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। শিক্ষক নিয়োগের নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম তিনটি স্থায়ী পদ। বর্তমানে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কোথাও এক জন আবার কোথাও দুই-তিন জন শিক্ষক রয়েছেন। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫০-১০০ মধ্যে, কোথাও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এর থেকেও কম। সুতরাং ছাত্র অনুপাতে শিক্ষকও যথেষ্ট (৪০:১)।

প্রশ্ন জাগতেই পারে, শিক্ষক অনুপাতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এত কম কেন? কেনই বা এই বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে না? শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও কেন বলছেন, শিক্ষার্থীর সার্বিক মানের উন্নতি সম্ভব নয়? এর প্রথম কারণ হল, পরিকাঠামোর অভাব। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র দুটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, যেখানে পঞ্চম–অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চারটি শ্রেণিকক্ষ থাকার কথা। শিক্ষকদের বসার জন্য নেই কোনও ঘর। কোনও কোনও স্কুল বেছে নিয়েছে পাশাপাশি প্রাইমারি স্কুলের অতিরিক্ত ঘর। কোনও কোনও স্কুল একটি শ্রেণিকক্ষে দুটি ক্লাস নিচ্ছে। অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ অধিকাংশ বিদ্যালয়ে তৈরি হয়নি। আর যেখানে এক জন বা দু’জন শিক্ষক রয়েছেন, সেখানে তো একটি ক্লাসরুমে চারটি ক্লাসকে একসঙ্গে বসাচ্ছে। এ ছাড়া উপায়ই বা কী! বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প, মিড-ডে মিল ইত্যাদি কাজের জন্য এক জন শিক্ষককে সব সময় বিভিন্ন অফিসে ছুটতে হয়। এর মধ্যে কোনও শিক্ষক অসুস্থ কিংবা ছুটি নিলে ছাত্রছাত্রীদের ঠাঁই হয় প্রাইমারি স্কুলে।

এর পর আছে অভিভাবকদের প্রশ্ন। আপনারা একটা ক্লাসরুমে একসঙ্গে এতগুলো ক্লাস কী ভাবে পড়ান? অমুক মাস্টার স্কুলে এসে তাড়াতাড়ি চলে যায় কেন? আমাদের বাচ্চাদের কি এই ভাবে পড়াশোনা হবে? আর এটা বলাও স্বাভাবিক। কত বোঝাবেন ওঁদের যে, আমাদের ডি আই অফিস, বিডিও অফিস, এস আই অফিস যেতে হয় বিভিন্ন কাজে। কারণ, অধিকাংশ স্কুলগুলোতে নেই কোনও পিয়ন বা ক্লার্ক। যাবতীয় অফিসের কাজ করতে হয় শিক্ষকদেরই। বাকি যে সময়টুকু শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় তা দিয়ে কখনওই তাদের সম্পূর্ণ মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।

এ ছাড়া এই স্কুলগুলোতে খেলার মাঠের অভাব, নেই কোনও শারীরিক শিক্ষার ব্যবস্থা, বহু স্কুলে রয়েছে পানীয় জলের অভাব, রয়েছে উপযুক্ত আর্থিক তহবিলের অভাব। যার পরোক্ষ প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীর সার্বিক উন্নয়নে। আর উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশের অভাবে শিক্ষার্থীদের মন টানে কাছাকাছি হাই স্কুলগুলোতে। এই স্কুলগুলোতে কমতে থাকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা।

মানব দাস পূর্ব মেদিনীপুর

অনেক কারণ

অসিতকুমার রায় রাজ্যে শিক্ষার মানের অবনতির কয়েকটি কারণ নির্দেশ করেছেন (‘পাশ-ফেল ফেরালেই ...’, সম্পাদক সমীপেষু, ২১-৩)। তা ছাড়াও কিছু কারণ রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে রাজ্যে বহু শিক্ষকপদ শূন্য। ফলে এমন অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, যেখানে চারটি শ্রেণির জন্য এক বা দু’জন শিক্ষক। তাঁদের পড়ানো ছাড়াও মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করা, জনগণনা, ভোটার তালিকা সংশোধন ও নানা ধরনের হিসাবপত্র রাখতে হয়। কারণ, বিদ্যালয়ে কোনও করণিক দেওয়া হয় না। এমনকী, কোনও ঝাড়ুদার না থাকায় বিদ্যালয় পরিষ্কার করার কাজও শিক্ষকদের করতে হয়। এর ফলে যথাযথ ভাবে পঠনপাঠন হতে পারে কি?

প্রদীপকুমার দত্ত অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা-৭৩

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE